॥ নন্দন দেবনাথ ॥ কাপ্তাই হ্রদে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে বেড়েছে সরকারের রাজস্ব আদায়। চলতি ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে বিএফডিসি কাপ্তাই হ্রদ থেকে ৯ হাজার ৬শত মেট্রিকটন মাছ আহরণ করে সাড়ে ১০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় করেছে। কাপ্তাই হ্রদের মাছের প্রাকৃতিক প্রজননের সময় হ্রদের মাছ শিকার বন্ধ থাকায় এবং বিএফডিসি কর্মকর্তাদের আন্তরিকতা, ব্যবসায়ী ও জেলেদের আন্তরিকতার সাথে কাজ করায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আরো বেশী রাজস্ব আদায় হয়েছে বলে মত ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন-বিএফডিসি রাঙ্গামাটির প্রকল্প পরিচালক কমান্ডার মইনুল ইসলাম।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন-বিএফডিসি রাঙ্গামাটির প্রকল্প পরিচালক কমান্ডার মইনুল ইসলাম জানান অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় চলতি ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে বিএফডিসি কাপ্তাই হ্রদ থেকে ৯ হাজার ৬শত মেট্রিকটন মাছ আহরণ করে সাড়ে ১০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় করেছে। তিনি হ্রদের মাছ শিকার বন্ধকালীন সময়ে কাপ্তাই হ্রদের সমগ্র এলাকায় মাছের আহরণ ও প্রচার বন্ধে নৌ-পুলিশ সহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ দল ও মোবাইল টিম কাজ করবে।
মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন গর্বের সাথে সাড়ে ১০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের বিশাল কৃতিত্ব অর্জন করলেও এই রেকর্ড গড়ার পেছনে মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের ভূমিকা তেমন নেই বললেই চলে। কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছ থেকে তারা কোন প্রকার রাজস্ব আদায় করতে পারেনি। কাপ্তাই হ্রদের প্রাকৃতিক প্রজননের মধ্যে দিয়ে উৎপাদিত মাছ কেচকি, চাপিলা, কাজরি, কৈ,শিং,মাগুর,সাদা টেংর,বাঁচা,কালি বাউস, কাঁটা মইল্লা, কুঁচু চিংড়ি,কাকিলা,গুড়া মইল্লা মাছের উপর তারা রাজস্ব আদায়ের প্রায় ৮০ ভাগ অর্জন করেছে।
কিন্তু যারা এই রেডর্ক গড়ার পেছনে বড় ভূমিকা রেখে চলেছে সেই জেলে পরিবার গুলো মাছ শিকার বন্ধের ৩ মাস দারুন কষ্টের মধ্যে থেকে দিনাতিপাত করে। সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী থাকাকালীণ সময়ে জেলে পরিবার গুলোর কথা চিন্তা করে আন্তরিক সহযোগিতায় সরকারের পক্ষ থেকে জেলে পরিবার গুলোর জন্য ভিজিএফ কার্ডের চাল দেয়ার কথা থাকলেও প্রকৃত পক্ষে জেলেরা সেই চালও পায় না। তার পরও সরকারের রাজস্ব আদায়ে বিরাট ভূমিকা রেখে চলেছে এই জেলে পরিবার গুলো। বর্তমানে রাঙ্গামাটি জেলায় ২১ হাজার জেলে এবং খাগড়াছড়ি জেলায় ২ হাজার ৫০০ জেলেকে বন্ধকালীন সময়ে ৬০ কেজি করে চাল দেয়ার কথা থাকলেও সেই চলা গুলো পাওয়া না পাওয়া নিয়ে জেলেদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।
বিএফডিসি কর্তৃপক্ষ জানায় বিগত ১৯৬৫-৬৬ অর্থ বছরে ১২০৬.৬৩ মে. টন মৎস্য উৎপাদনের মাধ্যমে কাপ্তাই হ্রদ হতে বাণিজ্যিক ভাবে মৎস্য উৎপাদন শুরু হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন অর্থ বছরে বিভিন্ন পরিমাণ মৎস্য উৎপাদিত হয়। সংরক্ষিত উৎপাদন রেকর্ড অনুযায়ী জানা যায় যে, কালের ধারাবাহিকতায় মৎস্য ব্যবস্থাপনায় বিএফডিসি কর্তৃক বিভিন্ন কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণের ফলশ্র“তিতে হ্রদের মৎস্য উৎপাদন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। নিকট অতীতে বিএফডিসি মৎস্য প্রজনন মৌসুমে অবৈধ্য মৎস্য আহরণ ও পাচার রোধ, মৎস্য আইন বাস্তবায়ন, কার্প জাতীয় মাছের পোনা অবমুক্তি, অভয়াশ্রম ব্যবস্থাপনায় বিশেষ ভুমিকা রেখেছে।
বিগত ২০১০-১১ অর্থ বছরে কাপ্তাই হ্রদ হতে মৎস্য উৎপাদনের এবং বিগত ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে কাপ্তাই হ্রদ হতে রাজস্ব আয়ের রেকর্ড ভঙ্গকারী স্মরনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছিল। কিন্তু চলতি ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের প্রায় দেড় মাস হাতে রেখেই অতীতের মৎস্য উৎপাদন ও রাজস্ব আয়ের সেই সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে পূনঃরায় নতুন রেকর্ডর অন্যন্য দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। এ সাফল্যগাথা অত্যন্ত প্রসংশার দাবী রাখে।
এ সাফল্যের রূপকার বিএফডিসি’র কর্মকর্তা/কর্মচারীরা ধন্যবাদ পাবার যোগ্য। এ সাফল্যের অংশীদার বিএফডিসি এবং সহযোগী সকলেই। এ সাফল্যেকে নিঃসন্দেহে একটি ঈর্ষনীয় সাফল্য হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। কাপ্তাই লেকে মৎস্য উৎপাদনে অন্তরায় বিভিন্ন প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও অতীতে সকল রেকর্ড এতো ব্যাপক পার্থক্যে ভঙ্গ করা সন্দেহাতীত ভাবে প্রশংসনীয়।
২০১০-১১ সালে কাপ্তাই হ্রদে আয় হয় ৬ কোটি ৬৩ লাখ ২৪ হাজার টাকা। আর সর্বশেষ ২০১৪-১৫ সালের চলতি মৌসুমে আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় নয় কোটি টাকা। যা কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির পর সর্বোচ্চ। এ মৌসুমে গত জুলাই মাস থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে আহরিত মাছের ওপর রাজস্ব আদায় হয়েছে সাত কোটি ৬০ লাখ টাকা। মৌসুম শেষ হতে আরও প্রায় তিন মাস বাকি রয়েছে। সে হিসেবে এই অর্থবছরে রাজস্ব আদায় গতবারের চেয়ে বেশি হবে ধারণা করছে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি)।
বিএফডিসির গত পাঁচ বছরে অর্থ বছরের প্রথম আট মাস হিসেবে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে এই আয় বেড়েছে আড়াই কোটি টাকা। ২০১০-১১ সালে কাপ্তাই হ্রদে জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাছ আহরণ করা হয় ৬৫৬১.৩১ টন এবং সেই সময় আয় হয় ৫ কোটি ২৫ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। আর সর্বশেষ ২০১৫-১৬ সালের চলতি মৌসুমে এই আট মাসে মাছের উৎপাদন হয়েছে ৬৮৮৯.২১ টন এবং একই সময়ে আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় সাত কোটি ৬০ লাখ টাকায়। এবছর মৎস্য আহরণকালের সময় আরও তিন মাস বাকি রয়েছে,সে হিসেবে প্রায় নয় কোটি টাকার রাজস্ব ছাড়িয়ে যেতে পারে।
বিএফডিসি সূত্রে জানা গেছে,কাপ্তাই হ্রদ থেকে আহরিত মাছের মধ্যে ছয়টি ক্যাটাগরিতে রাজস্ব আদায় করা হয়। এর মধ্যে রুই/ কাতল মৃগেল চিতল মহাশোল (০১ কেজির উপরে) ৩৫ টাকা হারে বর্তমানে শুল্ক আদায় করা হচ্ছে,তবে নতুন শুল্ক হারে তা ৪৫ টাকায় প্রস্তাব করা হচ্ছে। সরপুটি/তেলাপিয়া/সিলভারকার্প/বিগহেড/গ্রাসকার্প/বোয়ালঘনিয়া/নাইলোটিকা/বাঁশপাতা/বাটা/বাতাসি/কালো টেংরা বর্তমানে ২১ টাকা হারে আদায় হচ্ছে,নতুন শুল্ক হারে এসব মাছের ওপর ২৯ টাকা শুল্ক আদায়ের প্রস্তাব করা হচ্ছে। কাজরি /কৈ/শিং/মাগুর/সাদা টেংর/বাঁচা/কালি বাউস/১কেজির উপরে আইড় বর্তমানে ২৭ টাকা হারে আদায় করা হচ্ছে। নতুন শুল্ক হারে তা ৩৬ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। চাপিলা/কাঁটা মইল্লা/কেচকি/কুঁচু চিংড়ি/কাকিলা/গুড়া মইল্লা মাছের বর্তমানে শুল্ক আদায় হচ্ছে ১২ টাকা,তা বৃদ্ধি করে ১৭ টাকায় প্রস্তাব করার সুপারিশ করা হয়েছে। ফলি/শোল/গজার/বাইম/টাকি/১ কেজির নিচে আইড় বর্তমানে ২০ টাকায় শুল্ক আদায় হচ্ছে। প্রস্তাবিত নতুন শুল্কে তা ২৭ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। রুই/কাতল/মৃগেল/মহাশোল/চিতল মাছের ওপর ২২ টাকা হারে শুল্ক আদায় করা হচ্ছে।