পরিবহন ধর্মঘট
চট্টগ্রাম নগরীতে সিএনজি
অটোরিকশা চলাচলে বাধা
চট্টগ্রাম অফিস : অনিবন্ধিত সিএনজি অটোরিকশা চলাচলে আদালতের রায়ের পরও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) তা অবমাননা করছে অভিযোগ এনে আগামী ৯ মে সোমবার বৃহত্তর চট্টগ্রামের সকল রুটে ২৪ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। ধর্মঘটের অংশ হিসেবে সোমবার চট্টগ্রাম জেলা ও শহর, কক্সবাজার জেলা এবং তিন পার্বত্য জেলায় সকল ধরণের গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে। গতকাল শুক্রবার সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক শাখার নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে আগামী ১ মাসের মধ্যে অনিবন্ধিত সিএনজি অটোরিকশা নিবন্ধন প্রদানসহ ৬ দফা কার্যকরের দাবি জানানো হয়। তা না হলে লাগাতর ধর্মঘট আহ্বান করার ঘোষণাও দেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ মূছা।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ২৫ এপ্রিল নগরীতে অনিবন্ধিত সিএনজি চলাচলে কোনো ধরণের বাধা কিংবা হস্তক্ষেপ না করার জন্য সিএমপিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয় আদালত। তবে সিএমপি কর্তৃপক্ষের তালবাহানা, বৈঠকের কথা বলে সময় ক্ষেপনের ফলে ৪মে বিকেল থেকে অটোরিকশা ও অটো টেম্পো শ্রমিক ইউনিয়নের সিএনজি চালিত গাড়ি চলাচল শুরু করে। কিন্তু আদালতের সিদ্ধান্ত অবমাননা করে সিএমপি গত দু’দিনে বহু গাড়ি জব্দ করে প্রায় ৫০টি মামলা দিয়েছে। এরপরও আমরা আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সংগঠনভুক্ত অনিবন্ধিত সিএনজি চালিত গাড়ি চলাচল অব্যাহত রেখেছি।
তিনি বলেন, বর্তমানে চার হাজার অনিবন্ধিত সিএনজি অটোরিকশা চালক রয়েছেন। তাদের পরিবারসহ কম করে হলেও ১৫-১৬ হাজার মানুষের দুঃসহ জীবন নিয়ে আমরা মাসের পর মাস চুপ করে থাকতে পারি না। চালকরা বিভিন্ন উৎস থেকে ধার-দেনা করে গাড়িগুলো কিনেছেন। ফলে ঋণদাতার কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পেরে অনেক চালক পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এই পরিস্থিতির দ্রুত অবসান না হলে আত্মহত্যার মতো অনাকাঙ্খিত ঘটনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
পুলিশের প্রতি অভিযোগ করে তিনি বলেন, পুলিশের নির্যাতন, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি বর্তমানে যে অবস্থায় চলে গেছে, তা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এ অবস্থায় গাড়ি চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ধর্মঘট আহ্বান ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প ছিল না।
ছয় দফার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো, নগরীতে অনিবন্ধিত সিএনজি চলাচলে বাধা না দেওয়া, বাধা প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, রায় অনুযায়ী অনিবন্ধিত ৩ হাজার ১১টি গাড়ির সপ্তাহব্যাপী আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ প্রদান, অবিলম্বে বিনা শর্তে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার এবং টো করা সিএনজি অটোরিকশা ফেরত দেওয়া।
এছাড়া অবিলম্বে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত ও বিআরটিএ’র সার্কুলার মোতাবেক অনিবন্ধিত অটোরিকশার নিবন্ধন প্রদান, পুলিশের টোকেন বাণিজ্য, রিক্যুইজিশন, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি বন্ধ করা, কথায় কথায় মামলা দেওয়া ও টাকার জন্য শারীরিক নির্যাতন বন্ধ করারও দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন পূর্বাঞ্চল কমিটির সভাপতি মৃণাল চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমাদের ফেডারেশনের আওতাভুক্ত ৪৩টি শ্রমিক সংগঠন রয়েছে। ধর্মঘটের সমর্থনে এসবের অন্তর্ভুক্ত সকল ধরণের গাড়ি চলাচল সোমবার বন্ধ থাকবে। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে শ্রমিক নেতা হাজি রুহুল আমিন, রবিউল মাওলা, অলি আহমদ, মোহাম্মদ হারুন, আবদুস ছবুর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।