‘বৈশ্বিক দুর্যোগ করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দেশের মানুষের জীবন ও জীবিকা উভয়ই রক্ষা করতে হবে‘, বলেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
আজ বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে কোভিড–১৯ পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামে করোনা ভাইরাস এর প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে জেলা প্রশাসন আয়োজিত জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে সমন্বয় সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের একথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, একইসাথে সরকারকে দুটি বিষয়ে ভাবতে হয়। জীবন যেমন রক্ষা করতে হবে, মানুষের জীবিকাও রক্ষা করতে হবে। এবিষয়েই আজকে আমরা বিস্তারিত ও ফলপ্রসূ আলোচনা করেছি।
তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সাথে সাথেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সরকারের নানাবিধ পদক্ষেপের কারণে আমাদের দেশের পরিস্থিতি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে এখনো অনেক উন্নত দেশের তুলনায় কিছুটা ভালো। তাই বলে সরকার বসে নেই। ভবিষ্যতে যেকোন পরিস্থিতি হতে পারে। সেজন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে । যেসমস্ত দেশে নাজুক পরিস্থিতি হয়েছে, সেরকম হলে কি করতে হবে সে নিয়েও আমরা নানা প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। তারই অংশ আজকের এ সমন্বয় সভা।
সমগ্র বাংলাদেশে সরকারিভাবে দেশের এক–তৃতীয়াংশ মানুষকে সামাজিক সুরক্ষা বলয়ের আওতায় আনা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশে ১৭ লক্ষ টন খাদ্যশস্য মজুদ ছিল। ইতোমধ্যে ১ লক্ষ টন খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে এবং আরো ৬ লক্ষ টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
সরকারি ত্রাণ বিলি–বণ্টনে চট্টগ্রামের সংসদ সদস্যদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছেনা, তাদের এড়িয়ে চলা হচ্ছে এমন ধরণের অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে – এই দুরত্ব গুছিয়ে সমন্বয়টা নিশ্চিত হয়েছে কিনা‘ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আজকে একটি মাস দেশের সমস্ত কর্মকান্ড বন্ধ। বাংলাদেশে একটি মানুষও না খেয়ে মৃত্যুবরণ করেনি। এটিই হচ্ছে সরকারের সফলতা। সরকারি সাহায্যের বাইরে আমাদের সংসদ সদস্য, অন্যান্য জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ এবং বিত্তশালীরা সহায়তা দিচ্ছেন। সুতরাং সমস্ত কিছু সমন্বয় করার জন্যই আজকে এই বৈঠক হয়েছে।
তথ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভা সঞ্চালন করেন কোভিড–১৯ মোকাবিলায় চট্টগ্রাম জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দিন। এতে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী , শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী প্রমুখ।
ভিআইপিদের চিকিৎসায় আলাদা ব্যবস্থা নেই: দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার আহবান তথ্যমন্ত্রীর
‘ভিআইপিদের চিকিৎসার জন্য আলাদা ব্যবস্থা– এধরণের একটা সংবাদ দু‘একটি অনলাইনে প্রকাশ হয়েছিলো‘, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সরকারের এধরণের কোন সিদ্ধান্ত নেই এবং ছিলো না। এনিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আজকে পরিস্কার করেছেন। আমি জানি, দু‘একটি অনলাইনে এই ধরণের সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। ভালোমত যাচাই না করে যারা এই ধরণের সংবাদ পরিবেশন করেছেন তারা সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। এই ধরণের দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেওয়া দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা নয়। আমি আশা করবো, দেশের এই দূর্যোগময় পরিস্থিতিতে আমরা সবাই নিজে নিজে দায়িত্বশীল আচরণ করবো এবং সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রেও যত্নশীল হবো‘ বলেন তথ্যমন্ত্রী।
রাতের আঁধারে ত্রাণ দিচ্ছে প্রশাসন –ভূমিমন্ত্রী
‘নিম্নআয়ের মানুষদের ত্রাণ দেয়া হলেও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ব্যাপারে কি ভাবা হচ্ছে‘ এমন প্রশ্নে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাতের আঁধারে তাদের ঘরে ত্রাণ পৌছানো হচ্ছে। হয়তো সবার কাছে পৌঁছাচ্ছেনা। তবে, বাংলাদেশের মানুষের সামাজিক বন্ধনটা অনেক বেশি। এই সময়ে বোঝা যাচ্ছে মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য। এটা এই সংকটের মধ্যে প্রমাণ হয়েছে। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। মানুষকে কত দ্রæত স্বাভাবিক জীবনে ফেরত নেয়া যায় সেজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিনরাত পরিশ্রম করছেন।
সমন্বয় সভায় আনিসুল ইসলাম মাহমুদ চৌধুরী এমপি, এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি, মোসলেম উদ্দিন আহমেদ এমপি, নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এমপি, মোস্তাফিজুর রহমান এমপি, আবু রেজা মোহাম্মদ নিজামুদ্দিন নদভী এমপি, ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি, খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এমপি, সিটি কর্পোরেশন মেয়র আ.জ.ম. নাছির উদ্দীন, মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম. এ. সালাম, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী, বিভাগীয় কমিশনার এ বি এম আজাদ, জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবির, সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।