শিরোনাম
প্রচ্ছদ / অন্যান্য / মামলার জট নিয়ে বিজ্ঞ বিচারকগণ এখন জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছে ——- জেলা ও দায়রা জজ মোঃ শফিকুর রহমান আইন মানুষকে নিরাপদ ও শান্তিতে রাখে; আমরা কেউ আইনের উর্দ্ধে নই ———বেগম ইয়াছমীন সুলতানা

মামলার জট নিয়ে বিজ্ঞ বিচারকগণ এখন জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছে ——- জেলা ও দায়রা জজ মোঃ শফিকুর রহমান আইন মানুষকে নিরাপদ ও শান্তিতে রাখে; আমরা কেউ আইনের উর্দ্ধে নই ———বেগম ইয়াছমীন সুলতানা

মামলার জট নিয়ে বিজ্ঞ বিচারকগণ এখন জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছে
——- জেলা ও দায়রা জজ মোঃ শফিকুর রহমান
আইন মানুষকে নিরাপদ ও শান্তিতে রাখে; আমরা কেউ আইনের উর্দ্ধে নই
———বেগম ইয়াছমীন সুলতানা
॥ সেলিম চৌধুরী/আমিনুল ইসলাম বাচ্চু ॥
বান্দরবান জেলা ও দায়রা জজ মোঃ শফিকুর রহমান বলেছেন, সমাজে আমরা সকলে কোলাহলমুক্ত ভাবে সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব নিয়ে বসবাস করতে চাই। মামলা মোকদ্দোমা কারো কাম্য হতে পারেনা। তিনি বলেন, বিপদে না পড়লে কোন ব্যক্তি আদালতে আসতে চায় না। গতকাল জেলা আইনজীবি সমিতির সম্মেলন কক্ষে “আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০০০” এবং “আইনী পরামর্শ ও বিকল্প বিরোধ নিস্পক্তি বিধিমালা ২০১৫” বিষয়ে নারী প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে আয়োজিত কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মীর মোঃ এমতাজুল হক,যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মোঃ জসীম উদ্দিন বিশেষ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। জেলা দায়রা জজের সহধর্মীনি বেগম ইয়াছমীন সুলতানা,ইউমেন চেম্বার অব কমার্স এর চেয়ারম্যান লালসানি লুসাই, জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মেনিপ্রু,জেলা মহিলা ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সীমা দাস এবং নারী নেত্রী উম্মে কুলসুম লীনা,সাংস্কৃতিক কর্মী চিংচিংপ্রু ও হোসনে আরা শিরিন বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন, লিগ্যাল এইড অফিসার ও প্রকল্প সমন্বয়কারী বশির আহম্মদ মনি।
জেলা জজ বলেন, বিচার ব্যবস্থাকে একটু সহজ ও সুন্দর এবং নারী বান্ধব করতে সরকার ২০০০ সালে এ আইনটি পাশ করেছে। তিনি বলেন, এ আইনের বিধান থাকলেও গত ১৪ বছর ধরে এর সঠিক কোন প্রয়োগ হয়নি। ফলে মাত্র ২০% মানুষ এ আইনের সুফল ভোগ করতে পেরেছেন। তাঁর ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় এপর্যন্ত ৫৫০টি মামলা লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে নিস্পক্তি করা সম্ভব হয়েছে বলে জেলা জজ উল্লেখ করেন।
মোঃ শফিকুর রহমান বলেন, অর্থের অভাবে যারা মামলা পরিচালনা করতে পারেন না তাদের বিনাখরচে আইনী সহায়তা দিতেই এই আইন পাশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিচারক স্বল্পতার কারণে সারা দেশে প্রায় ২৮ লক্ষ মামলা নিয়ে আদালত নিজেই জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছে। তিনি বান্দরবানের নারী সমাজের নেতৃত্ব বিকাশে প্রশংসনীয় ভ’মিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, বান্দরবানে নারী সমাজ সবক্ষেত্রে সোচ্চার আছে। তিনি বলেন,সামাজিক ভাবে আপোষ মীমাংসার উর্দ্ধে কোন বিচার নেই। আদালতের চাপ কমাতে সামাজিক ন্যায় বিচারের গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে জেলা ও দায়রা জজ বলেন, আদালতে মামলার রায় হয় ঠিকই কিন্তু এতে শান্তি আসে না। তিনি বলেন,সামাজিক ভাবে আপোষকরা মামলায় উভয়পক্ষের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি করে। তিনি উপজেলা পর্যায়ের লিগ্যাল এইড কমিটির কাজে গতিশীলতা আনা হচ্ছে উল্লেখ করে বলেন,আগামী ডিসেম্বরে অবসরকালীন ছুটির সময় উপজেলা লিগ্যাল এইড কমিটিকে আরো সক্রিয় করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। জেলা জজ বলেন, লিগ্যাল এইডের বান্দরবানের পারফরমেন্স সর্বমহলে প্রশংসীত হয়েছে। তাই বান্দরবান মডেলকে এখন রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগামী জানুয়ারী থেকে অপর দুই পার্বত্য জেলায় লিগ্যাল এইডের কার্যক্রম শুরু হচ্ছে উল্লেখ করে জেলা জজ বলেন, ইউএনডিপির অর্থায়নে পরিচালিত এ আইন সহায়তা কর্মসূচির আওতায় নারী সমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার নাগরিকদের নিয়ে ১৪টি কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। সকলের প্রাণবন্ত সহযোগিতায় প্রতিটি কর্মশালা সফল ভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে বলে তিনি জানান। বাংলাদেশে থাকতে হলে দেশের প্রচলিত আইন মানতে হবে উল্লেখ করে জেলা জজ বলেন, আইন মানুষের কল্যাণ ও সুখ নিশ্চিত করে। তিনি বলেন, পৃথিবীর সবচে বড় ধর্ম হলো মানুষের সেবা ও কল্যাণ নিশ্চিত করা। সৃষ্টিকর্তার প্রতিটি জীবের প্রতি সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা। তিনি বলেন, একটি এলাকার পরিবেশ, পরিস্থিতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থা,ভৌগলিক অবস্থানসহ সার্বিক বিষয়কে মাথায় রেখেই বিচারকের আসনে বসতে হবে। তিনি বলেন, বান্দরবানের জনগণ খুবই সহজ সরল। তারা আদালতে কখনোই মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করেন না। বাদী বিবাদী ও স্বাক্ষী সবাই অপকটে সত্য প্রকাশ করে আদালতের বিচার কাজে সহযোগিতা করে থাকেন। দেশের কোথাও এরকম সহযোগিতা পাওয়া যায় না বলে জেলা জজ শফিকুর রহমান উল্লেখ করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা ও দায়রা জজের সহধর্মীনি বেগম ইয়াছমীন সুলতানা বলেছেন, আইন সবার জন্যই প্রযোজ্য। জজ,ব্যারিষ্টার থেকে শুরু করে দেশের সর্বোচ্চ পদে আসীন এমন কোন ব্যক্তিই আইনের উর্দ্ধে নন। তিনি বলেন,আইন মানুষকে নিরাপদ ও শান্তিতে রাখে। ইয়াছমীন সুলতানা বলেন, সুবিধা বঞ্চিত জনগণ যাতে বিনা খরচে আইনের সুফল পান এজন্য সবাইকে সুসংগঠিত করতে হবে। তিনি বলেন, তৃণমুল পর্যায়ে লিগ্যাল এইডের সুবিধার কথা আরো বেশি করে প্রচার করতে হবে। তিনি বলেন, নারী সমাজকে একত্রিত করার মাধ্যমে আইনের সুফল সকলের জন্য নিশ্চিত করা গেলেই সমাজে সুখ শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখা সম্ভব হবে। কর্মশালায় সাংবাদিকসহ নারী সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের নেত্রী, নারী শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক সংগঠকগণ অংশগ্রহণ করেন। কর্মশালার কয়েকটি স্লোগান সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। স্লোগান গুলো হলো ঃ “গবীবের মামলার ভার,বহন করবে সরকার”।“বিচার পাওয়ার অধিকার,পাহাড়-সমতলে আছে সবার”।“সামাজিকভাবে বিরোধ নিস্পত্তি বাড়ান,আদালতের মামলার চাপ কমান”। উল্লেখ্য ইউএনডিপির অর্থায়নে সীড ফান্ড প্রকল্পের মাধ্যমে এই কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। কর্মশালায় সরকারি খরচে আইনী সহায়তা বিষয়ক তথ্যের জন্য ০৩৬১-৬৩৩৫৩ এবং ০১৯২১১২১৩৪৪ এ নম্বরে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

পড়ে দেখুন

সংস্কারের মধ্যেই আছে র‌্যাব: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

ঢাকা: নবনিযুক্ত মহাপরিচালক (ডিজি) এম খুরশীদ হোসেন বিশেষায়িত বাহিনী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সংস্কারের কোনো …