রিজার্ভ বাজারের আবাসিক হোটেল গুলোতে
অভিযান আটক-৬, আল হেলাল বোর্ডিং ভাংচুর
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
রাঙ্গামাটির শহরের বাণিজ্যিক এলাকা রিজার্ভ বাজারের বেশকিছু আবাসিক হোটেলে অভিযান চালিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপের দায়ে ৬জন মহিলাকে হাতেনাতে ধরে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছে এলাকাবাসী।
গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর মুসল্লিরা বাজারের বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেলে অভিযান চালিয়ে এই ৬ মহিলাকে আটক করে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে তাদের ধরে নিয়ে যায়। এ সময় স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা উত্তেজিত হয়ে রিজার্ভ বাজার জামে মসজিদের সামনে অবস্থিত আল হেলাল বোর্ডিংয়ে ভাংচুর চালায়। এই ঘটনার পর অসামাজিক কার্যকলাপের দায়ে হোটেল আল হেলাল সিলগালা করে দেন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ আকতারুজ্জামান।
জানা গেছে, বেশ কিছুদিন আগে থেকে অসামাজিক কার্যকলাপ না চালাতে রিজার্ভ বাজারের আবাসিক হোটেল মালিকদের এলাকাবাসী পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও এলাকাবাসীর কথা না শুনে তারা অসামাজিক কার্যকলাপ চালাতে থাকে। এতে এলাকাবাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে দুপুরে জুমার নামাজের পর মুসল্লিরা অভিযানে নামে।
এদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ দীর্ঘদিন থেকে রিজার্ভ বাজারের বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেলে অসামাজিক কার্যকলাপ তথা দেহ ব্যবসা ও মাদকের ব্যবহার চালিয়ে আসছে। যা এলাকার যুব সমাজ ও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বার বার তাগিদ দেয়ার পরও হোটেল ব্যবসায়ীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। প্রশাসন এ ব্যাপারে উদ্যোগ না নেয়ায় ক্ষোভ জানানোর পাশাপাশি বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে এলাকাবাসী ও স্থানীয়রা ব্যবসায়ীরা।
অন্যদিকে হোটেল আল হেলাল সিলগালা করে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আকতারুজ্জামান অপর হোটেল ষ্টার এ যান। এসময় হোটেলটি থেকে আটক হওয়ার দুই নারী হোটেলে বর্ডার জানিয়ে ম্যাজিষ্ট্রেটকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চালায় কয়েকজন ব্যবসায়ি নেতা। পরে ম্যাজিষ্ট্রেট ঘটনাস্থলে গিয়ে সরেজমিনে দেখে ব্যবস্থা নিবেন বলে ব্যবসায়ি নেতাদেরকে তার সাথে থাকতে বলেন। পরে হোটেল ষ্টার এর রেজিষ্টার খাতার তথ্যের সাথে স্থানীয় অপর বর্ডারদের দেওয়া তথ্যের মিল না থাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী ম্যাজিষ্ট্রেট মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে বোর্ডিংয়ের ম্যানেজারকে আটক করাসহ আটককৃত দুই নারীর বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজুর জন্য কোতয়ালী থানা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করেন। এছাড়া হোটেলটির যে কক্ষে দুইনারী থাকতো সেই দুইটি কক্ষে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের উপস্থিতিতে তল্লাসী চারিয়ে ইয়াবা খাওয়ার সরঞ্জাম ও যৌন উত্তেজক জিংসেন সিরাপের একটি বোতল উদ্ধার করের পুলিশ। এসময় সুপারিশকারী ব্যবসায়ি নেতারা নিজেদেরকে বাঁচাতে ঘটনাস্থল থেকে সড়ে পড়ে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার রিজার্ভ বাজার জামে মসজিদে জুমার নামাজ শেষ হলে স্থানীয়দের একটি দল অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ এনে মসজিদের সামনে আল হেলাল বোর্ডিং ও মসজিদের দুই পার্শ্বের হোটেল লেক সিটি, হোটেল আল ফারুক, হোটেল হিল সিটি, হোটেল প্রবাসীসহ আরো কয়েকটি হোটেলে হানা দিয়ে তল্লাশী করে। এ সময় স্থানীয়রা হোটেল আল হেলাল থেকে চার জন ও হোটেল ষ্টার থেকে দুইজন মহিলাকে আটক করে।
পরে খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ শহিদুল্লাহ, সার্কেল এএসপি চিত্তরঞ্জন পাল কোতয়ালী থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই লিমন বোস ও এসআই ইউসুফ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এ সময় আল হেলাল বোডিং এর মালিক মোঃ আবুল কাশেম ও ম্যানেজার এবং হোটেল প্রবাসীর মালিক ও ম্যানেজার পালিয়ে যায়।
১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও রিজার্ভ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ হেলাল উদ্দিন জানান, আবাসিক হোটেলে অসামাজিক কার্যক্রমের প্রতিবাদে স্থানীয় যুব সমাজ জুমার নামাজের পর দলবেধে অভিযান চালায় এবং এসময় তাদের হাতেনাতে ধরা হয়। এলাকাবাসী পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট হোটেল মালিকদের একাধিকবার সতর্ক করা হয়েছে বলে তিনি জানান। এই বিষয়ে আবারো হোটেল ব্যবসায়িদের সাথে বৈঠক করা হবে বলেও জানান তিনি। এদিকে এই ঘটনায় রিজার্ভ বাজার ব্যবসায়ি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর হেলাল উদ্দিন বাদী হয়ে হোটেল আল হেলালের বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলে জানান তিনি।
রিজার্ভ বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, রিজার্ভ বাজার এলাকায় কিছু অসাধু হোটেল ব্যবসায়ী হোটেল ব্যবসার নামে অসামাজিক ও অনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে এলাকার পরিবেশ নষ্ট করছে এবং বাজারের সুনাম ক্ষুন্ন করছে। কিন্তু এ বিষয়ে হোটেল মালিক সমিতি বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাই এলাকাবাসী শুক্রবার জুমার নামাজের শেষে আবাসিক হোটেলে তল্লাসী চালায়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ শহিদুল্লাহ জানান, মসজিদের সামনে একটি আবাসিক হোটেলে অসামাজিক কার্যকলাপ চলে এমন অভিযোগ শুনে শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে কিছু মুসল্লিরা ঐ হোটেলে ঢুকতে চাইলে হোটেল ব্যবসায়ীর সাথে বাকবিতন্ডা হয়। এ ঘটনার পর পরই পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রনে আসে বলে তিনি জানান। পরে দুটি হোটেল থেকে ছয়জন মহিলাকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের ও অভিযুক্ত হোটেল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, ১২ মার্চ রিজার্ভ বাজারের হোটেল হিল সিটি থেকে এক অজ্ঞাত নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় হোটেল ম্যানেজারসহ আসামীরা আটক রয়েছে এবং স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। গত বছরের ১৫ মে পাশের হোটেল লেক সিটির একটি কক্ষ থেকে আরেক মহিলার লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে হোটেল পাহাড়িকার রুমের মধ্যে বেড়াতে আসা তরুনীকে ধর্ষন করে হত্যার চেষ্ঠা করে কয়েকজন বখাটে। এই ঘটনায় হোটেলটি জেলা প্রশাসন থেকে সিলগালা করে দেওয়া হয়েছিলো।