মৃত্যুর মিছিল চলছেই

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | গৃহযুদ্ধের ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও রক্তক্ষরণ যেন থামছেই না দুর্ভাগা সিরীয়বাসীর। সরকারি ও বিদ্রোহী বাহিনীর মরণপণ লড়াইয়ের খেসারত প্রতিদিনই দিচ্ছে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটিতে আটকে পড়া বেসামরিক জনগণ। তার ওপর মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে জুটেছে রুশ বিমান হামলা।

এসব হামলার অজুহাত হিসেবে বিদ্রোহী দমনের কথা বলা হলেও, রুশ বিমান হামলায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে নারী-শিশুসহ বেসামরিক নাগরিকরা।

গত শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সবচেয়ে রক্তাক্ত ফ্রন্ট আলেপ্পোতেই প্রাণ হারিয়েছেন ১৮০ বেসামরিক সিরীয়। যাদের অনেকেই নারী ও শিশু বলে জানিয়েছে, স্থানীয় মানবাধিকার কর্মীদের নেটওয়ার্ক লোকাল কোঅর্ডিনেশন কমিটি।

সরকারি বাহিনী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বিদ্রোহীদের হামলার পাশাপাশি, বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত বেসামরিক জনবসতি লক্ষ্য করে সরকারি ও রুশ বাহিনীর বিমান হামলায় এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে।

এ ব্যাপারে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের ওপর খবর পরিবেশনকারী সাংবাদিক আল জাজিরার রেজা সায়াহ বলেন, এমনকি সিরিয়ার যুদ্ধে সংঘটিত নিয়মিত প্রাণহানির মধ্যেই এই সংখ্যা অত্যধিক।

এদিকে সিরিয়া যুদ্ধের হতাহতের ঘটনার নিয়মিত তালিকা প্রকাশকারী যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা সিরিয়ান অবজার্ভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস এর হিসাব অনুযায়ী গত ১৫ দিনে শুধু আলেপ্পোতেই ৩২৭ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। যাদের ৭৬টি শিশু ও ৪১জন ‍নারী।
এদের মধ্যে, ১৯৪ জন মারা গেছেন, সরকারি ও রুশবাহিনীর বিমান হামলায়, ১২৬ জন মারা গেছেন বিদ্রোহীদের গোলাবর্ষণে। তবে সবচেয়ে বর্বর গণহত্যার ঘটনাটি সংঘটিত হয় শনিবার আলেপ্পোর আল ফিরদাউস এলাকার একটি বাসস্টেশনে। যুদ্ধবিধ্বস্ত নগরী থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য সেখানে জড়ো হওয়া বেসামরিক নাগরিকদের ওপর যুদ্ধ বিমান থেকে ক্লাস্টার ও নাপাম বোমার হামলা চালায় সরকারি ও রুশ জঙ্গিবিমান। নিহত হন অর্ধশতাধিক বেসামরিক নাগরিক।

সিরিয়ায় এভাবে গণহত্যা চলতে থাকলেও এ ব্যাপারে কোনো বিকার নেই জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের। সরকারি ও বিদ্রোহী উভয় পক্ষই সিরিয়ায় নির্বিচারে মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটালেও কাউকে দায়ী করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।

২০১১ সালে তথাকথিত ‘আরব জাগরণ’ এর মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে এখন পর্যন্ত জাতিসংঘের হিসেবেই মারা গেছেন ২ লাখ ৮০ হাজার মানুষ। যদিও প্রকৃত হিসেবে মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি।

ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এক সময়ের আরব বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধশালী দেশটি। শরণার্থী হিসেবে দেশ ছেড়েছেন অর্ধকোটি সিরীয়। যাদের অধিকাংশই মানবেতর জীবন যাপন করছেন ইউরোপ-এশিয়ার বিভিন্ন দেশের শরণার্থী শিবির, মাঠে-ঘাটে, জঙ্গলে।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031