ফৌজদারি কার্যবিধির বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার (৫৪ ধারা) ও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ধারা (১৬৭ ধারা) দুটি ধারা প্রয়োগ সংক্রান্ত একটি রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল সর্বোচ্চ আদালতে মঙ্গলবার খারিজ হওয়ার পর তিনি একথা বলেন।
প্রয়োজনে ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী।
৫৪ ধারা নিয়ে তিনি বলেন, “আইনে কিছু কিছু ইমার্জেন্সি প্রভিশন থাকে। ফৌজদারি কার্যবিধিতে যখন ৫৪ ধারা রাখা হয়েছে, তখন সেটা ইমার্জেন্সি প্রভিশন হিসাবেই রাখা হয়েছে। এটা ভাল নাকি মন্দ, সেটা ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে।
“এখন বাস্তবায়নের দিক থেকে অতিরিক্ত মাত্রায় যদি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সেই জায়গায় যদি কোনো প্রভিশন (নির্দেশনা) হয়ে থাকে, সেটা ন্যায্য। কিন্তু সেকশন ৫৪ ধারা খারাপ বলা আমার পক্ষে কঠিন।”
অপব্যবহার হয়েছে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, অতীতে ‘সময়ে সময়ে’ হয়তো এটা হয়েছে।
তার ভাষায় ৫৪ ধারা হলো- বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার, সন্দেহ করে গ্রেপ্তার।
“এখন আপনারা যদি বলেন, পুলিশ এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সক্রিয় হবে কেবল অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর, তাহলে তো হয় না। পুলিশ যদি মনে করে, কেউ একটা অপরাধ করতে যাচ্ছে, তাকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা পুলিশের আছে।”
১৯৯৮ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করার পর পুলিশ-কার্যালয়ে তার মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার পর বিচারপতি হাবিবুর রহমান খানের নেতৃত্বে একটি কমিটি তদন্ত শেষে ৫৪ ও ১৬৭ ধারা সংশোধনের পক্ষে কয়েকটি সুপারিশ করে।
সেসব সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় ব্লাস্ট নামের একটি সংগঠন রিট করলে ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল আদালত এ বিষয়ে কয়েক দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেয়। রায়ে ছয় মাসের মধ্যে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার ও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে প্রচলিত বিধি সংশোধন করার পাশাপাশি ওই ধারা সংশোধনের আগে কয়েক দফা নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয় সরকারকে।
এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করল আপিল বিভাগ।
এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, “আমি যতদূর শুনেছি, আপিল বিভাগ আবেদন ডিসমিস করে দিয়েছে।এখন আদালত পর্যবেক্ষণ মডিফাই করে দিবে। অবস্থা সেটা হলে পূর্ণাঙ্গ রায় না পেলে মন্তব্য করা কঠিন।”
আদালতের নির্দেশনা পেলে প্রয়োজনে ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধনের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “ফৌজদারি কার্যবিধি যেটা বাংলাদেশে আছে, এমন না যে এটাকে সংশোধন করা হয় নাই। যুগোপযোগী করতে, মানুষের স্বার্থে ব্যবহার উপযোগী করতে সেটা বহুবার এই দেশেই সংশোধন করা হয়েছে। জনগণের উপকারার্থে দরকার হলে আমরা আবার সংশোধন করব।”