আসলামের জামিন আবেদন নাকচ করে মহানগর হাকিম গোলাম নবী মঙ্গলবার এই আদেশ দেন।
গুলশান থানায় গত ২৬ মে আসলামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের এই মামলা দায়ের করে পুলিশ। পরদিন আদালতে দশ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়।
বিষয়টি সোমবার আদালতে উঠলেও আসলামের আইনজীবীদের আবেদনে শুনানি পিছিয়ে মঙ্গলবারে আসে।
পুলিশের রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, “সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র বানানোর প্রচেষ্টায় নানা ধরনের নাশকতামূলক কার্যক্রম, ষড়যন্ত্রমূলক হত্যা ও বোমাবাজির সঙ্গে আসামি আসলাম চৌধুরীর যোগসূত্র রয়েছে। ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য তাকে রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।”
অন্যদিকে এর বিরোধিতা করে আসলাম চৌধুরীর অন্যতম আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া জামিনের আবেদন করেন।
তিনি আদালতকে বলেন, “কেবল পত্রিকায় প্রকাশিত একটি ছবির ওপর ভিত্তি করে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা আইনের অপব্যাবহার। আসলাম চৌধুরীর দাওয়াত পেয়ে ভারতের এক অনুষ্ঠানে গেলে সেখানে ইসরায়েলের লিকুদ পার্টির ওই নেতার সঙ্গে তার দেখা হয়। তাদের মধ্যে রাষ্ট্রদ্রোহমূলক কী কথা হয়েছিল তা তো রাষ্ট্রপক্ষ এখানে বলতে পারছে না।”
শুনানি শেষে বিচারক জামিন আবেদন নাকচ করে আসলামকে সাত দিনের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।
মতিঝিল ও লালবাগ থানার নাশকতার আরও দুটি মামলায় দশ দিন করে মোট ২০ দিনের রিমান্ড আবেদন রয়েছে পুলিশের। আগামী ৬ জুন আবেদন দুটি শুনবে বলে আদালত সোমবারই জানিয়েছে।
ঘটনাক্রম
চট্টগ্রামের নেতা আসলাম চৌধুরীকে মাস খানেক আগে বিএনপির নতুন কমিটিতে যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে মনোনীত করেন খালেদা জিয়া।
আর লিকুদ পার্টির সদস্য মেন্দি এন সাফাদি ইসরায়েলের বর্তমান সরকারের উপমন্ত্রী এম কে আয়ুব কারার একজন সাবেক উপদেষ্টা। তিনি নিজের নামে মেন্দি এন সাফাদি সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোমেসি অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালান।
সম্প্রতি ভারতের এক সম্মেলনে তাদের দুজনের সাক্ষাতের ছবি ও খবর গণমাধ্যমে এলে আলোচনার সূত্রপাত হয়।
আওয়ামী লীগ নেতারা অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত করতে বিএনপি ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল এবং দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে মিলে ‘ষড়যন্ত্র’ করছে।
ইসরায়েল কিংবা মোসাদের সঙ্গে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আসলামের ওই সফর ছিল ‘ব্যক্তিগত’।
তবে আসলাম বা সাফাদি কেউই ভারতে ওই সাক্ষাতের খবর অস্বীকার করেননি। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে আসলাম সাংবাদিকদের বলেন, মেন্দি এন সাফাদি যে ইসরায়েলের লিকুদ পার্টির নেতা, তা তিনি সে সময় ‘জানতেন না’ । আর সাফাদিও বিবিসির বাংলাকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আসলামের সঙ্গে প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে দেখা হলেও তাদের মধ্যে ‘কোনও গোপন বিষয়ে’ কথা হয়নি।
এ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই ১৫ মে ঢাকার খিলক্ষেত থেকে আসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
ওই রিমান্ডের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আসলামের আইনজীবীরা হাই কোর্টেও গেছেন। বিষয়টি সেখানে আদেশের অপেক্ষায় রয়েছে।
সন্দেহভাজন হিসেবে সাত দিনের রিমান্ড শেষে ২৪ মে আসলামকে আদালতে হাজির করার পর নতুন করে নাশকতার দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ২০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ।
এর মধ্যে মতিঝিল থানার মামলাটি গত বছরের ৪ জানুয়ারি এবং লালবাগ থানার মামলাটি গত বছরের ৫ জানুয়ারি দায়ের করা হয়। দুটি মামলাতেই ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এরপর ২৬ মে গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক গোলাম রব্বানি গুলশান থানায় আসলামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলাটি করেন, যেখানে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১২০/বি (রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র), ১২১/এ (রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার ষড়যন্ত্র) এবং ১২৪/এ (রাষ্ট্রদ্রোহ) ধরায় অভিযোগ আনা হয়।
পুলিশ প্রধান একেএম শহীদুল হক মামলা হওয়ার দিন সাংবাদিকদের বলেন, মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে ‘চুক্তি করার কথা’ আসলাম পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ‘স্বীকার করেছেন’।
“সেই নেতা এই সরকার উৎখাতে ষড়যন্ত্র করবে; আসলাম তাকে টাকা দেবে- তা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।”
শহীদুল হক বলেন, ইসরায়েলের সেই রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের ‘সম্পর্ক আছে’। আর তার সঙ্গে আসলাম চৌধুরী ‘একাধিক মিটিং’ করেছেন ভারতে।
“জিজ্ঞাসাবাদে সে যেসব তথ্য উপাত্ত দিয়েছে, তাতে স্পষ্ট প্রতিয়মান হয়েছে, সে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে সস্পৃক্ত ছিল।”