চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পাসের
হার ৯০ দশমিক ৪৪ শতাংশ
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। একই সাথে বেড়েছে শতভাগ পাস করা বিদ্যালয়ের সংখ্যাও।
শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহবুব হাসান জানান, চট্টগ্রাম বোর্ডে এবার পাসের হার ৯০ দশমিক ৪৪ শতাংশ। যা গতবারের চেয়ে ৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি। ২০১৫ সালে পাসের হার ছিল ৮২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। ২০১৪ সালে পাসের হার ছিল ৯১ দশমিক ৪০ শতাংশ। ২০১৩ সালে ছিল ৮৮ দশমিক ০৪ শতাংশ।
গতবারের তুলনায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী বেড়েছে ৫৫০ জন। এবার চট্টগ্রাম বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭ হাজার ৬৬৬ জন শিক্ষার্থী। গতবার এ সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ১১৬।
গণিত এবং তিন পার্বত্য জেলায় পাসের হার বাড়ার কারণে সামগ্রিক ফলাফলে এর প্রভাব পড়েছে। গত বছর মাধ্যমিকে প্রথমবারের মতো সৃজনশীল চালু হওয়ায় তখন গণিতে ফলাফল খারাপ হয়েছিল। এবার তা কাটিয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীরা। এবার চট্টগ্রাম বোর্ডে এসএসসি’র সামগ্রিক ফলাফলে প্রথম স্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল, দ্বিতীয় স্থানে সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় ও তৃতীয় স্থানে ডাঃ খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।
গতকাল বুধবার সারাদেশে একযোগে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড কার্যালয়ে ফল ঘোষণা করেন বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মাহবুব হাসান।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ১৬৯টি কেন্দ্রে ৯৯৮টি বিদ্যালয়ের ১ লাখ ১৩ হাজার ২৮৭ জন পরীক্ষার্থী নিবন্ধন করে পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ লাখ ১৩ হাজার ৭০ জন। পাস করেছে ১ লাখ ২ হাজার ২৬১ জন। এর মধ্যে বিজ্ঞানে ২৩ হাজার ৬৪২, মানবিকে ২৫ হাজার ৭০০ ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাস করেছে ৫২ হাজার ৯১৮ জন। তিন বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল যথক্রমে- ২৪ হাজার ৬৪৯, মানবিকে ৩০ হাজার ৬৬১ এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৫৭ হাজার ৭৫৯ জন। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪৭ হাজার ৪৩২ জন ছাত্র এবং ৫৪ হাজার ৮২৮ জন ছাত্রী। বিজ্ঞান বিভাগের গড় পাসের হার ৯৫ দশমিক ৯১ শতাংশ, মানবিকে ৮৩ দশমিক ৮২ শতাংশ ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৯১ দশমিক ৬২ শতাংশ। এবার চট্টগ্রামে মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা ভাল ফলাফল করেছে। চট্টগ্রামে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৯০ দশমিক ৯৭ শতাংশ ছেলে পাস করেছে। মেয়েদের ক্ষেত্রে এ হার ৮৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ।
তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে পাসের হার সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বান্দরবানে। এ জেলায় পাসের হার ৮২ দশমিক ৬৪শতাংশ। গতবার ছিল ৬৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ। পাসের হার বেড়েছে নগরীতেও। এখানে পাসের হার ৯৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ। গতবার ছিল ৮৯ দশমিক ৮১ শতাংশ।
মহানগর বাদে চট্টগ্রাম জেলায় পাসের হার ৯০ দশমিক ৩৭ শতাংশ। গতবার এ হার ছিল ৮২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। মহানগর সহ চট্টগ্রাম জেলায় পাসের হার ৯২ দশমিক ২৮ শতাংশ। গতবার ছিল ৮৫ দশমিক ২৭ শতাংশ।
এবার কক্সবাজার জেলায় পাসের হার ৯১ দশমিক ২৭ শতাংশ, রাঙ্গামাটিতে ৮৪ শতাংশ, খাগড়াছড়িতে ৭৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ। গতবার এসব জেলায় পাসের হার ছিল যথাক্রমে- ৮৪ দশমিক ৫৭, ৭০ দশমিক ৯৯ এবং ৬৮ দশমিক ৭২ শতাংশ।
চট্টগ্রাম বোর্ডে গত বছর শতভাগ পাস করা বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৪০ হলেও এবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৮। গত বছর একটি বিদ্যালয়ে পাসের হার শূন্য থাকলেও এবার এমন কোন বিদ্যালয় নেই।
সামগ্রিক ফলাফলে সন্তোষ প্রকাশ করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড চট্টগ্রামের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মাহবুব হাসান সাংবাদিকদের বলেন, এবার চট্টগ্রাম বোর্ডে পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। কারণ গণিতে ও তিন পার্বত্য জেলায় পাসের হার বেড়েছে।
তিনি বলেন, গত বছর প্রথমবারের মতো গণিতে সৃজনশীল পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র করা হয়েছিল। ফলে মানবিক এবং মফস্বল এলাকার শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে বেশি খারাপ করেছিল। বিষয়টি সামগ্রিক ফলাফল নিয়ন্ত্রণ করেছিল। এবার সব বিষয়ে সমান পাস করায় কোন বিষয় সামগ্রিক ফলাফল নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। পরীক্ষার্থীরা গণিতে সৃজশীলের ধাক্কা সামলিয়ে ওঠার পাশাপাশি গত বছর যেসব স্কুলের ফলাফল বেশি খারাপ হয়েছিল সেইসব স্কুল কর্তৃপক্ষকে ডেকে শিক্ষার মান উন্নয়নে জোর দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল বলেও জানান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক।
তিনি বলেন, গত বছর মানবিক বিভাগে পাসের হার ছিল ৬৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ। তিন পার্বত্য জেলায়ও পাসের হার ছিল কম। এবার মানবিক বিভাগ, তিন পার্বত্য জেলা, কক্সবাজার ও অন্যান্য উপজেলায় পাসের হার বেড়েছে। ফলে সামগ্রিক ফলাফল ভাল হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকায় এবার আনুষ্ঠানিকভাবে বোর্ড সেরা স্কুল ঘোষণা করা হয়নি। তবে জিপিএ-৫ এর ভিত্তিতে দেখা যায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এবারের এসএসসি পরীক্ষায়ও প্রথম স্থান ধরে রেখেছে ঐতিহ্যবাহী কলেজিয়েট স্কুল। অন্যদিকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছে সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় ও ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়।
গতকাল বুধবার ফলাফল প্রকাশের পর এ তিনটি বিদ্যালয়ে ঘুরে দেখা গেছে মেধাবীদের উল্লাসের খণ্ড খণ্ড চিত্র।
প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, জিপিএ-৫ এর ভিত্তিতে প্রথম অবস্থানে থাকা চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৪০২ জন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৭৯ জন। পাসের হার শতভাগ।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের ঐতিহ্য ও সুনাম ধরে রেখেছে। এই ফলাফলের পেছনে শিক্ষক ও অভিভাবকদের অবদানও অনস্বীকার্য। ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আমি আশাবাদী।
অন্যদিকে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৪১৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল পরীক্ষায়। এদের মধ্যে সবাই পাস করেছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৩৮ জন শিক্ষার্থী।
এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াউল হায়দার হেনরী বলেন, এখনও আনুষ্ঠানিক ফলাফল হাতে পাইনি। তবে শুনেছি জিপিএ-৫ এর ভিত্তিতে আমার স্কুল দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। এরকম কিছু হলে স্কুলের জন্য অনেক সম্মানের ও গর্বের হবে।
তৃতীয় অবস্থানে থাকা ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে ৩১৯ জন শিক্ষার্থী এবারের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। তারা সবাই পাস করেছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৮০ জন শিক্ষার্থী।
এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসমত জাহান বলেন, সবাই যে পাস করেছে এটাই সবচেয়ে বেশি ভালো লাগছে। গত বছর আমাদের এক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছিল। এটা আমাদের জন্য ও ওই শিক্ষার্থীর অভিভাবকের জন্য অনেক কষ্টের ছিল। তাই আমরা যেসব শিক্ষার্থী একটু দুর্বল তাদের নির্বাচনী পরীক্ষার পরেও গাইডলাইন করেছি। পাশাপাশি অভিভাবকরাও অনেক কষ্ট করেছেন। তাই ফলাফল যেমন ভালো হলো, জিপিএ-৫ ও পেয়েছে বেশি।