বাহাত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফেরার পর ১৯৭৫ এর ১৫ অগাস্ট পর্যন্ত তার প্রায় প্রতিটি কাজের সমালোচনা করা হয়েছে মন্তব্য করে বঙ্গবন্ধুকন্যা হাসিনা বলেন, সদ্যস্বাধীন দেশের পুনর্গঠনে যে সময় তাকে দেওয়া প্রয়োজন ছিল তা দেওয়া হয়নি।
“সেই ৭২ সালে ফিরে আসার পর থেকে যারা সমালোচনা, সমালোচনা, লেখা … আমার এখন মাঝে মাঝে মনে হয়, এই লেখালেখি, সমালোচনার মধ্য দিয়ে ১৫ অগাস্ট… পঁচাত্তরের ঘটনা ঘটাবার, যেন একটা সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া।”
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাদেশে ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নামে হত্যাযজ্ঞ শুরু করার পর বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
ওই রাতেই তাকে আটক করে পাকিস্তানি বাহিনী। মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় তিনি পাকিস্তানে বন্দি ছিলেন।
একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব তুলে নেন বঙ্গবন্ধু।
কিন্তু মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্ট সপরিবারে হত্যা করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতিকে। সে সময় দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরই বাংলাদেশের রাজনীতি এবং রাষ্ট্রক্ষমতায় স্বাধীনতাবিরোধীদের পদচারণা শুরু হয়।
“আর স্বাধীনতাবিরোধীদের ক্ষমতায় আসার সোপান তৈরি করে দিয়েছিল… যারা তখন তীব্র সমালোচনা আর লেখালেখি করেছিলেন।”
প্রধানমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন, জাতিসংঘে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী শাহ আজিজুর রহমানকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী করেছিলেন জিয়াউর রহমান। যুদ্ধাপরাধী আব্দুল আলিমকে বানিয়েছিলেন মন্ত্রী।
সামরিক অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করে বিচার বন্ধ এবং কারাগারে বন্দি যুদ্ধাপরাধীদের মুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল জিয়ার সময়ে।
সেই সঙ্গে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি পুনরায় চালুর ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন জিয়া।
পঁচাত্তরের ঘটনার আগে যারা বঙ্গবন্ধুর সমালোচনা করেছিলেন, তাদের বোধশক্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী।
“তাদের বোধশক্তির এই অভাবটা আমার কাছে মনে হয় সত্যিই দুঃখজনক ব্যাপার। আজকে যারা বেঁচে আছেন, তারা হয়ত উপলব্ধি করতে পারছেন, কত ভুল চিন্তা তাদের ছিল।”
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডকে প্রাথমিকভাবে কেউ কেউ কেবল ‘একটি পরিবারের ওপর আঘাত’ বলে ভেবে থাকতে পারেন।
“কিন্তু দিনের পর দিন যখন গেছে, তখন অনেকেই উপলব্ধি করেছেন, এটা কোনো পরিবারের ওপর আঘাত ছিল না… ক্ষমতা দখলের জন্য ছিল না। এটা ছিল একটা চেতনাকে ধ্বংস করা, মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে নস্যাৎ করা।
“আরও বেশি করে সকলের কাছে প্রমাণিত হল; যখন তেসরা নভেম্বর কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হল।”
তখনকার রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর তার ঘনিষ্ঠ চার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়।
পরবর্তী অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ক্যু-পাল্টা ক্যু’র ধূম্রজালের মধ্যে ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে হত্যা করা হয়।
রাষ্ট্রের হেফাজতে নজিরবিহীন হত্যাকাণ্ডের ওই দিনটি ‘জেল হত্যা দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে বাংলাদেশে।