রাঙ্গামাটির আবাসিক হোটেল থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় একজনের লাশ উদ্ধার

রাঙ্গামাটির আবাসিক হোটেল থেকে মো. জামাল উদ্দীন (৪০) নামে একজনের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার রাত ৮টার দিকে শহরের বাসষ্টেন এলাকার আবাসিক হোটেল (ডাইমন্ড) এ ঘটনা ঘটে। নিহত রাঙ্গামাটি শহরের কাঠালতলী এলাকার মো. নজরুল ইসলাম (নজু ড্রাইভার) ছেলে। মৃত্যুকালে সে স্ত্রী নাছিমা আক্তার ও সন্তান মিম ও বাবু রেখে গেছেন।
রাঙ্গামাটি পুলিশ বাহিনীর অপরাধ বিভাগের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ শহিদ উল্লাহ জানান, সোমবার দিবাগত রাত আট’টার সময় ডায়মন্ড হোটেলটির নীচতলাস্থ ১০১ নং কক্ষ থেকে থানা পুলিশ নিহত যুবক জামাল উদ্দিনের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। নিহত জামাল উদ্দিন দুই সন্তানের জনক এবং পেশায় বাস চালক বলে জানিয়েছে স্বজনরা।
তার পিতা নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, আমার ছেলে প্রেম করে বিয়ে করেছিলো। বর্তমানে তার এক ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। তার মেয়ে ১০ শ্রেণী ও ছেলে ৮ম শ্রেণীর ছাত্র। কিন্তু আমার ছেলে প্রেম করে বিয়ে করলেও এত বছর পরে গত চার বছর আগে থেকে তার স্ত্রী অন্য এক হিন্দু ছেলের সাথে পরকিয়া প্রেমে লিপ্ত হয়। এনিয়ে উভয়ের মধ্যে দাম্পত্য কলহ প্রায় সময় লেগেই থাকতো।
সর্বশেষ গত কয়েকদিনে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহের বিষয়টি প্রকট আকার ধারন করে। এক পর্যায়ে তার স্ত্রী বাসা থেকে টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে আমার ছেলে পরকীয়া প্রেমসহ দাম্পত্য কলহের বিষয়টি লিখিত আকারে কোতয়ালী থানা পুলিশকে অবহিত করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আমার ছেলের বউ নাছিমা তার ভাই স্থানীয় যুবলীগ নেতা নুর মোহাম্মদ কাজল ও রুবেল এর পরামর্শে আমার ছেলের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের কথা জানিয়ে আমার পরিবারের সকলকে আসামী করে কোতয়ালী থানায় অভিযোগ দায়ের করে।
এই ঘটনার পরপরই কোতয়ালী থানা পুলিশের একজন অফিসার রোববার সন্ধ্যায় আমাদের বাসায় আসে এবং আমার ছেলে জামালের সাথে দেখা করে। এসময় তিনি আমাদেরকে সোমবার রাত নয়টার সময় কোতয়ালী থানায় হাজির হতে হবে অন্যথায় বাপ-ভাই সকলকে কোমরে দড়ি বেঁধে নিয়ে যাবেন বলে জানিয়ে যান। এতে করে আমার ছেলে জামাল মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে তার শশুর বাড়িতে যোগাযোগ করে তার শ্যালক রুবেলকে জানায়, সমস্যা আমার সাথে, আমার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা করেছেন কেন? সেটি তুলে নেন আপনারা।
এসময় নাছিমার ভাই রুবেল জামালকে জানায়, তোমার নামে থাকা বাস আমার বোনের নামে লিখে দাও তারপর মামলা তুলে নিবো নইলে তোমাদের সকলকে জেলের ভাত খাওয়াবো। এই কথা শুনে জামাল মানসিকভাবে বিপর্যস্থ হয়ে রোববার দুপুরে শহরের হোটেল ডায়মন্ডে গিয়ে তার দাদার বাড়ী রাউজানের ঠিকানা ব্যবহার করে ১০১ নাম্বার কক্ষটি ভাড়া নেয়। সেখানেই কোনো এক সময় গলায় বেডশিট পেছিয়ে আত্মহত্যা করে।
কোতোয়ালী থানার এস আই রমিজ জানিয়েছেন, উভয় পক্ষই থানায় অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি পারিবারিক বিরোধ হিসেবে চিহ্নিত করে উদ্বর্তন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে দাম্পত্য কলহ আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে জামালদের বাসায় গিয়েছিলাম আমি। এসময় আমি জামালসহ উভয় পক্ষকেই সোমবার রাত নয়টার সময় কোতয়ালী থানায় উপস্থিত হওয়ার জন্য বলে এসেছি। এখানে কাউকে কোনো প্রকার হুমকি দেওয়া হয়নি। এছাড়া বিষয়টি নিষ্পত্তিযোগ্য হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে দায়েরকৃত অভিযোগগুলোর কোনটিই থানায় মামলা হিসেবে এন্ট্রি করা হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিহত জামালের পিতা ও ভাই সালাউদ্দিন জানান, আমাদের ভাইকে আত্মহত্যা করতে প্ররোচনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এই বিষয় নিয়ে স্থানীয় যুবলীগ নেতা জামাল উদ্দীনের স্ত্রীর ভাই পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন রকম হয়রানি ও মামলা হামলার হুমকি দেয় বলেও তারা জানান। যুবলীগ নেতা কাজল, রুবেল ও নাছিমা মিলে আমার ভাইকে ক্রমাগত মানসিক চাপ প্রয়োগের ফলেই আমাদের জামাল নিজেকে শেষ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা এই ঘটনায় আত্মহত্যা প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের করবো। এসময় উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে প্রশাসনের হস্তক্ষেপও কামনা করেছেন জামালের স্বজনরা।
নিহতের অপর ভাই আব্বাস উদ্দিন জানান, সোমবার বেলা আড়াইটার সময় আমার কাছে ফোন করে আমার ভাই জানায়, আমার কারনে বাবা-ভাই সকলেই আসামী হবে এটি আমি হতে দেবোনা। আমি নাছিমার ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করেছিলাম তারা আমাকে গাড়ি লিখে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। তাই আমি সির্দ্ধান্ত নিয়েছি নিজেকেই শেষ করে দিবো। তুই আব্বা-ভাইয়াসহ সকলকে বলিস আমাকে ক্ষমা করে দিতে। এই কথা বলেই মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় জামাল।
এরপর রাতে খবর পাই যে, আমার ভাই আত্মহত্যা করেছে। আব্বাস জানান, নাছিমার মতো মেয়ের কারনেই আমার ভাই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। আব্বাস দাবি করেন, জামালের ব্যবহৃত মোবাইলে নাছিমার পরকীয়ার সকল তথ্য রেকর্ড করা আছে সেগুলো পর্যালোচনা করলেই স্পষ্ট হবে সুপরিকল্পিতভাবেই আমার ভাইকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিয়েছে নাছিমা ও তার ভাইয়েরা।
এদিকে নিহতের ছেলে সাগর সাংবাদিকদের জানায়, তার মা নাছিমা আক্তার চট্টগ্রামের সঞ্জয় নামে একজন হিন্দু যুবকের সাথে পরকীয়া প্রেম করতো। এটি নিয়ে বাবা-মায়ের মধ্যে প্রায় সময়ই ঝগড়া লেগেই থাকতো। এছাড়া তার মা তিনদিন আগে বাসা থেকে সবকিছু নিয়ে পালিয়ে যায় বলেও জানায় সাগর।
অপরদিকে, রাঙ্গামাটি জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নুর মোহাম্মদ কাজল এই ব্যাপারে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে জানিয়েছেন, আমার বোনের সংসার টিকানোর স্বার্থে তাদের উভয়ের দাম্পত্য কলহ মিটানোর লক্ষ্যে বেশ কয়েকবার পারিবারিক সমঝোতা বৈঠক আমরা উভয় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে করেছি এটা সত্য। এটি আমি কেন সকলেই করবে। একটি সংসার জোড়া লাগাতে কে না চায়। কাজল জানান, গত কয়েকদিন আগে আমার কাছে আবারো এসে সেদিনের ঘটনাটি জানিয়েছিলো কিন্তু আমি কারো পক্ষেই কোনো কথা বলিনি। কাজল জানান, আত্মীয় স্বজনের পারিবারিক মিটিংয়ে অন্য সবার মতো আমিও অংশ নিয়েছিলাম। কিন্তু সর্বশেষ ঘটনা নিয়ে আমাকে জড়িয়ে কথা বলা, মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়। আমি প্রভাব খাটিয়েছি এমন কথা প্রমান করতে পারলে যে কোনো শাস্তি মাথা পেতে নেব।
খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে ছুটে যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ শহিদ উল্লাহ, এএসপি সদর সার্কেল চিত্ত রঞ্জন পালসহ পুলিশের উদ্ধর্তন কর্মকর্তাগণ। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ শহিদ উল্লাহ বলেন, আমরা সব বিষয় আমলে নিচ্ছি। তার লাশ ময়না তদন্ত করার জন্য নেওয়া হয়েছে। সকল তদন্ত শেষে রিপোর্ট হাতে পেলে আমরা সিদ্ধান্ত দিতে পারবো আসলে এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা?
তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হয়েছে যে, এটি একটি আত্মহত্যার মতো ঘটনা হয়ে থাকতে পারে। তবে বেশ কিছু কথা উঠে এসেছে আমরা তা বিবেচনায় নিয়েছি। সবকিছু আমলে নিয়ে তদন্তের পরে সঠিক তথ্য বলা যাবে জানিয়ে তিনি বলেন, নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলে পুলিশ সেটি অবশ্যই গ্রহণ করবে। এছাড়া লাশ উদ্ধারের ঘটনায় আপাতত পুলিশের পক্ষ থেকে ইউডি মামলা দায়ের করা হবে বলেও জানিয়েছেন অতিরিক্তি পুলিশ সুপার।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031