টিসিবির দেড় হাজার টন ছোলা খালাস হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরে

রমজানের অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ছোলার দামে লাগাম টানতে ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশ (টিসিবি) দেড় হাজার মেট্রিকটন অস্ট্রেলিয়ার ছোলা আমদানি করেছে। রোদ-বৃষ্টি থেকে বাঁচিয়ে ছোলাগুলো দ্রুত বন্দরে পৌঁছাতে বাল্ক কার্গো বা খোলা জাহাজের পরিবর্তে কনটেইনারে ভরে নিয়ে আসা হয়েছে। ছোলার চালান ইতিমধ্যে পৌঁছে গেছে চট্টগ্রাম বন্দরে। এখন চলছে খালাসের উৎসব।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২৬ মে) থেকে নগরীর পতেঙ্গার ইনকনট্রেন্ড কনটেইনার ডিপোতে টিসিবির ছোলা খালাস হচ্ছে। প্রতিদিন ৩৫-৪০টি ট্রাকে ছোলা বোঝাই করে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা টিসিবির গুদামে। শনিবারের (২৮ মে) মধ্যে সব ছোলা খালাসের লক্ষ্য রেখে নিরলস পরিশ্রম করছেন টিসিবির কর্মকর্তারা। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিসিবির ছোলা খালাস ও পরিবহনে বিশেষ ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে বন্দর-কাস্টমসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।
টিসিবির প্রধান কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা (মুখপাত্র) মো. হুমায়ুন কবির শুক্রবার দুপুরে বাংলানিউজকে বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া থেকে টিসিবি ১ ‍হাজার ৫০০ মেট্রিকটন উন্নতমানের ছোলা আমদানি করেছে। ইতিমধ্যে সেগুলো বন্দরে পৌঁছেছে। এখন খালাসের কাজ চলছে। দু-এক দিনের মধ্যেই সব ছোলা ট্রাক সেলের মাধ্যমে বিক্রির জন্যে সারাদেশে পৌঁছে যাবে।’
তিনি জানান, রোববার (২৯ মে) থেকে সারাদেশে ১৭৯টি ট্রাকে টিসিবি ছোলা, দেশি চিনি, মশুর ডাল, সয়াবিন তেল (পেট বোতল) ও খেজুর বিক্রি করবে। এর মধ্যে ঢাকায় ৩২টি ট্রাক, চট্টগ্রামে ১০টি, অন্য বিভাগীয় শহরে ৫টি ও জেলা সদরে ২টি করে ট্রাকে এসব পণ্য বিক্রি হবে। একেকটি ট্রাকে ৩০০-৪০০ কেজি চিনি, ১৫০-২০০ কেজি ডাল, ৩০০-৪০০ লিটার তেল, ৪০০-৮০০ কেজি ছোলা ও ৫০ কেজি করে খেজুর থাকবে।
তিনি জানান, একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ ৪ কেজি চিনি, ২ কেজি ডাল, ৫ লিটার সয়াবিন, ৫ কেজি ছোলা ও ১ কেজি খেজুর কিনতে পারবেন ট্রাক থেকে। দাম নির্ধারণ করা হয়েছে চিনি ৪৮ টাকা, ডাল ৯০ টাকা, তেল ৮০ টাকা, ছোলা ৭০ টাকা ও খেজুর ৯০ টাকা।
মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমাদের গুদামে পুরোনো কোনো ছোলা মজুদ নেই। রমজানের আগেই আমদানি করা হয় এবং রমজানেই সব বিক্রি হয়ে যায়। একেবারে ফ্রেশ অস্ট্রেলিয়ান ছোলাই পাবেন ভোক্তারা। তেমনি অন্য পণ্যগুলোর মানও বেশ ভালো।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘খেজুর সংগ্রহের জন্যে আমরা পাঁচবার দরপত্র আহ্বান করেছি। কেউ অংশগ্রহণ করেনি। তাই স্থানীয় বাজার থেকে কিনেই ট্রাকের মাধ্যমে বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
টিসিবির চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান সুজা-উদ-দৌলা সরকার বাংলানিউজকে জানান, চট্টগ্রামে ১০টি ট্রাকে রমজানের পণ্য বিক্রির জন্যে যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আমাদের গুদামে প্রচুর পণ্য মজুদ রয়েছে। কোনো সংকট হবে না।
এদিকে, ছোলার দাম স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের শীর্ষ আমদানিকারক ও ভোগ্য পণ্যের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার বৈঠক করেছেন জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন। বৈঠকে প্রতিকেজি অস্ট্রেলিয়ান ছোলা ৭৫-৭৬ টাকায় বিক্রির ঘোষণা দিয়েছেন আমদানিকারক ও আড়তদারেরা। এছাড়া সাদা মটর ৪০ টাকা ৫০ পয়সা ও গোটা মশুর ৮০-৯১ টাকায় বিক্রি হবে।
বৈঠকে চট্টগ্রামের শীর্ষ ছোলা আমদানিকারক বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর বলেন, দেশে ছোলার চাহিদা ২ লাখ থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টন। রমজান ও তার আগের মাসে ছোলা লাগে প্রায় ৭০ হাজার টন। ৯৯ ভাগ ছোলার চাহিদাই পূরণ করতে হয় অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানির মাধ্যমে। মাত্র ৫-৬ হাজার টন ছোলা আসে মায়ানমার থেকে। গত চার মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ছোলা এসেছে মাত্র ৬৮ হাজার টন। সরকারি সংস্থা দেশে ছোলার চাহিদা ও মজুদ সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়েছে। এবার রমজানে প্রতি টন ৭৫০ থেকে ১ হাজার ৫০ ডলারে ছোলা আমদানি করতে হয়েছে। গত বছর রমজানের আগে যেখানে আমার গুদামে মজুদ ছিল ৩৫ হাজার টন, সেখানে এ বছর আছে মাত্র ১ হাজার ৩৭৬ টন।
তিনি বলেন, যে ছোলা ৮৬৫ ডলার কেনা পড়েছে তার সঙ্গে ৭৯ টাকা ডলার হিসাব করলে ইন্স্যুরেন্স, জাহাজ ভাড়া, লাইটারিং, বন্দর-কাস্টম চার্জ, ডিউটি ইত্যাদি আরও ৩ হাজার ৫০০ টাকা খরচ আছে। সব মিলে কস্টিং কেজিতে ৭৩ টাকার বেশি। অথচ জানুয়ারিতে আমি ছোলা বিক্রি করেছি প্রতিমণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) ২ হাজার ২০০ টাকা। এবার এখনো পর্যন্ত ৭৬ টাকার বেশি দামে আমি ছোলা বিক্রি করিনি।
ছোলার দর বেঁধে দেওয়ার পক্ষে নন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক দেশে দুই দামে পণ্য বিক্রি হতে পারে না। আমি কম দামে বিক্রি করলে সিলেট, রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা তা কিনে নিয়ে বেশি দামে বিক্রি করবে। গত বছর ছোলা আমদানি করে ২৫ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছি। বেশি আমদানি করি বলে বাজারে বেশি কনট্রিবিউট করতে পারি। ৭৩ টাকা কস্টিং পড়লে তো কেউ ৬৩ টাকা বিক্রি করতে পারে না।
তিনি বলেন, টাকা কামানোর জন্য ব্যবসা করছি, ইজ্জত খোয়ানোর জন্য নয়। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত লাভ আমাদের কাম্য নয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনো সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত নই। আমার কাছে আমদানির সব কাগজপত্র আছে, মজুদের কাগজপত্র আছে। এমনকি কার কাছে কী পরিমাণ বিক্রি করেছি তাও আছে। সরকার যদি না চায় তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে আমদানি ব্যবসা বন্ধ করে দিলেও খেয়ে পরে বাঁচতে পারবো। সরকারের নজরদারির পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ভোগ্যপণ্য যাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গুদামে, বাজারে পৌঁছাতে পারি সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে। এছাক ডিপোতে আমাদের ছোলার কনটেইনার ঘূর্ণিঝড়ের সময় পানিতে ভিজে গেছে, খাতুনগঞ্জে গুদামে আড়তে পানি ঢুকে গেছে। মাঝিরঘাট, খাতুনগঞ্জ ট্রাক নিতে হলে নির্ধারিত ভাড়ার বাইরে ৪০০-৫০০ টাকা ঘুষ দিতে হয়। এসবও দেখতে হবে।
জেলা প্রশাসকের বক্তব্যের সূত্র ধরে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান বলেন, প্রতি কেজি ৭৫ টাকা দিলে আমি ৫০০ টন ছোলা দিতে পারবো।
জেলা ‍প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন রমজানে কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করবেন জানিয়ে বলেন, ‘র‌্যাব, ক্যাব, পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট, সাংবাদিক সবাইকে নিয়ে এবার অভিযান চালানো হবে। আমদানিকারক, ব্যবসায়ী, মজুদদাররা যদি সাধারণ মানুষকে জিম্মি করতে চায় তাহলে সোজা জেল। জরিমানার পক্ষে নই আমি। কারণ যারা অতিরিক্ত মুনাফা করে জরিমানার টাকা তারা দিয়ে দিতে পারে। তাই ছয় মাস, এক বছর, দুই বছরের কারাদণ্ড দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বেশির ভাগ ছোলার আমদানিকারক যখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কম ছিল তখন কিনেছিল। এখন বেশি দামে বিক্রি করছেন। তাই আমরা সবার আমদানির কাগজপত্র, পরিমাণ, মজুদ সব খতিয়ে দেখবো। খুচরা দোকানিদের পণ্যের বিপরীতে পাইকারি রশিদ সংগ্রহে রাখতে হবে। পণ্যের মূল্য তালিকা টাঙাতে হবে।’

দারুল আরকাম প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নত জাতি গঠনে কাজ করছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ——বোরহান উদ্দিন উন্নয়নমূখী পার্বত্য চট্টগ্রাম গড়তে হলে প্রশিক্ষণের প্রকৃত জ্ঞানকে কাজে লাগাতে হবে —-এ কে এম মকছুদ আহমেদ প্রশিক্ষণের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে আপনারা শিক্ষার্থীদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবেন ——মুহাম্মদ ইকবাল বাহার চৌধুরী

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031