রোহিঙ্গাদের অর্থ সংস্থানের আশ্বাস বিশ্ব ব্যাংকের

ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপের ওয়েস্টিন হোটেলে বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের সম্মেলনের চতুর্থ দিন শনিবার বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।মুহিত বলেন, “বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে রোহিঙ্গা নিয়েই সব আলোচনা হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট বলেছেন, অসহায় এই মানুষগুলোর সহায়তার জন্য যে খরচ হবে, তার ব্যবস্থা বিশ্ব ব্যাংক করবে। আমাদের সরকারের কোনো অর্থ খরচের প্রয়োজন পড়বে না।”অর্থায়নের জন্য সুইডেন, জার্মানি, কুয়েত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের আলোচনা হয়েছে বলে জানান মুহিত। তিনি বলেন, কানাডা ইতোমধ্যে কিছু অর্থ দিয়েছে।মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার হয়ে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে রয়েছে। তাদের ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হলেও তাতে অগ্রগতি নেই। এই শরণার্থীরা জনবহুল বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বড় চাপ সৃষ্টি করেছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বারবারই বলা হচ্ছে।অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমরা হিসাব করে দেখেছি, আগামী দুই বছরে রোহিঙ্গাদের জন্য দুই বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। কোনো ঋণ নয়, অনুদানের ব্যবস্থা করবে বিশ্ব ব্যাংক। এক বিলিয়ন ডলার করে দুই বছরে দুই বিলিয়ন ডলারের এই অর্থের বেশির ভাগ দেবে বিশ্ব ব্যাংক। বাকি অর্থ অন্যান্য দাতা দেশ এবং সংস্থার কাছ থেকে যোগাড় করে দেবে।” অর্থমন্ত্রী জানান, রোহিঙ্গাদের জন্য ইতোমধ্যে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে ৫০ কোটি ডলারের একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আরও ২০ কোটি ডলারের চুক্তি হবে।এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবির সঙ্গে প্রথম পর্যায়ে ১০ কোটি ডলারের চুক্তি হয়েছে। আরও ১০ কোটি ডলারের চুক্তি হবে শিগগিরই।বৈঠকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে কোন আলোচনা হয়েছে কি না- বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এই প্রশ্নের উত্তরে মুহিত বলেন, “হাঁ, বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট বলেছেন, আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো। দারিদ্র্য দূর করতে ভালো করছি; যেটা তিনি নিজে বাংলাদেশে গিয়ে দেখে এসেছেন।“বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের সরকারের সম্পর্ক এখন খুবই ভালো। পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন নিয়ে যেটা হয়েছিল, সেটা আমরা দুপক্ষই ভুলে গেছি। এখন বিশ্ব ব্যাংক আমাদের যে টাকা দিতে চেয়েছিল, তার থেকেও বেশি টাকা দিচ্ছে।”  মুহিত এর আগে বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে তিন বছরে (২০১৭-১৮ থেকে ২০১৯-২০) ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন।“আমরা দুই বছরেই সেই টাকা শেষ করে ফেলেছি। অর্থাৎ দুই বছরেই তিন বছরের টাকা খরচ করেছি। এখন আমরা তাদের কাছ থেকে বাকি এক বছরের জন্য আরও ৪ দশমিক ৫ বিয়িন ডলার চেয়েছি। তারা আমাদের বাড়তি সহায়তা দিতে রাজি হয়েছে। সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার পাওয়া না গেলেও ২ বিলিয়ন ডলার পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।” বিশ্ব ব্যাংক আফ্রিকা অঞ্চলের দেশগুলোকে সহায়তার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার অনেক অর্থ অব্যবহৃত রয়েছে জানিয়ে সেখান থেকে ২ বিলিয়ন ডলার পাওয়ার আশা প্রকাশ করেছিলেন মুহিত।ইন্দোনেশিয়ার বালিতে ওয়েস্টিন হোটেলে বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত  বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর  ফজলে কবির, ওয়াশিংটনে বিশ্ব ব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব কাজী শফিকুল আযম উপস্থিত ছিলন। বিশ্ব ব্যাংক-আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ এর সদস্য ১৮৯ দেশের প্রায় ১৫ হাজার প্রতিনিধি এসেছেন বালিতে, ১৫ অক্টোবর সোমবার শেষ হবে এই সম্মেলন। প্রতিবছর অক্টোবর মাসের প্রথম ভাগে বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফের এই সভা হয়। পর পর দুটি বৈঠক যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে সংস্থা দুটির সদর দপ্তরে হওয়ার পর তৃতীয় সভাটি হয় যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে সদস্যভুক্ত অন্য কোনো দেশে।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031