অস্ত্র সংগ্রহে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরওএস’র হামলা

মিয়ানমারভিত্তিক কথিত বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে আনসার কমান্ডারকে হত্যা ও অস্ত্র লুট করেছে বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। নতুন উদ্যমে সংগঠিত হয়ে তৎপরতা আরও জোরদার করার জন্য অস্ত্র সংগ্রহ করতেই তারা এ হামলা চালিয়েছে। আর হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছে বর্তমানে মিয়ানমারে অবস্থান করা এক পাকিস্তানি নাগরিক।
সম্প্রতি হামলার সঙ্গে জড়িত নূরুল আবসার নামে এক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদেই পাওয়া গেছে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য। তবে নূরুল আবসারকে এখনও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হামলার মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো.শফিকুল ইসলাম লেন, আরএসও নামে যে সংগঠনটা আছে তাদের অস্ত্র সংগ্রহের জন্য এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার মূল হোতা, যে নেতৃত্ব দিয়েছে সে এখন মিয়ানমারে আছে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। তবে সে পাকিস্তানের নাগরিক। তদন্তের স্বার্থে আমরা এখন তার নাম বলতে পারব না।
গত ১৩ মে গভীর রাতে টেকনাফ উপজেলার মোচনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আনসার ব্যারাকে হামলার ঘটনা ঘটে। এসময় আনসারের ক্যাম্প কমান্ডারকে হত্যা করে ১১টি অস্ত্র ও ৬৭০ রাউন্ড গুলি লুট করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় টেকনাফ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।
টেকনাফ থানার ওসি মো. আব্দুল মজিদ বাংলানিউজকে বলেন, মামলা দায়েরের পর রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী হামিদ ও আল আমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তারা রিমান্ডে বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। তবে এই ঘটনায় হামিদ ও আল আমিনের বাইরে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। তদন্তে ফলপ্রসূ কোন অগ্রগতিও হয়নি।
সূত্রমতে, গত সপ্তাহে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আনসার ব্যারাকে হামলাকারীদের গ্রেফতার এবং প্রকৃত ঘটনা অনুসন্ধানে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে একটি টিম কক্সবাজারে পাঠানো হয়। ওই টিম অনুসন্ধান চালিয়ে নূরুল আবসারসহ চারজনের বিষয়ে নিশ্চিত হয়। এরপর চারজনকে আটক করে নিজেদের হেফাজতে নেয়। কঠোর গোপনীয়তায় চারজনকে অজ্ঞাত স্থানে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। এদের মধ্যে নূরুল আবসারের কাছ থেকে আনসার ব্যারাক থেকে লুন্ঠিত মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
তবে চারজনের মধ্যে শুধু নূরুল আবসারকে আটকের কথা বাংলানিউজের কাছে স্বীকার করেছেন ডি‌আইজি শফিকুল ইসলাম।
সূত্রমতে, অনুসন্ধান চালিয়ে হামলার বিষয়ে যে তথ্য পুলিশ পেয়েছে তা হল, ঘটনার রাতে মিয়ানমার থেকে আরএসও’র পাঁচজন সশস্ত্র সন্ত্রাসী নৌকায় করে নাফ নদী দিয়ে মোচনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কাছে আসে। এদের মধ্যে নেতৃত্বে ছিল উর্দুভাষী ওই পাকিস্তানি নাগরিক। হামলার আগে আরএসও সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যোগ দেয় ক্যাম্পের ৯ জন রোহিঙ্গা এবং ৬ জন বাংলাদেশি। তাদের পরিকল্পনা ছিল আনসার সদস্যদের বেঁধে রেখে অস্ত্রগুলো লুট করবে। কিন্তু শুরুতেই ক্যাম্প কমান্ডার জোরালোভাবে প্রতিরোধ শুরু করায় তাদের পরিকল্পনা পাল্টাতে হয়। তারা ক্যাম্প কমান্ডারকে হত্যা করে নৌকা নিয়ে মায়ানমারে ফিরে যায়। নদীতে জোয়ার থাকায় তাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া সহজ হয়।
ডি‌আইজি মো. শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‍হামলায় ২০ জনের মত অংশ নেয়। অস্ত্রসহ পাঁচজন মিয়ানমার থেকে এসেছিল। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কিছু লোক ছিল। কয়েকজন বাঙালিও ছিল।
‘আমরা যাকে গ্রেফতার করেছি সে অস্ত্র লুটের পর ভোর চারটার দিকে আরএসও’র পাঁচজনের সঙ্গে মিয়ানমারে চলে যায়। সেখানে একটি গোপন আস্তানায় অস্ত্রগুলো রেখে আবারও বাংলাদেশে ফিরে আসে। ’ বলেন ডিআইজি।
‘আমরা নিশ্চিত হয়েছি অস্ত্রগুলো আর বাংলাদেশের সীমানায় নেই। আমরা মিয়ানমার থেকে অস্ত্রগুলো উদ্ধারের চেষ্টা করছি। যদি আমাদের পক্ষে সম্ভব না হয় তাহলে দুইদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী এ বিষয়ে কথা বলবে। তখন মিয়ানমারকে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে আমাদের অস্ত্র ফেরত দেয়ার জন্য বলা হবে। ’ বলেন ডিআইজি।
গত কয়েক বছর ধরে সীমান্তে আরএসও’র তৎপরতা কম থাকলেও আনসার ব্যারাকে হামলা করে ক্যাম্প কমান্ডারকে হত্যা ও অস্ত্র লুটের মধ্য দিয়ে এই সন্ত্রাসী সংগঠনটি আবারও সহিংস উত্থানের বার্তা দিয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ।
আরএসও’র এই তৎপরতা বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশংকা করছেন মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক কূটনীতিক অবসরপ্রাপ্ত মেজর এমদাদুল ইসলাম।
‘এই ঘটনার সঙ্গে যদি সত্যিই আরএসও যুক্ত থাকে তাহলে বলতে হবে, অস্ত্র লুটের মাধ্যমে সংগঠনটি একটি সংকেত দিয়েছে। এখন তাদের বিষয়ে আমাদের সতর্ক হতে হবে। আর একটা বিষয় আরএসও’র এই তৎপরতা কিন্তু আমাদের সঙ্গে মিয়ানমারের ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করবে। পারস্পরিক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উপর হুমকি সৃষ্টি করবে। সুতরাং দু’দেশেরই উচিৎ আরএসওকে জোরালোভাবে প্রতিরোধ করা। ’ বলেন এমদাদ।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031