২৭১ কোটি ডলারের উদ্বৃত্ত
বাংলাদেশ ব্যাংক বুধবার লেনদেন ভারসাম্য বা ব্যালান্স অব পেমেন্টের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে অর্থাৎ জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে ২৭১ কোটি (২.৭১ বিলিয়ন) ডলারের উদ্বৃত্ত রয়েছে।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের পড়তি দামের সঙ্গে খাদ্যপণ্যের আমদানি ব্যয় কমতে থাকায় ঘাটতি বাণিজ্যের বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই উদ্বৃত্তের দেখা মিলেছে বলে মনে করছেন অর্থনীতির গবেষক জায়েদ বখত।
অর্থবছরের বাকি তিন মাসেও উদ্বৃত্তের এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যাশা করছেন তিনি।
১৬৫ কোটি ডলারের বড় ঘাটতি (ঋণাত্মক) নিয়ে শেষ হয়েছিল গত ২০১৪-১৫ অর্থবছর।
এই হিসাবে চলতি অর্থবছর সরকারের জন্য বেশ ‘স্বস্তির মধ্যেই’ শেষ হবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান- বিআইডিএসের গবেষক জায়েদ বখত।
“বিশ্ববাজারে জ্বলানি তেল ও খাদ্যপণ্যের দাম কমায় বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় কমেছে। পাশাপাশি বেড়েছে রপ্তানি আয়। এ কারণেই ‘স্বস্তিদায়ক’ এই উদ্বৃত্তি।”
নিয়মিত আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য আয়-ব্যয় চলতি হিসাবের অন্তর্ভুক্ত। এই হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হল, নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম সহসা ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার আভাস না থাকায় পরিস্থিতি বাংলাদেশের অনুকূলে থাকবে বলেই বিআইডিএসের এই গবেষকের ধারণা।
“এসব বিবেচনায় আমদানি ব্যয় খুব বেশি বাড়বে বলে মনে হয় না। রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা গেলে চলতি অর্থবছর শেষেও লেনদেন ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত থাকতে পারে।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ দুই হাজার ৫৬৩ কোটি ৩৪ লাখ (২৫.৬৩ বিলিয়ন) ডলার ব্যয় করেছে। এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেশি।
এই আট মাসে জ্বালানি তেল আমদানির জন্য ১৪৬ কোটি ৮১ লাখ ডলারের এলসি (ঋণপত্র) খোলা হয়েছে; যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪০ দশমিক ৪৮ শতাংশ কম।
২০১৪-১৫ অর্থবছরের এই আট মাসে তেল আমদানির জন্য ২৪৬ কোটি ৬৭ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল।
এবার জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে খাদ্যপণ্য (চাল ও গম) আমদানির এলসি খোলার পরিমাণ কমেছে ৩৩ দশমিক ৫২ শতাংশ।
তবে শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি বেড়েছে ১১ শতাংশ। শিল্পের কাঁচামাল আমদানির এলসি বেড়েছে ২ দশমিক ৫১ শতাংশ।
রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহের নয় মাসের অর্থাৎ মার্চ পর্যন্ত তথ্য পাওয়া গেছে।
তাতে দেখা যায়, এই নয় মাসে রপ্তানি আয় ৯ শতাংশ বেড়েছে। তবে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রায় ২ শতাংশ কমেছে।
বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে
জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে পণ্য বাণিজ্যে বাংলাদেশের ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০৫ কোটি ৮০ লাখ (৪ দশমিক ০৬ বিলিয়ন) ডলারের। এটা গত বছরের একই সময়ের ঘাটতির চেয়ে ১ কোটি ১ লাখ ডলার কম।
২০১৪-১৫ অর্থবছরের এই আট মাসে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৪০৭ কোটি (৪ দশমিক ০৭ বিলিয়ন) ডলার।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে (এফওবিভিত্তিক, ইপিজেডসহ) সব মিলিয়ে ২ হাজার ৫৬৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার ব্যয় করেছে বাংলাদেশ।
আর পণ্য রপ্তানি থেকে (এফওবিভিত্তিক, ইপিজেডসহ) আয় হয়েছে ২ হাজার ১৫৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
এ হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ হচ্ছে ৪০৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
২০১৪-১৫ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে আমদানি খাতে ব্যয় হয় ২ হাজার ৪০৮ কোটি ২০ লাখ ডলার। রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ২ হাজার ১ কোটি ৩০ লাখ ডলার। ঘাটতি ছিল ৪০৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার।