ফেনীর পরশুরাম উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এইচএম রকিব হায়দারকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক নেতা ও তার অনুসারিরা পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার শলিয়া এলাকায় নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের একটি অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খায়রুল বাসার তপনের নেতৃত্বে প্রকাশ্যে ইউএনওকে কিল-ঘুষি মারা হয়।
পরে গুরুতর অবস্থায় প্রথমে তাকে পরশুরাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে দুপুরে ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রকিব হায়দার অজ্ঞান রয়েছেন, অবস্থা স্থিতিশীল। সিটিস্ক্যানের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত কোনো কিছু বলা যাচ্ছে না।
এদিকে এ ঘটনার পর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিকালে পরশুরাম থানায় মামলা হয়েছে। মামলার পর ফেনীর গোয়ান্দা পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে।
তারা হলেন- পরশুরাম পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাবেক যুবলীগ সভাপতি ও বর্তমান শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক আবদুল মান্নান, স্থানীয় যুবলীগ নেতা পারভেজ ও রাশেদুল হাসান রাশু।
সূত্র জানায়, শুক্রবার সকালে পরশুরামের বিলোনীয়া স্থলবন্দর পরিদর্শনে যাচ্ছিলেন নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগ নেতা খায়রুল বাসার তপন মন্ত্রীকে শলিয়া এলাকায় নামানো চেষ্টা করেন।
তবে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এইচএম রকিব হায়দার মন্ত্রীকে নামাতে আপত্তি জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সবার সামনে ইউএনওকে কিল ও ঘুষি মারেন তপন ও তার নেতাকর্মীরা। এতে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন।
পরে রকিব হায়দারকে উদ্ধার করে পরশুরাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। সেখানে থেকে ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ফেনী সদর হাসপালের চিকিৎসক হাবিবুল করিম বলেছেন, ইউএনও মাথায় আঘাত পেয়েছেন। তিনি এখনও অজ্ঞান। সিটিস্ক্যানের রিপোর্ট না পেলে কিছু বলা যাবে না।
পরশুরাম উপজেলা অফিস সূত্র জানা গেছে, শুক্রবারের এ ঘটনার আগে গত বুধবার বিকালে উপজেলা পরিষদে নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের আগমন নিয়ে উপজেলা পরিষদে প্রস্তুতি সভা করা হয়।
সভায় উপজেলা চেয়ারম্য্যম কামাল মজুমদার, খায়রুল বাসার তপন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা ইউএনও’র কাছে মন্ত্রীর অনুষ্ঠানের খরচ বাবদ ৯ লাখ টাকা দাবি করেন। এজন্য কিছু ভুয়া প্রকল্পও দেখান ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
তবে ইউএনও এ টাকার যোগান দিতে আপত্তি জানান। এ নিয়ে কামাল মজুমদার ও তপনের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটিও হয়।
রকিব হায়দার পরশুরামে যোগদানের ১১ দিনের মাথায় স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের কথা না রাখার বিষয়টি ক্ষমতাসীন দলটির কর্মী-সমর্থকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি করে।
এছাড়া নতুন ইউএনও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের এডিপি, বিশেষ বরাদ্দ, টিআর, কাবিখাসহ বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দ না দেয়ায় মতবিরোধ দেখা দেয়।
তবে হামলার বিষয় অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ নেতা খায়রুল বাশার তপন বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে আমি কোনোভাবেই জড়িত নই। ইউএনও হামলার শিকার হয়েছেন শুনে আমি সেখানে তাকে দেখতে গিয়েছিলাম।’ তিনি উল্টো হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
এছাড়া হামলার বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল মজুমদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নৌ পরিবহনমন্ত্রীর সঙ্গে মিটিং আছেন বলে ফোন কেটে দেন।
পরশুরাম থানার ওসি আবুল কাশেম চৌধুরী ইউএনওকে মারধরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ফেনীর জেলা প্রশাসক মো. আমিনুল আহসান বলেন, হামলার ঘটনায় পরশুরাম থানায় শুক্রবার বিকালে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে বিষটি নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ও স্থানীয় এমপি শিরিন আখতারকে অবহিত করা হয়েছে।
কর্মতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসক মো. আমিন উল আহসান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সকালে বিলোনীয়া স্থলবন্দর পরিদর্শন ও একটি সমাবেশে অংশ নিতে পরশুরাম যাচ্ছিলেন নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। এ সময় মন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে ইউএনও রকিব হায়দার ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা ফেনী-পরশুরাম সড়কের ধনিকুণ্ড এলাকায় অপেক্ষা করছিলেন।
মন্ত্রী ঘটনাস্থলে আসার কিছুক্ষণ আগে ওখানে স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেন উদ্বোধন উপলক্ষে মন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে আওয়ামী লীগ নেতা তপনসহ নেতা-কর্মীরা প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ইউএনও ওই স্কুলের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তপনকে সম্মান না করার অভিযোগ তুলে তিনি ইউএনওর সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে তপন ও তার অনুসারীরা ইউএনওকে প্রকাশ্যে কিল-ঘুষি মেরে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন।
খবর পেয়ে প্রশানের কর্মকর্তারা ইউএনওকে উদ্ধার করে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় বলে জানান তিনি।