লংগদুর ভাসান্যাদাম গাউছিয়া মাদ্রাসায় বিষাক্ত ওষুধ খাইয়ে মাদ্রাসা শিক্ষককে হত্যা চেষ্টাঃ অভিযোগের তীর আরেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে

॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ সংক্রমক জাতীয় ওষুধ খাইয়ে লংগদু উপজেলার ভাসান্যাদাম ইউনিয়নের গাউছিয়া তৈয়্যাবিয়া তাহেরিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসা হেফজখানা ও এতিমখানায় ৯ম শ্রেণির ১ ছাত্রের দ্বারা শিক্ষককে হত্যার চেষ্টা করার অভিযোগ উঠেছে অন্য এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এছাড়াও মাদ্রাসার বর্তমান পরিচালনা কমিটির উপর সীমাহীন দুর্নিতিসহ নি¤œমানের শিক্ষা প্রদানের অভিযোগ এনেছে এলাকাবাসী। বুধবার স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ভাসান্যাদামের খাগড়াছড়ি বাজার এলাকার মাদ্রাসার শিক্ষক মো. আশ্রাফ নবম শ্রেণির ছাত্র মো. মাসুম বিল্লাহ কে দিয়ে তার গণিত শিক্ষক ওবায়দুলকে ভাতের সাথে সংক্রমক ওষুধ খাওয়ালে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এতে সে প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসার জন্য লংগদু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। বর্তমানে সে সুস্থ অবস্থায় রিজার্ভমুখস্থ গাউছিয়া খানকায় অবস্থান করছেন। মাদ্রাসা ছাত্র মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, গত তারিখে আমাদের শিক্ষক আশ্রাফ স্যার আমাকে ওবায়দুল স্যার এর খাবারের সাথে মিট্রিল নামক ট্যাবলেট এর গুড়া মিশিয়ে দিতে বলেন। আমি তার কথা না মানলে মাদ্রাসা কমিটি এই কাজটি করতে বলেছে বলেন আশ্রাফ এমটাই ছাত্র প্রতিবেদক কে জানান। পরে আমি না বুঝে তার কথা মেনে ওবায়দুল স্যারের রাতের খাবারে ওই ওষুধ মিশিয়ে দেই।
ঘটনা সূত্রে জানাযায়, গত শুক্রবার রাতে প্রতিষ্ঠানের গণিত শিক্ষক ওবায়দুলকে ভাতের সাথে মিশিয়ে মেট্রিল নামক ঔষধটি খাওয়ানো হয়। এরপর থেকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন অবস্থা বেগতিক হওয়ায় গত রোববার রাতে তাকে লংগদু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। পরদিন তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
একজন বিশেষজ্ঞের সাথে আলাপ করা হলে তিনি বলেন- মেট্রিল সাধারণত পাতলা পায়খানা উপশমের জন্য খাওয়া হয়। কোন অভিজ্ঞ ব্যক্তি ছাড়া কেউর ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে এই ঔষধ ব্যবহারের কথা না। মেট্রিল অতিরিক্ত সেবনের ফলে সাইডইফেক্ট হয়। সাধারণত ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এই ঔষধ কোন রোগীকে দেওয়া হয়না।
এবিষয়ে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. আক্তার হোসেন বলেন, ঘটনার সময় আমি এলাকায় ছিলাম না। এলাকায় এসে বিষয়টি জানতে পেরে কমিটির সদস্যরা বসে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সাপেক্ষে এই ঘটনার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যথায় আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
স্থানীয়রা জানায়- আশ্রাফ আলী একজন পল্লী চিকিৎসক সে বিগত প্রায় ১৮ বছর আগে এই মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেছেন। কিন্তু বিভিন্ন দুর্নিতির অভিযোগে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। কিন্তু ২০২০ সালে মাদ্রাসা পরিচালনায় নতুন কমিটি করার পর। সে আবারো শিক্ষকতা শুরু করেন, কিন্তু তার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে স্থানীয়রা সন্দেহ প্রকাশ করেন। স্থানীয়রা আরো বলেন- পূর্বেও ভুলভাল চিকিৎসা ও মেয়াদউর্ত্ত্বীর্ণ ঔষধ বিক্রির কারণে জেল খেটেছেন।
এবিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হযরত আলীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন- বিষয়টি আমি এলাকাবাসীর মাধ্যমে জেনেছি। জানার পর ওই ছাত্রের সাথে কথা বলে জানতে পারি আশ্রাফ আলী এই কাজটি করিয়েছে। তারপর মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটিকে বিষয়টি অবগত করি এবং থানায় একটি জিডি করতে বলি। এখনো কেন থানায় জিডি করা হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন- মাদ্রাসা কমিটি বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
এদিকে ইউপি সদস্য ও অভিভাবক জানান, আমার ৪সন্তানের মধ্যে ৩জন এই মাদ্রাসা থেকে পড়ালেখা করে বর্তমানে ১জন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে, ১জন রাঙ্গামাটিতে, ১জন জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া কামিল মাদ্রাসায় অধ্যায়ন করেছে এবং আরেকজন বর্তমানে এই মাদ্রাসায় পড়ছে। যদি এমন ঘটনা শিক্ষার্থিদের সাথে ঘটতো তাহলে হয়তো অনেক মায়ের বুক কালি হতো। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের দাবী জানাচ্ছি। অন্যান্য অভিভাবকরাও এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান।
ভিকটিম ওবাইদুলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন- আমি হাসপাতাল থেকে বর্তমানে রিজার্ভমুখ খানকায় অবস্থান করছি। তার সাথে কথা বলার জন্য প্রতিবেদক খানকায় পৌঁছানোর আগেই সে ঐখান থেকে কেটে পরে। পরে বার বার ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি বিভিন্ন অযুহাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
এলাকাবসী জানান অভিযুক্ত আশ্রাফ আলী ঘটনার পর থেকে রাঙামাটি অবস্থান করছে। তার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এবিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
স্থানীয় এলাকাবাসী আঞ্জুমান ও জেলা গাউসিয়া কমিটির মাধ্যমে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছে।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031