ভালোবেসে বিয়ে করায় অমানবিক নির্যাতন
ভালোবেসে বিয়ে করার অপরাধে রাঙামাটির নানিয়ারচরের এক উপজাতী নারীকে দুইমাস আটকে রেখে নির্যাতন করেছে পাহাড়িদের আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ। হাতে পায়ে শিকল বেধে অন্ধকার ঘরে আটকে রেখে নিজের জাতির মেয়েকে যে অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে তাতে হতবাক হয়েছেন পুরো সমাজ। বৃহষ্পতিবার রাঙামাটি প্রেস ক্লাবে হাজির হয়ে এ অমানবিক নির্যতনের বর্ণনা দেন নির্যাতিত জোসনা চাকমা। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
গত ১৬ জানুয়ারি রাত ১২টায় বন্দিদশা থেকে পালিয়ে এসে কুতুকছড়ি সেনা ক্যাম্পে আশ্রয় নিলে সেনা সদস্যরা তাকে নিরাপদে পুলিশ হেফাজতে পৌঁছে দেয়। নির্যাতিত জোসনা চাকমা তাকে অপহরণের জন্য আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফকে দায়ী করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জোসনা চাকমা বলেন, তার অপরাধ সে বৌদ্ধ হয়ে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অপর এক জনকে ভালোবেসে বিয়ে করেছেন। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী হলেও বাঙ্গালী বড়ুয়া ছেলেকে বিয়ে করার অপরাধে জোসনা চাকমাকে এ নির্মম পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছে।
রাঙামাটি সদর উপজেলার কুতুকছড়ি এলাকার জহলাল চাকমার মেয়ে জোসনা চাকমা (৩০) চট্টগ্রামে একটি পোশাক কারখানায় চাকুরি করার সময় অপু চন্দ্র নামক এক বড়ুয়া সস্প্রদায়ের যুবককে ভালবেসে বিয়ে করেন। এই বিয়ে পরিবার মেনে নিলেও স্থানীয় পাহাড়ী সংগঠন ইউপিডিএফ তা মেনে নেয়নি। এ অপরাধে গত ১৮ নভেম্বর ২০১৬ জোসনা চাকমা কুতুকছড়ি বাবার বাড়িতে এলে তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায় ইউপিডিএফের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। ঘটনার বর্ণনায় জোসনা চাকমা বলেন, অপহরণ হওয়ার পর তাকে গলায় শিকল পড়িয়ে বন্দী করে রাখা হয়।
এর পর তিনি গত ১৬ জানুয়ারি রাত আনুমানিক ১২টায় বন্দী অবস্থা থেকে পালিয়ে আনুমানিক ২টায় কুতুকছড়ি সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে এসে এই ঘটনার কথা জানান। এর পর নানিয়ারচর জোন তাকে নানিয়ারচর থানা পুলিশি হেফাজতে দেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জবানবন্দিতে জোসনা চাকমা জানান, তার বিয়েকে কেন্দ্র করে তাকে অপহরণ করা হয়। সন্ত্রাসীরা তার ভাই, বোন, মা, বাবাকেও মারধর করে, হুমকি দেয় এমনকি অর্থ জরিমানা করে। এক পর্যায়ে জোসনা চাকমা পরিবার ও স্থানীয় এক ইউপিডিএফ নেতা বিদ্যাময় চাকমা নামক ব্যক্তির সাথে কথা বলে এলাকায় সামাজিক অনুষ্ঠান করতে চাইলে ঐ পাহাড়ী নেতা তাকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে এলাকায় নিয়ে আসে এবং অপহরণ করে নিয়ে যায়। অপহরণের পর কুতুকছড়ি এলাকার চারটি জায়গায় তাকে বিভিন্ন সময় বন্দী করে রাখা হয়।
এই বিষয়ে নানিয়ারচর থানার ওসি মো. আবদুল লতিফ পার্বত্যনিউজকে জানান, নিরাপত্তা জনিত কারণে তাকে রাঙামাটি পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে তাকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। ঘটনাটি নানিয়ারচর থানা ও নানিয়ারচর জোন খতিয়ে দেখছেন বলে জানা গেছে।