অতিথি বেশে অভিযান!
স্যার, ভ্যাটবিহীন বিল ২ হাজার ২৬৯ টাকা। ভ্যাট দিতে হবে না? না স্যার, ভ্যাটের লোককে ম্যানেজ করা আছে, ভ্যাট দিতে হয় না।’
গত ৯ এপ্রিল মির্জা তারিকুল কাদির নামে এক ভোক্তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে এমন অভিযোগ করেন ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোডের নোম্যাডস রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে।
অবশেষে সম্প্রতি অতিথি বেশে মূসক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের কর্মকর্তারা অভিযান চালিয়েছে। ‘ম্যানেজ’ করে মূসক ফাঁকির চিত্র বেরিয়ে এসেছে। ভোক্তাকে দেয় না ইসিআর চালান। একমাত্র ইসিআর থাকলেও তা নষ্ট। মূসক ফাঁকি দিতে লুকিয়ে ফেলেন বিক্রয় হিসাব। রাখেন না রেকর্ড।
শুধু তাই নয়, রেস্টুরেন্টুটি ভোক্তাকে কোনো সময় ভ্যাট ছাড় হিসেবে দেখায়, কোনো সময় ভ্যাট চালান না দিয়ে নীল চালানে আদায় করে পকেটস্থ করে আসছে।
মঙ্গলবার(১০ মে) মূসক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী বাংলানিউজকে অভিযানের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, থাই সব খাবারের জন্য রেস্টুরেন্টটি ভোজন রসিকদের কাছে প্রিয়। সন্ধ্যার আগ থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভোক্তায় থাকে জমজমাট।
মির্জা তারেকুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন ভোক্তা অনলাইনে রেস্টুরেন্টটির বিরুদ্ধে ভ্যাট নিয়ে কারসাজির অভিযোগ করলে এ অভিযান চালানো হয়।
সোমবার (০৯ মে) ‘অতিথি বেশে’ মূসক গোয়েন্দার ১০ সদস্যের একটি টিম পাঠানো হয়। অতিথি পরায়নের মতো মূসক ফাঁকিতেও প্রতিষ্ঠানটি পটু।
অতিথি বেশে গোয়েন্দারা গেলেই স্বয়ং ম্যানেজার তাদের অভ্যর্থনা জানাতে ছুটে আসেন। শুরু করেন মেন্যু কার্ড নিয়ে দৌঁড়াদৌড়ি।
গোয়েন্দাদের তথ্য সহায়ক প্রশ্ন, ‘নোম্যাডসের নাম শুনেছি। দুপুর বেলা লোকজন কম কেন? ম্যানেজারের উত্তর, সন্ধ্যার পর জমে। আরেকদিন সন্ধ্যার পর আসেন।’
রেস্টুরেন্টের সাজগোজের কথা ম্যানেজারকে জিজ্ঞাসা করে পরিচয় দিলেন মূসক গোয়েন্দা। ততক্ষণে ম্যানেজার নির্বাক। এ আবার কেমন অতিথি! অতিথি নিয়ে ম্যানেজারের ঘোর কাটতে না কাটতেই গোয়েন্দারা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে রেস্তোঁরো আনাচে কানাচে অনুসন্ধান শুরু করলেন।
ভোক্তা থেকে ভ্যাট নেওয়া হয় না কেন প্রশ্ন করতেই স্মার্ট ম্যানেজারের উত্তর,‘ কাস্টমার দিতে চায় না, খাবারের দাম বেশি পড়লে চেঁচামেচি করে।’
ম্যানেজার বলেন, ‘আমরাতো ও ভ্যাট ভোক্তা থেকে আদায় করিনি!’ আইন আপনাকে আদায় করতে বলেছে, ছাড় দিতে নয়-বলেন গোয়েন্দারা।’
কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের এমন প্রশ্নে বিব্রত ম্যানেজার। মুখ লাল করে কাচুমাচু সুরে এড়িয়ে গেলেন ম্যানেজার। অভিযোগ রয়েছে, রেস্তোঁরাটি প্রতিদিন লাখ টাকার বেশি বিক্রি করলেও ভ্যাট দেয় না। ভ্যাট কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ করে’ রেকর্ড না রেখে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে আসছে।
অভিযানে গোয়েন্দারা দেখতে পায়, প্রতিষ্ঠানটি হিসাব সংরক্ষণে অনিচ্ছা। একমাত্র ইসিআর মেশিন নষ্ট। ভোক্তা ভ্যাট চালান চাইলে নীল চালান ধরিয়ে দেন। বাড়িভাড়ার চুক্তিপত্র সরিয়ে ফেলেছেন। রেস্তোঁরা ব্যবসায়িক দলিল জব্দ করা হয়েছে। মূসক ফাঁকি হিসাব করা হচ্ছে। মূসক ফাঁকির মামলা করা হবে বলে জানান তিনি।