বান্দরবানে সাংগ্রাই উৎসব পানি বর্ষনসহ নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে
মোঃ শাফায়েত হোসেন,বান্দরবান ॥
বান্দরবানে সাংগ্রাই উৎসবে বুদ্ধ মূতি ¯œান এবং মৈত্রী পানি বর্ষনসহ নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে পুরানো বছরকে বিদায় এবং নতুন বছরকে বরণ করে নিলেন ক্ষদ্র নৃ-গোষ্টী সম্প্রদায়।তাদের এই বছরের প্রতিবাদ্য ছিল ‘নতুন আশা আজ নব প্রভাতে,শিশু-নারীসহ সকলে থাকুক শান্তিতে,বন্ধ হোক যত সহিংসতা,মৈত্রীময় স্নিগ্ধ ছোঁয়ায় আসুক শুভ্রতা’ উৎসবকে ঘিরে বিনোদন মুলক নানা কর্মসুচী পালিত হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী। ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির অংশ গ্রহনে বর্ণাঢ্য র্যালী,বুদ্ধ মুর্তি ¯œান,হাজার বাতি প্রজ্জলন,ধর্মীয় উপাসনা,নানা ধরনের বিনোদন মুলক খেলা,সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মৈত্রী পানি বর্ষন এবং জেলার বিভিন্ন স্থানের স্থানীয় ক্ষদ্র নৃ-গোষ্টী শিল্পীদের সাংগ্রাই-মা ঞি-ঞি ঞা-ঞা রি ক্যাজাই কা-পা-মে” মারমা গানের মন-মাতানো সুরে এবং নানা বয়সী নারী-পুরুষের আনন্দ ও উচ্ছাসের মধ্যে দিয়ে উৎসবটি শেষ হয়েছে।
এদিকে পাহাড়ে বসবাসরত ১১টি ক্ষদ্র ন-গোষ্ঠির মধ্যে মারমা,মুরং,চাকমা,ত্রিপুরা,তংচংঙ্গ্যা পৃথক ভাবে নিজ সম্প্রদায়ের কৃষ্টি ও ঐতিহ্যকে ধারণ করে উৎসবটি উদযাপন করে আসছে আদিকাল থেকে।চাকমা,তংচংঙ্গ্যা,ত্রিপুরা এবং মুরং সম্প্রদায় বাংলা বর্ষবরনের আগে বিজু,বৈসু-বৈসুক এবং চাংক্রান হিসেবে নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মহা আনন্দে উদযাপন করে থাকেন। তংচংঙ্গ্যাদের ঘিলা খেলা পুরানো ঐতিহ্য বহন করে এবং প্রতি বছর ২দিন ব্যাপী ঘিলা খেলার আয়োজন করে থাকে তংচংঙ্গ্যা সম্প্রদায়। এই খেলায় তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা তরুণ তরুনীরা দল বেঁধে অংশ নেয়।মারমা সম্প্রদায় মৈত্রীময় পানি বর্ষনের মাধ্যমে অতীতের সকল দুঃখ,জরা, গ্লানী,পাপ ধুয়ে মুছে সুখ সমৃদ্ধির প্রত্যাশা নিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে। এই উৎসবে সবাই নিজেকে পবিত্র করে রাখার জন্য শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সকল বয়সের নারী-পুরুষ ধর্ম দেশনা শুনতে ভীড় জমান বৌদ্ধ বিহার গুলোতে। এসময় পিন্ড দান,বুদ্ধ পুজা,প্রদীপ পুজাসহ ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠান পালন করেন বৌদ্ধরা। এছাড়াও মারমা সম্প্রদায় বৌদ্ধ ধর্মীয় প্রবক্তা গৌতম বুদ্ধের মুর্তি ¯œান অনুষ্ঠান পালন করেন। প্রচন্ড গরমের মধ্যে মারমা নারী-পুরুষ খালি পায়ে সারিবদ্ধভাবে হেটে ৩ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে সাঙ্গু নদীর পাড়ে জড়ো হয়ে চন্দন কাঠের পানি দিয়ে বুদ্ধের মুর্তি গুলো ¯œান করান এবং বুদ্ধ মূতি ¯œান করিয়ে মহা পূণ্য অর্জনের জন্য পুরানো বছরের সকল দুঃখ,গ্লানি মুছে নতুন বছরকে বরণ করে নেন।
অন্যদিকে সাংগ্রাই উদযাপন কমিটির সভাপতি মংসি নু মার্মা জানান,বান্দরবানে সকল সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই উৎসব মিলেমিসে এবং শান্তিপুন ভাবে উপভোগ করেন।পাহাড়ী-বাঙ্গালী মিলেমিসে আনন্দ করছে।কারন বান্দরবান একটি সম্প্রীতির জেলা।এবারে ৫দিন ব্যাপী সাংগ্রাই উৎসবের ব্যাপক আয়োজন করা হয়েছি।এতে সকল সংগঠন ও প্রশাসন থেকে সব ধরনে সহযোগিতা পাওয়া গেছে। তার মতে,সাংগ্রাই উৎসবে পার্বত্য গ্রামের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতি স্বত্তা সমূহ নিজস্ব সামাজিক ঐতিহ্য নিয়ে সম¦িতভাবে উৎসব পালন করে থাকে প্রতি বছর।ত্রিপুরা সম্প্রদায় এই উৎসবকে বৈসু,মারমা সম্প্র্রদায়ের সাংগ্রাইং ও চাকমারা বিজু নামে এই উৎসবটি আদিকাল থেকে পালন করে আসছে। পাহাড়ীদের পুরাতন বছরকে বিদায় এবং নতুন বছরকে বরণের জন্য মূলত এই উৎসব। পুরাতন বছরের সব গ্লানী,দুঃখ,বেদনা ধুয়ে মুছে নতুন বছর যাতে সুন্দর এবং সাচ্ছন্দময় হয় তারজন্যই সব প্রয়াস।সাংগ্রাই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী পানি খেলা।তরুণ-তরুণীরা একে অপরের প্রতি পানি ছুড়েমেরে পুরাতন গ্লানী ধুয়ে ফেলে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়।এছাড়াও সাংগ্রাই র্যালী,ঘিলা খেলা এবং বুদ্ধ ক্যাংয়ে বুদ্ধ পুজা,জলকেলী বা ওয়াটার ফেস্টিবল,সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই উৎসব শেষ হয়। এছাড়াও সাংগ্রাই উৎসবের রাজার মাঠে পানি বর্ষনে পাহাড়ী বাঙ্গালীর মিলন মেলায় পরিণত হয় এবং পিঠা উৎসব ও মৈত্রী পানি খেলা দেখতে বিপুল সংখ্যক দেশি-বিদেশী পর্যটক ভিড় জমিয়েছে বান্দরবানে।
স্থানীয় রাজার মাঠে শনিবার সমাপনি দিনে মৈত্রী পানি খেলা আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে সাংগ্রাই উৎসব শেষ হয়েছে।সমাপনি অনুষ্টানে পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।অন্যান্যদের মধ্যে সেনা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান,জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক,পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান,পৌর সভার মেয়র ইসলাম বেবী,পরিষদ সদস্য লক্ষ্মী পদ দাশসহ সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের শত শত তরুন-তরুনীরা এবং স্থানীয় ক্ষদ্র নৃ-গোষ্টী’র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।