রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় তোপের মুখে মৎস্য কর্মকর্তারা
পার্বত্য চট্টগ্রামে মৎস্যচাষ প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রশ্ন তুলে প্রকল্পটির কার্যক্রম নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। তিনি বলেন, প্রকল্পের সঠিক বাস্তবায়ন নিয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কর্মকান্ডে যথেষ্ট স্বচ্ছতার অভাব দেখা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবা (২৯ ডিসেম্বর) রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় এ অসন্তোষ ব্যক্ত করেন পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং। এ সময় প্রতিমন্ত্রীর তোপের মুখে পড়েন উপস্থিত মৎস্য কর্মকর্তারা। তিনি পাহাড়ী ঘোনায় জাক দিয়ে যে অবৈধ ভাবে মাছ চাষ করা হচ্ছে তা অপসারণে জেলা পরিষদ পক্ষ থেকে বার বার ব্যবস্থা গ্রহন করতে বলা হলেও জাক অপসারণে কোন উদ্যোগ না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে এক সপ্তাহের মধ্যে এর কার্যক্রম পরিচালনা করতে নিদের্শ প্রদান করেন।
সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে মৎস্যচাষ উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবদুর রহমান ও জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সৈয়দ মো. আলমগীর উপস্থিত ছিলেন।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত মাসিক উন্নয়ন সভায় রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমার সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন, রাঙ্গামাটি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুল ইসলাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য মোঃ কামাল উদ্দিন, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য অংসুইপ্রু চৌধুরী, ত্রিদিপ কান্তি দাশ, সবির কুমার চাকমা, সান্তনা চাকমা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ সারোয়ার, রাঙ্গামাটি পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী’সহ পুলিশ বিভাগের প্রতিনিধি, সাংবাদিক ও জেলার গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিভাগীয় প্রধান, কমিটির সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগন উপস্থিত ছিলেন।
সভায় উপস্থিত মৎস্য কর্মকর্তাদের উত্থাপিত পার্বত্য এলাকায় বাস্তবায়নাধীন মৎস্যচাষ প্রকল্পের কার্যক্রম সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে যতদূর সুফল ও সফলতা আসার কথা- তা প্রকৃতপক্ষে পরিলক্ষিত হচ্ছে না উল্লেখ করে পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর বলেন, এত টাকা ব্যয় করে সরকার উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করছে, অথচ কাঙ্খিত ফলাফল নেই। তাহলে টাকাগুলো যাচ্ছে কোথায়?
প্রতিমন্ত্রী বলেন, একটা সময় আসবে, তখন প্রশ্ন উঠবে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছে কিন্তু ফলাফল শূন্য। বলা হবে এসব টাকা গেল কোথায় ? তিনি পার্বত্য এলাকায় বাস্তবায়নাধীন মৎস্য চাষ প্রকল্পে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের কর্মকান্ড নিয়ে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির প্রশ্ন তোলেন। দায়িত্বে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে এক মাসের মধ্যে প্রকল্পের বিস্তারিত প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর। সভায় এছাড়াও জেলায় বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও পরিকল্পনা বিষয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা হয়েছে। পরে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অর্থায়নে মুক্তিযোদ্ধাদের শীতবস্ত্র এবং জেলার ২৫টি শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সরঞ্জামাদি বিতরণ করেন বীর বাহাদুর।
উল্লেখ্য, পার্বত্য জেলাগুলোয় মৎস্যচাষ কার্যক্রম ও উৎপাদন বাড়িয়ে স্থানীয় জনগণের আয় ও পুষ্টির জোগান দেয়ার লক্ষ্যে ৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। বর্তমানে প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায় কার্যক্রম চলছে। ২০১৭ সালে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হবে। তিন পার্বত্য জেলার মোট ২৫ উপজেলায় এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ চলছে।
