যুদ্ধাপরাধে ফাঁসিতে ঝুললেন কাসেম

চার দশক আগে তার পরিকল্পনা, নির্দেশনা ও নেতৃত্বেই আলবদর বাহিনী চট্টগ্রামে সংগঠিত হয়। ওই বাহিনী সে সময় যে হত‌্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল, তাতে তিনি নিজেও অংশ নিয়েছেন। অপরাধের মাত্রা বিবেচনায় কাসেম দণ্ডের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ছাড় পেতে পারেন না বলে রায় দিয়েছিল সর্বোচ্চ আদালত।

জামায়াত আমির মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের পর মীর কাসেম ছিলেন আলবদর বাহিনীর তৃতীয় প্রধান ব্যক্তি। ধারণা করা হয়, তার যোগানো অর্থেই স্বাধীন বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী শক্ত ভিত্তি পায়।

বহু মানুষকে চট্টগ্রাম শহরের আন্দরকিল্লার ডালিম হোটেলে ধরে নিয়ে নির্যাতন; কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে সেখানে নির্যাতনের পর হত‌্যা এবং স্বাধীনতার পক্ষের লোকদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের মত ভয়ঙ্কর সব অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েও মৃত্যুর আগে তার কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা করেননি ৬৪ বছর বয়সী কাসেম।

সব আইনি লড়াই ব্যর্থ হওয়ার পর শনিবার রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এর সিনিয়র সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক বলেন, রাত ১০টা ৩০ মিনিটে মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর করেছেন তারা।

এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ষষ্ঠ ব্যক্তির সর্বোচ্চ সাজার রায় কার্যকর হল। তিনি হলেন জামায়াতের পঞ্চম শীর্ষ নেতা, চার দশক আগের অপরাধের কারণে যাকে ফাঁসিকাষ্ঠে যেতে হল।

দণ্ড কার্যকরের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর আগেই কাসেমের লাশ নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনটি অ্যাম্বুলেন্স কাশিমপুর কারাগারে নিয়ে রাখা হয়। এই যুদ্ধাপরাধীর কফিন নিয়ে যাওয়া হবে মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার চালা গ্রামে, সেখানেই পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে প্রশান্ত কুমার বণিক জানান।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ অর্থাৎ মজলিসে শুরার সদস‌্য মীর কাসেমকে ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর মৃত‌্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব‌্যুনাল। চলতি বছর ৮ মার্চ আপিল বিভাগেও সেই রায় বহাল থাকে।

কাসেমের মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন গত ৩০ অগাস্ট সর্বোচ্চ আদালতে খারিজ হয়ে গেলে ফাঁসিকাষ্ঠ এড়াতে তার সামনে খোলা ছিল শুধু রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার সুযোগ।

কাসেম সেই সুযোগ নেবেন না বলে জানিয়ে দিলে শুক্রবার কাশিমপুর কারাগারে শুরু হয় দণ্ড কার্যকরের প্রস্তুতি। শনিবার বিকালে কারাগারে এসে দেখা করে যান পরিবারের সদস‌্যরা।

সন্ধ‌্যা সাড়ে ৬টায় কারাগার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় মীর কাসেমের স্ত্রী খন্দকার আয়েশা খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, “যারা ফাঁসি দিচ্ছে তারা জয়ী হবে না। এই মৃত্যু ইসলামের জন্য মৃত্যু। এই মৃত্যু শহীদের সামিল।”

বৃষ্টির মধ‌্যেও মুক্তিযোদ্ধা, গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীসহ বহু মানুষ তখন কারাগারের বাইরে ভিড় করে ছিলেন বদর নেতা কাসেমের সর্বোচ্চ সাজার রায় বাস্তবায়নের অপেক্ষায়। তাদের অনেকে হাতেই ছিল বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা; কাসেমের জন‌্য প্রতীকী ফাঁসির দড়ি।

কাসেমের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে সরকারের নির্বাহী আদেশ দুপুরে কারাগারে প্রবেশের পরপরই দৃশ্যপট দ্রুত বদলাতে শুরু করে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে রাতেই ফাঁসি কার্যকরের লক্ষণ স্পষ্ট হতে থাকে।

ওই সময় কারাগার এলাকার নিরাপত্তা কয়েক গুণ বাড়ানো হয়। পুলিশের পাশাপাশি কারাগারের ফটকে সারি বেঁধে অবস্থান নেন বিপুল সংখ‌্যক র‌্যাব সদস‌্য। কারাগারের আরপি চেকপোস্ট সংলগ্ন দোকানপাট দুপুরেই বন্ধ করে দেওয়া হয়।

বিকাল সোয়া ৪টার দিকে কারাগারে ঢোকে ফায়ার সার্ভিসের একটা গাড়ি। পুলিশের একটি জলকামান আগের রাতেই কারাগারের ভেতরে নিয়ে রাখা হয়েছিল।

অতিরিক্ত আইজি (প্রিজন্স) কর্নেল ইকবাল হাসানকে বেলা দেড়টার দিকে কাশিমপুর কারাগারে ঢুকতে দেখা যায়। এরপর বিকাল ৪টায় কারাগারে যান ডিআইজি (প্রিজন্স) গোলাম হায়দার। কাসেমের স্বজনরা বেরিয়ে যাওয়ার পর ভেতরে যান কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন।

পরে সিভিল সার্জন আলী হায়দার খান, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (জেলা ম্যাজিস্ট্রেট) এসএম আলাম, অতিরিক্ত জেলা ম‌্যাজিস্ট্রেট রাহেনুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কারাগারের ভেতরে ঢোকেন রাত সাড়ে ৯টার দিকে।

এর আগেই নিয়ম অনুযায়ী ফাঁসির আসামির স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন হয়; কাশিমপুর কারাগার জামে মসজিদের ইমাম মুফতি মো. হেলাল উদ্দিন ইসলামী রীতি অনুযায়ী আসামিকে তওবা পড়ান। এরপর আসামিকে কনডেম সেল থেকে নেওয়া হয় ফাঁসির মঞ্চে।

শীর্ষ এই যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের খবর আসার সঙ্গে সঙ্গে কারাগারের বাইরে এবং শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে উল্লাস প্রকাশ করে জনতা। স্বস্তি প্রকাশ করে চট্টগ্রামের মানুষ, যারা একাত্তরে এই জামায়াত নেতার যুদ্ধাপরাধের কারণে স্বজন হারিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন নানাভাবে।

বদর নেতা থেকে জামায়াতের শুরা সদস্য

মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার তৈয়ব আলীর দ্বিতীয় ছেলে মীর কাসেম আলীর জন্ম ১৯৫২ সালের ৩১ ডিসেম্বর। তার ডাকনাম পিয়ারু হলেও চট্টগ্রামের মানুষ তাকে চিনত মিন্টু নামে।

কাসেমের বাবা তৈয়ব আলী ছিলেন চট্টগ্রাম টেলিগ্রাফ অফিসের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী, নগরীর রহমতগঞ্জ এলাকার সিঅ্যান্ডবি কলোনিতে তারা থাকতেন। চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে স্নাতক পড়ার সময় ১৯৭০ সালে জামায়াতের তখনকার ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের কলেজ শাখার সভাপতি হন মীর কাসেম। স্বাধিকারের দাবিতে বাঙালির সংগ্রাম তখন চূড়ান্ত পর্যায়ে।

একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী সারা দেশে বাঙালি নিধন শুরু করলে স্বাধীনতার লড়াইয়ে অস্ত্র হাতে নেয় এ দেশের মানুষ। ওই বছর ৬ নভেম্বর পর্যন্ত কাসেম চট্টগ্রাম শহর শাখা ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন এবং সেই সূত্রে ছিলেন চট্টগ্রামে আর বদর বাহিনীর নেতা।

৭ নভেম্বর দলে পদোন্নতি পেয়ে তিনি পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের প্রাদেশিক কার্যকরী পরিষদের সদস্য এবং পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক হন। আলবদর বাহিনীর কেন্দ্রীয় কমান্ডার হিসেবে চট্টগ্রাম অঞ্চলে সরাসরি মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত ছিলেন তিনি।

এ মামলার বিচারে রাষ্ট্রপক্ষ মীর কাসেমকে আখ্যায়িত করেছে পাকিস্তানের খান সেনাদের সঙ্গে মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত হওয়া ‘বাঙালি খান’ হিসাবে। তার নির্দেশেই চট্টগ্রাম টেলিগ্রাফ অফিস সংলগ্ন এলাকায় হিন্দু মালিকানাধীন মহামায়া ভবন দখল করে নাম দেওয়া হয় ডালিম হোটেল। গড়ে তোলা হয় বদর বাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের ঘাঁটি এবং বন্দিশিবির।

সেখানে অসংখ্য মানুষকে নির্যাতন ও হত্যা করা হয়, যাদের লাশ পরে ফেলে দেওয়া হতো চাক্তাই চামড়ার গুদাম সংলগ্ন কর্ণফুলী নদীতে।

ডালিম হোটেলকে ‘ডেথ ফ্যাক্টরি’ আখ‌্যায়িত করে ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, “ডালিম হোটেলে ঘটে যাওয়া সব ধরনের অপরাধের ব্যাপারে সবকিছুই জানতেন মীর কাসেম। এসব অপরাধে তার ‘কর্তৃত্বপূর্ণ’ অংশগ্রহণও প্রমাণিত। ফলে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ৪ (২) ধারা অনুযায়ী তিনি ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃত্বের’ দোষে দোষী।”

গত ৩০ অগাস্ট আপিল বিভাগ কাসেমের রিভিউ খারিজ করে সর্বোচ্চ সাজার রায়ই বহাল রাখে। ওইদিন সন্ধ‌্যায় প্রকাশিত ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপিতে বলা হয়, “মৃত্যুদণ্ড কমানোর মতো কোনো সুযোগ এ মামলায় নেই, বরং বাড়ানোর পরিস্থিতি রয়েছে।”

যে অভিযোগে প্রাণদণ্ড

অভিযোগ ১১: ১৯৭১ সালে ঈদুল ফিতরের পরের যে কোনো একদিন মীর কাসেমের পরিকল্পনা নেতৃত্বে আলবদর বাহিনীর সদস্যরা চট্টগ্রাম শহরের কোনো এক অজ্ঞাত স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে অপহরণ করে আন্দরকিল্লার ডালিম হোটেলে নিয়ে যায়। তাকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত সেখানে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের ফলে জসিমের মৃত্যু হলে আরো পাঁচজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির লাশসহ তার মৃতদেহ কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেওয়া হয়

এছাড়া অপহরণ নির্যাতনের ছয় অভিযোগে মীর কাসেমকে মোট ৫৮ বছরের কারাদণ্ড দেয় সর্বোচ্চ আদালত

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর মীর কাসেম আত্মগোপনে যান। কিন্তু পঁচাত্তরে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর জেনারেল জিয়াউর রহমান জামায়াতকে স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিলে ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ছাত্রসংঘ নাম বদলে ইসলামী ছাত্রশিবির নামে বাংলাদেশে রাজনীতি শুরু করে এবং মীর কাসেম হন তার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।

১৯৮০ সালে কাসেম যখন সরাসরি জামায়াতের রাজনীতিতে যোগ দেন, তখন তিনি রাবেতা আলম আল-ইসলামী নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ সমন্বয়ক। বলা হয়, সেই সম

হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের আমলে ১৯৮৩ সালে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড গঠন হলে মীর কাসেম প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান হন। দলে দ্রুত পদোন্নতি পেয়ে ১৯৮৫ সালে তিনি হন জামায়াতের শুরা সদস্য।

ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মীর কাসেম ছিলেন ইবনে সিনা ট্রাস্টের অন্যতম সদস্য । গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত মীর কাসেম দিগন্ত মিডিয়া কর্পোরেশনেরও চেয়ারম্যান ছিলেন।

ওই প্রতিষ্ঠানেরই সংবাদপত্র দৈনিক নয়া দিগন্ত এবং টেলিভিশন চ্যানেল দিগন্ত টেলিভিশন। ২০১২ সালের ১৭ জুন মতিঝিলের নয়া দিগন্ত কার্যালয় থেকে কাসেমকে গ্রেপ্তার করা হয়; পরের বছর ৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার যুদ্ধাপরাধের বিচার।

বিচার ঠেকানোর চেষ্টা বার বার

ট্রাইব‌্যুনালে এ মামলার বিচার চলার মধ‌্যেই ২০১৩ সালের ২৮ এপ্রিল তৎকালীন আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, মীর কাসেম আলী মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকাজ প্রশ্নবিদ্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি লবিস্ট প্রতিষ্ঠানকে ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার দিয়েছেন।

সেই অভিযোগের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে এ মামলার আপিল শুনানিতে একটি মেমো দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। ওয়াশিংটনের ফার্ম ক্যাসিডি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের ওই মেমোতে বলা হয়, তারা ‘পেশাগত সেবার’ জন্য মীর কাসেমের পাঠানো আড়াই কোটি ডলার হাতে পেয়েছে।

রিভিউ শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, আদালত ওই মেমোকে প্রমাণ হিসেবে নেয়নি, কিন্তু আসামি যতগুলো কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত, তাতে রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ ‘বাড়াবাড়ি বলে মনে হয় না’।

আপিলের রায় পুনর্বিবেচনার শুনানি পেছাতেও বার বার চেষ্টা করতে দেখা যায় আসামিপক্ষকে। যুদ্ধাপরাধের অন‌্য মামলার রিভিউয়ে যে সময় লেগেছে, মীর কাসেম আলীর ক্ষেত্রে তার দ্বিগুণ সময় ব‌্যয় হয়েছে বলে অ্যাটর্নি জেনারেলের তথ‌্য।

মীর কাসেম আলী, ২০১৪ সালের নভেম্বর মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর ট্রাইব্যুনাল থেকে কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়ার পথে।

ফাঁসিকাষ্ঠে

# ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর ফাঁসিতে ঝোলানো হয় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে, নৃশংসতার জন্য আলবদর বাহিনীর এই সদস্যের কুখ্যাতি ছিল মিরপুরের কসাই নামে।

# ২০১৫ সালের ১১ এপ্রিল ফাঁসিতে ঝোলানো হয় জামায়াতের অপর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল যুদ্ধাপরাধী মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে; একাত্তরে তার নৃশংসতাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালের নাৎসি বাহিনীর পাশবিকতার সঙ্গে তুলনা করে আদালত।

# ২০১৫ সালের ২১ নভেম্বর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় একই রাতে। এই মুজাহিদই একাত্তরে নিজামীর পর বদর বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আর সাকা চৌধুরী চট্টগ্রামে কায়েম করেছিলেন ত্রাসের রাজত্ব।

# ২০১৬ সারের ১১ মে ফাঁসিতে ঝোলানো হয় জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীকে যার পরিকল্পনা, নির্দেশনা ও নেতৃত্বে আলবদর বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা বাস্তবায়ন করেছিল।

# স্বাধীনতা যুদ্ধের পর চিকন আলী নামে এক দালালের ফাঁসির রায় হয়েছিল যুদ্ধাপরাধের দায়ে, তবে জেনারেল জিয়ার আমলে তিনি কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে যান।

স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ঘাতক দালালদের বিচারে আইন প্রণয়ন করে আদালত গঠন করা হলেও সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সেই উদ্যোগ থেমে যায়।

এরপর ১৯৯১ সালের ২৯ ডিসেম্বর গোলাম আযমকে জামায়াতে ইসলামী তাদের দলের আমির ঘোষণা করলে দেশে বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়, যা পরে রাজাকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলনে পরিণত হয়।

আন্দোলনের এক পর্যায়ে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি ১০১ সদস্যের একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠিত হয়। তিনি ছিলেন এর আহ্বায়ক।

এই কমিটি ১৯৯২ সালে ২৬ মার্চ ‘গণআদালত’ এর মাধ্যমে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একাত্তরের ‘নরঘাতক’ গোলাম আযমের প্রতীকী বিচার শুরু করে। এই গোলাম আযমই যুদ্ধাপরাধের দায়ে ৯০ বছরের দণ্ড হওয়ার পর কারাবন্দি অবস্থায় ২০১৪ সালের অক্টোবরে হাসপাতালে মারা যান

২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ‘বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী নেই’ মন্তব্য করে জামায়াত সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদ সমালোচনার ঝড় তোলেন। এরপর স্বাধীনতা যুদ্ধে সেক্টর কমান্ডারদের উদ্যোগে গঠিত হয় সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম।

যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে তাদের আন্দোলনে শরিক হয় ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি আওয়ামী লীগের ইশতেহারে স্থান পায়।

যুদ্ধাপরাধের বিচারে আওয়ামী লীগের এই অঙ্গীকারে তরুণ প্রজন্ম ব্যাপক সাড়া দেয়। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট।

সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বহুল প্রতীক্ষিত বিচার শুরু হয়।

 

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031