কক্সবাজার সংবাদদাতা ॥ কক্সবাজারের পেকুয়ায় ঘূর্নিঝড় রোয়ানোর প্রভাবে বেড়িবাঁধের একাধিক পয়েন্টে ভাংগনে ৪ইউনিয়নের নি¤œাঞ্চল প্লাবিতের ফলে প্রায় কয়েক হাজার পরিবারের ৪০ হাজার মানুষ পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে। এছাড়া উপজেলার পাহাড়ি ৩ গ্রাম শিলখালী, বারবাকিয়া ও টইটংয়ের সংরক্ষিত ও সামাজিক বনায়নের হাজার হাজার পরিণত অপরিনত গাছপালা উপড়ে যাওয়া ছাড়াও ওই ৩ইউনিয়নের শত শত বাড়িঘর নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্তের শিকারের খবর পাওয়া গেছে। একই সাথে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে পেকুয়া সদরের দূর্গম ছিরাদিয়া এলাকার ১টি পয়েন্টে, উজানটিয়া, মগনামা ও রাজাখালী ইউনিয়নের বিস্তির্ণ বেড়িবাঁধের একাধিক পয়েন্টে রোয়ানুর জলো”ছাসের আঘাতে ভাংগন বিলিন হয়ে গেছে। বিধ্বস্ত বেড়ীবাধের অংশ দিয়ে অবাধে জোয়ারের পানি সরাসরি লোকালয়ে প্রবেশ করায় ওই ৪ইউনিয়নের দুই তৃতীয়াংশ বসতবাড়ী পানির নিচে তলিয়ে পড়েছে। এতে করে এসব ইউনিয়নের প্রায় ৪০হাজারেরও বেশি মানুষ পানি বন্দির শিকার হয়ে পড়েছে। আক্রান্ত ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রগুলো জানিয়েছে, ঘুর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে তৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে কয়েক হাজারের বেশী মাটির ঘরসহ কাচা বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়া ১ হাজারেরও বেশী বাড়িঘর পানির নিচে তলিয়ে পড়েছে। এসব এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলেজ, সরকারী-বেসরকারী, শায়ত্বশাষিত প্রতিষ্টানগুলোও আকষ্মিক প্লাবনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়। গত দু’দিন ধরে তা এখনো পানির নিচে। প্রায় শতাধিক গবাদি পশু, গ”হ পালিত হাঁস-মুরগী পানির ¯্রােতে ভেসে গেছে। তবে উপজেলা প্রশাসন এসব ইউনিয়নের পানি দ্রুত নিষ্কাশনের জন্য জরুরী ব্যবস্থাা হাতে নিচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র নিশ্চিত করেছে। একই সাথে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রচন্ড বাতাসের প্রভাবে উপজেলার পাহাড়ি ৩ইউনিয়নেও সংরক্ষিত ও সামাজিক বনায়ন ছাড়াও আবাধি হাজার হাজার গাছপালা উপড়ে সেখানে বসবাসকারী লোকজনের বাড়ি ঘরের উপর ধ্বসে পড়ে। এতে করে পাহাড়ি এলাকায়ও শত শত পরিবারের হাজার হাজার বাড়িঘর কমবেশি ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়। অপরদিকে, গতপরশু রোববার থেকে বন্যা ও দূর্যোগ কবলিত এলাকায় পরি¯ি’তির কিছুটা উন্নতি হতে শুরু করেছে। তবে, ক্ষতিগ্রস্তদের ভাগ্যে জুটেনি কোন ধরনের ত্রাণ ও পূর্ণবাসন সহায়তা। ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে উপজেলার শত শত পরিবারের হাজার হাজার মানুষ সাইকোন সেল্টার, বহুতল বিশিষ্ট ভবন, শিক্ষা প্রতিষ্টানসহ উঁচু স্থানে আশ্রয় নেন। গতপরশু থেকে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় পেকুয়ার প্রধান বানিজ্যিক কেন্দ্র কবির আহমদ চৌধুরী বাজারের গতকাল সোমবার বিকাল থেকে বিভিন্ন ব্যাবসা প্রতিষ্টান পুনরায় খুলতে দেখা গেছে। এদিকে পেকুয়ার ইউএনও মোঃ মারুফুর রশিদ খাঁন ঘূর্নিঝড় রোয়ানোর আক্রমনের দিন থেকে ২দিন ধরে দূর্গত মানুষ পানি বন্দি ও বাতাসের তোড়ে পাহাড়ি এলাকায় বিধ্বস্ত শত শত পরিবারের লোকজনগুলো খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জিবনযাপনে বাধ্য হন বলে জানান। তিনি আরও জানান, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের সার্বিক তত্বাবধানে এবং মাননীয় সংসদ সদস্য (পেকুয়া-চকরিয়া) আলহাজ¦ মোহাম্মদ ইলিয়াছ এমপি’র নির্দেশক্রমে ত্রাণ ও পূর্ণবাসন তৎপরতা জোরদার অব্যাহত রাখা হয়েছে। জানা গেছে এপর্যন্ত সরকারীভাবে ৮০ বস্তা চিড়া, ৮০ বস্তা মুড়ি, চিনি, গুড়, ৩০০০প্যাকেট খাবার স্যালাইন, মোমবাতি ও দিয়াশলাই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিতরণ করা হয়েছে। তবে এ ত্রান বিতরনের ঘটনায় পরিলক্ষিত হয়েছে নানা রাখডাক। এদিকে চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়া দূর্গত মানুষের ভোগান্তি নিরসনে এখনো পর্যন্ত কোন এনজিও সংস্থা বা স্বেচছাসেবী সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। এনিয়ে এলাকার জনমনে দেখা দিয়েছে হতাশা ও ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মারুফুর রশিদ খান এ প্রতিবেদককে জানান, ইতিমধ্যে দূর্গতদের মাঝে শুকনো খাবারসহ বিভিন্ন ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন উপজেলা প্রশাসন। একই সাথে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রাখা হয়েছে। পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু জানান, ঘর্নিঝড় রোয়ানু’র আঘাত হেনেছে পেকুয়ার উপকূলীয় এলাকায়। যার প্রভাবে স্বাভাবিক জোয়ারের চাইতে ৫/৬ফুট পানি ব”দ্ধি পাওয়ায় পেকুয়া সদরের সামান্য অংশ, উজানটিয়া, মগনামা ও রাজাখালী ইউনিয়নে বিস্তিৃর্ন বেড়ীবাঁধের একাধিক অংশে ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় জোয়ার ভাটা চলছে উপজেলার নিচু ইউনিয়নগুলোয়। সেই সাথে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানোর ভারী বর্ষণের উপজেলার পাহাড়ি এলাকায়ও শত শত বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। ৩ ইউনিয়ন উজানটিয়া, রাজাখালী ও মগনামা এলাকার অধিকাংশ ঘরবাড়ি ডুবে রয়েছে। তবে, গত শুক্রবার রাত থেকে এসব এলাকার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হযেছে। তিনি বন্যা দুর্গত এলাকায় ত্রান বিতরণ করা হচ্ছে বলেও জানান।