নিজ জেলার শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারলে প্রতিটি উন্নয়নের ক্ষেত্রে তারা অবদান রাখবে বলে মন্তব্য করেছেন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা। তিনি বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য কৃষি’সহ এ জেলায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন জেলা হতে চিকিৎসক-কর্মকর্তারা আসে কিন্তু কয়েক বছর থেকে তারা চলে যায়। নিজ জেলার স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসক-কর্মকর্তারা থাকলেও আজ যদি এ জেলার ছেলে মেয়েরা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারতো তাহলে এ জেলায় চিকিৎসক-কর্মকর্তার অভাব হতোনা। আন্তরিকতার সাথে তারা নিজ জেলাবাসীর জন্য কাজ করে যেত। তাই শিক্ষার্থীদের নিজের সন্তানের ন্যায় শিক্ষাদান করার জন্য তিনি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের প্রতি আহ্বান রাখেন।
রবিবার (২৭আগস্ট) সকালে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা উন্নয়ন কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
সভায় রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ এর মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ছাদেক আহমদের পরিচালনায় জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিভাগীয় প্রধান এবং কমিটির সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় পরিষদ চেয়ারম্যান আরো বলেন, প্রতি মাসে সমন্বয় সভাটি করা হয় জেলার উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণে। তাই প্রতি সভায় বিভাগীয় প্রধানদের উপস্থিত থেকে পরামর্শ ও মতামত প্রদানের আহ্বান জানান তিনি।
সভায় রাঙ্গামাটি সরকারী কলেজের প্রভাষক বলেন, জেলার বিভিন্ন দুর্গম উপজেলা হতে শিক্ষার্থীরা এখানে এসে বাসা-বাড়ী ভাড়া করে থাকতে হয়। ফলে পড়ালেখার পাশাপাশি বাড়ীভাড়া করে শিক্ষার্থীদের চলতে সমস্যা হয় বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের অভাবে কলেজের হোষ্টেল চালু করা যাচ্ছেনা। হোষ্টেল চালুর লক্ষ্যে তিনি পরিষদ হতে আসবাবপত্র প্রদানের অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, বর্তমানে কলেজের প্রশাসনিক ভবনের কাজ চলছে।
গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, কাউখালীতে ফায়ার স্টেশন ভবনের কাজ শেষ। এছাড়া জেলার পুলিশ হাসপাতাল, দুদক কার্যালয়, কাপ্তাই থানা’সহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।
বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, গত ১৩জুন পাহাড় ধসে বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ সঞ্চালনের খুঁটি ও লাইন বিচ্ছিন্ন হয়েছিল। বেশীর ভাগ লাইন সচল করতে পারলেও এখনো অনেক বিদ্যুতের খুঁটি ঠিক করতে না পারায় সামান্য সমস্যা হচ্ছে। এগুলো সচলের বিষয়ে সার্ভে চলছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, গত ১৩জুন পাহাড় ধসে সাপছড়ি শালবন এলাকায় রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম রাস্তাটি বিচ্ছিন্ন হয়েছিল। পরে সেনাবাহিনী ও সওজ এর সহযোগিতায় ছোট যান চলাচলের জন্য রাস্তা নির্মাণ করা হয়। গত ২১আগস্ট ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য একটি বেইলী ব্রীজ নির্মাণ করে বড় যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া যেসব জায়গায় সড়কের ক্ষতি হয়েছিল তা সংস্কার করা হবে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর সহকারি পরিচালক বলেন, ঈদের পরে কাউখালী ফায়ার স্টেশন ভবন উদ্বোধন করা হবে। এছাড়া নানিয়ারচর ও বাঘাইছড়ি উপজেলায় জায়গা সমস্যার কারণে ফায়ার স্টেশন ভবন নির্মাণ করা যাচ্ছেনা। তবে খুব শীঘ্রই জায়গার বিষয়টি নিরসন হবে।
বিটিসিএল এর সহকারী প্রকৌশলী জানান, বজ্রপাতে জেলার অনেক প্রতিষ্ঠানে ইন্টারনেট ও টেলিফোন সেট নষ্ট হয়। বজ্রপাতের সময় ইন্টারনেট ও টেলিফোন সেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে জেলা ও উপজেলা খাদ্য ভান্ডারে খাদ্য শস্য মজুদ রয়েছে। যেকোন দুর্যোগে খাদ্যশস্য বিতরণ করা যাবে।
রাঙ্গামাটি পৌরসভার কাউন্সিলর জানান, ঈদুল আজহায় পৌর এলাকার ওয়ার্ড ভিত্তিক নিদিষ্ট স্থানে কোরবানির পশু জবেহ করার জন্য জবেহ স্থানের ঠিকানা ও পশুর উচ্ছিষ্টাংশ পরিবেশ সম্মতভাবে অপসারণে পৌরসভা কর্তৃক জনগণের মাঝে প্রচারণার লক্ষ্যে সচেতনামূলক লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে।
সভায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, আসন্ন কোরবানি ঈদে যেসব স্থানে গরুর হাট বসানো হবে সেসব স্থানে যাতে যানজট না হয় সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখার জন্য পৌর কর্তৃপক্ষ ও বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটিকে অনুরোধ জানান। এছাড়া জেলায় জঙ্গী ও মাদকের বিরুদ্ধে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পুলিশের বিশেষ দল এ বিষয়ে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তাই এসব বিষয়ে তথ্য জানিয়ে পুলিশকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তিনি।
এছাড়া সভায় উপস্থিত অন্যান্য বিভাগীয় কর্মকর্তাগণ স্ব স্ব বিভাগের কার্যক্রম উপস্থাপন করেন।
