শনিবার লংগদু পাকুয়াখালী গণহত্যা দিবস

॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ শনিবার লংগদু পাকুয়াখালী গণহত্যা দিবস রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু ও বাঘাইছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় গণহত্যা সংঘঠিত হয়েছিল। তাই আজ শনিবার পাকুয়াখালী গণহত্যা দিবস হিসেবে দিনটি পালন করার কথা রয়েছে বিভিন্ন বাঙ্গালী সংগঠনের। গণহত্যা দিবসকে ঘিরে বিভিন্ন কর্মসূচী পালিত হবে বলে জানা গেছে। ১৯৯৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর খুব ভোরে লংগদু উপজেলার কালাপাকুর্জ্যা ইউনিয়ন এবং গোলশাখালী ইউনিয়নের ৩৫জন কাঁঠুরিয়াকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছিল তৎকালিন শান্তি বাহিনী।
সে দিন জীবনবাজি রেখে নিষ্ঠুর নির্দয় হায়নারদলের মৃত্যুর কবল থেকে পালিয়ে আসে ইউনুছ আলী নামের এক ব্যক্তি। বেঁচে আসা ইউনুছ আলীর জবানবন্দি থেকেই ৩৫ কাঁঠুরিয়ার ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সেই দিন লংগদু বাঘাইছড়ির আকাশ বাতাস লাশের দুরগন্ধে ভারি হয়ে উঠে। সে দিন নিরিহ কাঠুরিয়াদের মা বাবা স্ত্রী সন্তান প্রতিবেশীদের আত্বনাদে নেমে আসে অন্ধকার।  কেউ হারিয়েছেন বাবা কেউ হারিয়েছেন স্বামী আবার কেউ হারিয়েছেন আদরের সন্তান।
এমন কি বা দোষ ছিল এই নিরিহ কাঁঠুরিয়াদের? এই ৩৫ কাঁঠুরিয়ার ওই দিন শান্তিু বাহিনীর ঘাতক কথা বার্তা সহজে বুঝতে পারেনি। তাঁরা বুঝে ছিল একটাই যে ডেকে নিয়ে তাদেরকে নির্মম ভাবে চিরতরে মেরে ফেলবেন না। কিন্তু ঘাতকদের তো পূর্ব পরিকল্পনা ছিল সবাইকে ডেকে এনে নির্যাতন করে মেরে ফেলবেন। ওই দিন ৩৫ কাঁঠুরিয়া হত্যার বর্ণনা-পাখুয়াখালী তৎকালিন শান্তি বাহিনীর লিডার কাঁঠুরিয়াদের মধ্যে সংবাদ পাঠিয়েছেন যে, তোমাদের সাথে কথা বলবেন শান্তি বাহিনীর বড় বাবু। তাই তোমরা ওই দিন একটু সকালে সবাই চলে আসবে। যেই কথা সেই কাজ। কারন সবাই পরিবার পরিজন চালায় কাঠের লাকড়ি বিক্রি করে। সবাই এক যোগে চলে যায় পাখুয়াখালী বড় বাবুর ডাকে। ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর শান্তি বাহিনীর একজন লিডার এসে সংবাদ দিলেন বড় বাবু একেক করে যেতে বলেন।
যাকে নিয়ে যায় সে আর ফেরৎ আসে না। এ ভাবে ৩৫জন সবাইকে গহিন জংগলে নিয়ে হাত পা বেঁধে ফেলে পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন করে মেরে পাহাড়ের কেচিংয়ে ফেলে দেয়। যার গভীরত্ব ২-৩শ’ ফুট নিচে। ওই দিনের সেই ঘটনা থেকে বেঁচে আসেন ইউনুছ আলী নামের এক ব্যক্তি। তার কাছ থেকেই কাঁঠুরিয়া নির্যাতনের বাস্তবতা জানা গেছে।
বিচারের বাণী কাঁদছে নির্বিকারে-১৯৯৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর এই দিনে এতগুলো নিরিহ বাঙালি কাঁঠুরিয়া জীবন্ত মেরে ফেলল তৎকালিন শান্তি বাহিনী। আজ পর্যন্ত এ হত্যাকান্ডের কোন কুলকিনারা ভেসে উঠছে না। এমন অভিযোগ করলেন নিহত কাঁঠুরিয়া মোস্তফার মা। তিনি বলেন, ৪০ বছর পরে যদি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হতে পারে তা হলে ৩৫ কাঁঠুরিয়া হত্যার বিচার হবে না কেন? তিনি অশ্রুঝড়া কন্ঠে বলেন, সরকার ২বার ক্ষমতায় আসার পরও ৩৫ কাঁঠুরিয়া হত্যার বিচার নিয়ে কোন প্রকার কর্ণপাত করছে না। তাই সরকারের কাছে দাবি বিচার বিভাগীয় তদন্ত পূর্বক ৩৫ কাঁঠুরিয়া হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হউক। আর যাদের আত্বীয়স্বজন হারিয়েছে তাদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান সরকারের প্রতি।
এদিকে নিহত শরীফ উদ্দিন কাঁঠুরিয়ার ছেলে সাখাওয়াৎ হোসেন (গোলশাখালী)ও আরেক নিহত কাঁঠুরিয়া হেলাল উদ্দিনের বড় ভাই করিম (কালাপাকুজ্যা রহমতপুর) বলেন, আমরা স্বজন হারিয়েছি ২১ বছরের বেশী অতিবাহিত হলো কিন্তু স্বজনহারা লোকদের কেউ খোঁজখবর নিতে আসেনি। তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বাঙালি খুন গুম অপহরণ হলে কারো কোন মাথা ব্যথা নেই। তবে যদি একজন উপজাতি কোনক্রমে বেকাদায় মারা যায় তাহলে বিশ্বব্যাপী খবর হয়ে যায়। এর উদাহরণ হলো পিসিপি নেতা নানিয়ারচরের রমেল চাকমা। বাঙালি হত্যা হলে দাতাগোষ্ঠি ও মানবাধিকার ঘুমে থাকে, আর কারনে অকারনে যদি উপজাতি মারা যায় তা হলে পাহাড় উত্তাপ হয়ে উঠে। তাহলে এখানে আইন কানুন শুধু কি উপজাতিদের জন্য? তারা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ৩৫ কাঁঠুরিয়া হত্যাসহ সকল হত্যার বিচার করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, চাঁদাবাজি, খুন, গুম মুক্তিপণ বানিজ্যও অপহরণ বন্ধ করার আহবান জানান।
পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পাকুয়াখালী গণহত্যা দিবসকে ঘিরে পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও কর্মসূচি ঘোষনা করা হয়েছে। গতকাল জুমাবার রাঙ্গামাটি জেলার প্রত্যেক মসজিদে মসজিদে নিহত ৩৫ কাঁঠুরিয়ার জন্য দোয়া ও প্রার্থনা করা হবে। আজ শনিবার সকালে ঢাকা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর রাঙ্গামাটিতে শোকসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ক্ষমতাসীন দলের প্রচেষ্টায় পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনতে শান্তিচুক্তি করা হয়েছে। কিন্তু পাহাড়ে এখনো শান্তি ফিরে আসেনি উপজাতি সন্ত্রাসীদের কারনে। পাহাড়ে এখনো চলছে অস্ত্রের ঝনঝনানি, চাঁদাবাজি, হত্যা, খুন ও গুম।
পাকুয়াখালী গণহত্যা দিবসে পার্বত্য ছাত্র পরিষদের ৭টি দাবি সমূহ-অবিলম্বে ৩৫ বাঙালি কাঁঠুরিয়া হত্যাকান্ডসহ পার্বত্যাঞ্চলের সকল হত্যা কান্ডের বিচার চাই, তা করতে হবে। বিগত ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬ সালের গণহত্যায় নিহত পরিবারদের যথাযথ ক্ষতিপূরণসহ সকলকে পুনবাসন করতে হবে। অবিলম্বে ৩৫কাঁঠুরিয়ার পরিবারকে সম্মানজনক যোগ্যতা অনুসারে চাকরি দিতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল নিয়োগে বাঙালিদের বঞ্চিত করার অপতৎপরতা বন্ধ কর, করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে গুম, খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, মুক্তিপণ, চাঁদাবাজি বন্ধ কর, করতে হবে। সকল অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে যৌথবাহিনী দ্বারা বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে। লংগদুতে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও পুলিশী হয়রানি বন্ধ করতে হবে এবং গ্রেফতারকৃতদের নিঃশর্তে মুক্তি দিতে হবে।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031