ভুয়া সেনা অফিসার বিভাষ দেওয়ানের ফাঁদে ওরা ১৫জন
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
গত বৃহস্পতিবার বরকলে যে ১২ জনকে আটক করা হয় তার মধ্যে অন্যতম বিভাষ দেওয়ান। বাড়ি রাঙ্গামাটি শহরের উত্তর কালিন্দীপুর বিজন সারণী এলাকায়। বিভাষ দেওয়ান সব সময় নিজেকে সেনাবাহিনীর অফিসার পরিচয় দিয়ে বেড়াতেন।
নিজেকে কখনও সেনাবাহিনীর সেকেন্ড লেফট্যানেন্ট কখনও লেফট্যানেন্ট পরিচয় দেয়। এলাকার মানুষ বিভাষের সেনা পদবী না জানলেও তাকে সেনাবাহিনী হিসেবে জানে।
তার পোষাক আষাক, চুল কাটার ধরণ, চলন বলন সবই করতেন সেনা অফিসারের মত। সময় সুযোগে সেনা পোষাক পড়তেন।
গত বৃহস্পতিবার বিজিবির হাতে তারা আটকের পর বিভাষের সাথে থাকা ১১ জন ছাড়াও স্থানীয়দের আত্মবিশ্বাস ছিল বিভাষ দেওয়ান নিজের ক্ষমতাবলে নিজেকেসহ বাকী ১১ জনকে বিজিবি হতে ছাড়িয়ে আনবে। কিন্তু বিজিবির ২৪ ঘন্টার অধিক অনুসন্ধানে নিশ্চিত হয় বিভাষ সেনা অফিসার নয়। তিনি এতদিন সেনাবাহিনীর নাম ব্যবহার মানুষের সাথে প্রতারণা করেছে।
গোয়েন্দা সূত্রগুলোর তথ্যমতে বিভাষ নিজেকে সেনা অফিসার পরিচয় দিয়ে মানুষের সাথে প্রতারণা করতেন। রাঙ্গামাটি শহরের বিভাষের বাড়িতে তল্লাশী করে ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়েছে। তার ব্যবহৃত ক্যামরাসহ গুরুত্বপূর্ণ জিনিস পাওয়া গেছে। তার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট তথ্য অনুসারে জানা যায় বিভাষের পিতার নাম ডা. বিনয় কৃঞ্চ দেওয়ান। তিনি চাকুরী থেকে অবসরে গেছেন। বিজিবির হাতে আটক বিভাষ দেওয়ান পিতা মাতার পালক সন্তান। সে চট্টগ্রামের পড়াশুনা করেন। এইচএসসি পাস করার পর থেকে সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট পরিচয় দিয়ে বেড়াতেন। একদিকে বাইরে পড়াশুনা অন্যদিকে সেনাবাহিনীর পরিচয় সবকিছু মিলে স্থানীয়রা সত্যিই মনে করতেন বিভাষ আসলে সেনাবাহিনীতে চাকুরী করেন।
মোবাইলে বিভাষের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হলে বিভাষ আসলে সেনাবাহিনী চাকুরী করে কিনা তার সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। তার মা কনিকা দেওয়ান বলেন, বিভাষ পরীক্ষার খারাপের পর মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। সে অনেকদিন ধরে চাকুরী খুঁজেছিল। আসলে তিনি সেনাবাহিনীর চাকুরী করে কিনা সেটিও আমার জানা নেই। তার পছন্দ ছিল সেনাবাহিনীতে চাকুরী করা।
উল্লেখ্য গত বিহস্পতিবা বেলা ১২টার দিকে তাঁদের আটক করা হয়। এর আগে আটক ১২জনের দলটি বরকলের শীর্ষ পাহাড় এসএস (শহীদ সাত্তার) টিলা যা ফালিটাঙ্যা মোন পরিচিত এই পাহাড়ে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তাঁদের দলের বিভাষ দেওয়ান ফালিটাঙ্যা মোনের বিজিবি ক্যাম্পে গিয়ে নিজেকে সেনাবাহিনীর লেফট্যানেন্ট পরিচয় দেয়। এই পরিচয়ের কারণে বিজিবির সদস্যরা সেখানে যত সাধ্য তাঁদের আপ্যায়ন করেন। তবে ভূয়া সেনা কর্মকর্তার কথাবার্তায় সন্দেহ হয়ে বরকলের বিজিবিকে খবর দেন।
১২ জনের দলটি পাহাড় থেকে নেমে আসলে বরকল সদরের বিজিবি চেকপোষ্ট এলাকাটি তাঁরা বিচ্ছিন্নভাবে পার হচ্ছিলেন। এতে বিজিবির আরো সন্দেহ বাড়ে। তাছাড়া যিনি নিজেকে সেনা অফিসার পরিচয় দিয়েছিলেন সংশিষ্ট দপ্তরে খবর নিয়ে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এজন্য তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। আটকদের মধ্যে বিভাস দেওয়ানের কাছ থেকে সেনাবাহিনীর একটি পোষাক পাওয়া গেছে। এছাড়া তাঁদের কাছ থেকে একাধিক ক্যামেরাও রয়েছে। যা বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হতো।