ভূয়া ব্যাংক একাউন্ট তৈরি করে টেন্ডার প্রক্রিয়ার সিকিউরিটি ও পারফরমেন্স মানি দেখিয়ে জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়ায় রাঙ্গামাটিতে এক ব্যাংক কর্মকর্তাকে আটক করেছে দূর্নীতি দমন কমিশন দূদক। বুধবার বেলা এগারোটার সময় নিজ কার্যালয় থেকে রাঙ্গামাটি কোতয়ালী থানা পুলিশের সহায়তায় রূমা বড়–য়া নামীয় এই ব্যাংক কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন রাঙ্গামাটি দূদকের উপ-পরিদর্শক নিজামুর রহমান। আটককৃত কর্মকর্তা রুমা বড়–য়া রূপালী ব্যাংক তবলছড়ি শাখায় ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন বলে জানা গেছে।
দুপুরে তাকে রাঙ্গামাটির আদালতে উপস্থাপন করা হলে অতিরিক্ত সিনিয়র চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন কবির এর আদালত মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ পূর্বক আসামীর জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করেন। মামলার পরবর্তী তারিখ-৫/১২/২০১৬ ইং।
দুদক রাঙ্গামাটি পরিদশর্ক নিজামুর রহমান জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে রাঙ্গামাটি পাবলিক কলেজের নির্র্মাণ কাজে নিযুক্ত ঠিকাদার মুজিবুর রহমানকে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে অবৈধ সুবিধা প্রদানে সহায়তা করার অভিযোগে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক রুমা বড়–য়াকে ২নং আসামী করে এবং ঠিকাদার মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামী করে মামলা দায়ের করে দূদক।
দূদক সূত্র জানিয়েছে, ঠিকাদার মায়েশা এন্টারপ্রাইজের নামে কাজটির পাওয়ার ক্ষেত্রে দাখিলকৃত দরপত্রে ৪৩ লক্ষ ২০ হাজার টাকার সিকিউরিটি মানি ও ১২ লাখ টাকার পারফরমেন্স মানির যে তথ্য উল্লেখ করেছে সেটি সম্পূর্ন ভূয়া প্রমাণিত হয়েছে। দূদক খোঁজ নিয়ে দেখেছে যে, উক্ত একাউন্টটি জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে করা হয়েছে এবং ঢাকাস্থ প্রিমিয়ার ব্যাংক শ্যামলী শাখার কোনো অস্থিত্ব পাওয়া যায়নি।
অভিযোগ পাওয়ার পর দীর্ঘ ১৫দিন তদন্ত চালিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় অবশেষে বুধবার কোতয়ালী থানা মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন, নিজামুর রহমান। থানায় দায়েরকৃত নিয়মিত মামলা নাম্বার হলো-৯। তারিখ-১৬/১১/২০১৬ইং। এই মামলার বাদি দূদক পরিচালক মোঃ শফিকুর রহমান ভূইয়া।
বাংলাদেশ দন্ডবিধি ৪২০, ৪৬৭,৪৬৮, ৪০৯সহ ১৯৪৭ সালের দূর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ এর (২) ধারা মোতাবেক উক্ত মামলাটি দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দূদক। এই মামলা দায়ের করার পরপরই নিজ কার্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় রুমা বড়–য়াকে থানা পুলিশের সহায়তায় আটক করা হয়। এর আগে দুদক বুধবার সকালে কোতয়ালী থানায় মামলা দায়ের করে। মামলার ১ নং আসামী ঠিকাদার মুজিবুর রহমান পলাতক রয়েছে বলে জানিয়েছেন দূদক উপপরিদর্শক।
জানা গেছে, রাঙ্গামাটি পাবলিক কলেজের ভবন নির্মাণ করার লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে টেন্ডার আহবান করা হয়েছিলো। উক্ত টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে নিজ প্রতিষ্ঠান মায়েশা এন্টারপ্রাইজের নামে কাজটি পায় রাঙ্গামাটির ঠিকাদার মুজিবুর রহমান মুজিব।
উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, উক্ত কাজটি শুরুর পর হতে নানাবিদ অনিয়মের কারনে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে বোর্ড কর্মকর্তাদের সম্পর্কের অবনতি হয়। এতে করে বেশ কয়েকবার উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়সহ একজন সহকারি প্রকৌশলীকে প্রাণনাশের হুমকিও প্রদান করেছিলেন ঠিকাদার মুজিবুর রহমান মুজিব। উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল সূত্র ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, আমরা ঘটনাটি উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যানসহ পার্বত্য মন্ত্রী মহোদয়কেও বিষয়টি অবহিত করেছিলাম।
