জাপানের রাজধানী টোকিওতে বাংলাদেশ দূতাবাসের অত্যাধুনিক নকশার নতুন চ্যান্সারি ভবন উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জাপানে এটাই বাংলাদেশ’।
শনিবার (২৮ মে) স্থানীয় সময় বিকেল ৫টায় এ ভবনের উদ্বোধন করেন তিনি। ৭১৪ স্কয়ার মিটারের ওপর অত্যাধুনিক নকশায় চারতলা বিশিষ্ট চ্যান্সারি ভবনটি নির্মাণ করেছে জাপানেরই ‘মোরামোতো কর্পোরেশন’। এর পরামর্শক ছিল ‘কে পার্টনার্স আর্কিটেক্ট’।
প্রধানমন্ত্রী এ দু’টি প্রতিষ্ঠান ও জাপানসহ চ্যান্সারি ভবন নির্মাণে সহযোগিতার জন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, জাপানে এটাই বাংলাদেশ। এই সুন্দর ভবনটি হবে জাপান-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের প্রতীক।
তিনি বলেন, জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক দৃঢ় রয়েছে। এটা আরও দৃঢ়তর হবে।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সফরে যাওয়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের মাধ্যমেও দু’দেশের ব্যবসায়িক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও সংহত হওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে জাপান আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলো। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়তে জাপানের সহযোগিতার কথা বাংলাদেশ চিরকাল স্মরণ করবে।
জাপানকে অকৃত্রিম বন্ধু উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা আমাদের সংকটকালে পাশে দাঁড়িয়েছে তাদের কথা আমরা কোনোদিনই ভুলে যেতে পারি না।
বাংলাদেশের উন্নয়নে জাপানের সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতু, রূপসা সেতু নির্মাণ জাপানের সহযোগিতায় হয়েছে। পদ্মাসেতু নির্মাণের অর্থায়নেও জাপান প্রথম এগিয়ে আসে, পরে বিভিন্ন জটিলতার কারণে কারও সহায়তা ছাড়াই বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু করছে।
এসময় প্রধানমন্ত্রী আরও স্মরণ করেন, বাংলাদেশে যখন কোনো একটি আন্তর্জাতিক মানের হোটেল ছিল না, তখন হোটেল সোনারগাঁও তৈরি করে দিতে জাপানই এগিয়ে আসে।
বর্তমানে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্পেও জাপান অর্থায়ন করছে উল্লেখ করে তা-ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
জাপানে জি-৭ এর শীর্ষ সম্মেলনের আউটরিচ কর্মসূচিতে তাকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনঝো আবে দাওয়াত দিয়েছেন, সে কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এবারের সামিট অত্যন্ত সফল হয়েছে।
জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ আলোচনাও অনেক ফলপ্রসূ হয়েছে। নতুন নতুন প্রস্তাব এসেছে।
বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে এগিয়ে যাওয়ায় এখন বিশ্ব নেতারা সবাই বাংলাদেশের প্রশংসা করছেন, বলেন তিনি।
টোকিওতে চ্যান্সারি ভবন উদ্বোধনের এই দিনটিকে নিজের অত্যন্ত আনন্দের দিন হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০১০ সালে এই ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন তিনি করেন। এরপর সবার সহযোগিতায় এই অত্যাধুনিক নকশার ভবনটি তৈরি হওয়া ও এর উদ্বোধন করতে পারার কারণেও তিনি আনন্দিত।
শেখ হাসিনা বলেন, এই আনন্দ ভাগ করে নিতে আমি আমার ছোট বোন শেখ রেহানাকেও নিয়ে এসেছি।
তিনি স্মরণ করেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে জাপানের সহযোগিতার পর এই দেশের মানুষকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাতে ১৯৭৩ সালে টোকিও সফর করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেদিন তার সঙ্গে সফরসঙ্গী হয়ে এসেছিল শেখ রেহানা। আজ যখন সেই দেশে বাংলাদেশের নিজস্ব চ্যান্সারি ভবন উদ্বোধন হচ্ছে, তখন তাকে আনতেই হবে।
বাংলাদেশ সারাবিশ্বে মাথা উঁচু করে দাড়াবে এবং ২০৪১ সালের মধ্য উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জাপান-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ লিগের মহাসচিব ইচিরো সুকাদা, জাপানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সেইজি কিহারা। তারা দু’জনই শেখ হাসিনরা নেতৃত্বে বাংলাদেশের বর্তমান অগ্রগতির প্রশংসা করেন এবং আরও এগিয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এসময় উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া টোকিওতে নিযুক্ত প্রায় দেড় ডজন দেশের রাষ্ট্রদূতরা এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন।