মীর কাসেম আলীর রিভিউ শুনানি ২৫ জুলাই

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মীর কাসেম আলীর রিভিউ আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী ২৫ জুলাই।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (২১ জুন) এ দিন ধার্য করেন অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর আদালত ।
সকালে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় শুনানির দিন ধার্যের আবেদনটি দাখিল করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
পরে চেম্বার বিচারপতির আদালতে দ্রুত রিভিউ নিষ্পত্তির আরজি জানান তিনি।
গত রোববার (১৯ জুন) ৬৮ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদন করেন মীর কাসেম আলী। এতে ফাঁসির রায় বাতিল করে খালাস ও অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আরজি জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে আলবদর বাহিনীর তৃতীয় এই শীর্ষনেতা।
রিভিউ আবেদনে সর্বোচ্চ সাজার বিরুদ্ধে মোট ১৪টি যুক্তি দেখানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে গত ০৮ মার্চ মীর কাসেম আলীর মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার সংক্ষিপ্ত আকারে চূড়ান্ত রায় দেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। অন্য বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান।
রায়ে শহীদ কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিনসহ ছয়জনকে হত্যা-গণহত্যার দায়ে ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল রাখা হয়েছে চট্টগ্রাম অঞ্চলে মানবতাবিরোধী অপরাধের মূল হোতা মীর কাসেম আলীর।
গত ০৬ জুন ২৪৪ পৃষ্ঠার পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন সর্বোচ্চ আদালত। পাঁচ বিচারপতির রায়ে স্বাক্ষরের পর তা প্রকাশিত হয় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে।
রায়টি রাতেই বিচারিক আদালতে গেলে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ার উল হক এবং বিচারিক প্যানেলের সদস্য বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল। এর পর পরই মৃত্যু পরোয়ানাসহ পূর্ণাঙ্গ রায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়, ঢাকার ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট (জেলা প্রশাসক) কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
পরদিন ০৭ জুন সকালে কাশিমপুর কারাগার পার্ট-২ এর কনডেম সেলে থাকা কাসেম আলীকে মৃত্যু পরোয়ানা ও পূর্ণাঙ্গ রায় পড়ে শোনানো হয়।
আইন অনুসারে পরোয়ানা শোনার পর থেকে মীর কাসেম আপিল বিভাগের চূড়ান্ত পূর্ণাঙ্গ রায়ের রিভিউ আবেদন করতে পারবেন ১৫ দিনের মধ্যে, যার শেষ দিন ছিল সোমবার (২০ জুন)। একদিন বাকি থাকতেই এ আবেদন করা হয়।
এ রিভিউ আবেদন খারিজ হলে সরকারের সিদ্ধান্তে কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে শুরু হবে দেশের এই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় কার্যকরের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া। অবশ্য শেষ আইনি সুযোগ হিসেবে মীর কাসেম আলী তার অপরাধ স্বীকার করে ও ক্ষমা চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন জানাতে পারবেন। সেটি না করা হলে বা প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হলে তাকে ফাঁসির দড়িতে ঝোলানোর ক্ষেত্রে আর কোনো বাধা থাকবে না।
আপিল মামলার রায়ে মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শহীদ কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিনসহ ছয়জনকে হত্যা-গণহত্যার দায় (১১ নম্বর অভিযোগ) প্রমাণিত হওয়ায় তাকে সর্বোচ্চ দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।
১১ নম্বর ছাড়াও ১২ নম্বর অভিযোগে রঞ্জিত দাস লাতু ও টুন্টু সেন রাজুকে হত্যার দায়েও কাসেমের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। তবে চূড়ান্ত রায়ে প্রমাণিত না হওয়ায় এ অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত মোট ১০টি অভিযোগের মধ্যে আরও ৬টি অভিযোগে মীর কাসেমের সাজা বহাল এবং আরও ২টি থেকে অব্যাহতি ও খালাস দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে চূড়ান্ত রায়ে ফাঁসির পাশাপাশি ৫৮ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ পেয়েছেন তিনি।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী কিলিং স্কোয়ার্ড আলবদর বাহিনীর তৃতীয় শীর্ষনেতা ছিলেন জামায়াতের বর্তমান কর্মপরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলী। সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটি (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) ও জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজ (যৌথ দায়বদ্ধতা) হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে আলবদর বাহিনী ও ছাত্রসংঘের অপরাধের দায়ও তাই বর্তেছে তার ওপরে।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031