বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে ওই অস্ত্রের মজুদ নিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোটকে ইঙ্গিত করে ঢাকার পুলিশ কমিশনারের দেওয়া বক্তব্যের তীব্র সমালোচনাও করেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, “উত্তরার অস্ত্র উদ্ধারের এলাকাটি তিন স্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে আবদ্ধ। সুতরাং অশুভ উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রের প্রশ্রয়ে এই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উত্তরার খালে ফেলা হয়েছিল বলে জনগণ বিশ্বাস করে।
“আমরা মনে করি, সন্দেহভাজন জঙ্গি ধরা, রিমান্ডে নিয়ে ক্রসফায়ারে হত্যা এবং উত্তরার খালে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার একই যোগসূত্রে গাঁথা একটি অশুভ মহাপরিকল্পনার অংশ।”
শনিবার উত্তরার ১৬ নম্বর সেক্টরের দিয়াবাড়ি খাল থেকে ৯৭টি পিস্তল, ৪৬২টি ম্যাগাজিন, এক হাজার ৬০টি গুলি, ১০টি বেয়নেট ও ১০৪টি গুলি তৈরির ছাচ উদ্ধার করা হয়। পরদিন এক কার্টন বন্দুকের ম্যাগজিন উদ্ধার করা হয়।
‘তিনি প্রজাতন্ত্রের নন, হাসিনার কর্মচারী’
সোমবার এক ব্রিফিংয়ে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বিএনপি-জামায়াত জোটকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘নারী-শিশু হত্যায়’ জড়িত চক্রটিই ওই অস্ত্র মজুদ করেছিল বলে তাদের ধারণা।
জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী (ফাইল ছবি)
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনারের ওই বক্তব্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যেরই ‘প্রতিধ্বনি’ বলে মন্তব্য করেন রিজভী।
“তার বক্তব্য অনভিপ্রেতই নয়, তার বক্তব্য প্রধানমন্ত্রীর স্বভাবসুলভ বক্তব্যের সমতুল্য। কোনো ঘটনা ঘটলেই প্রধানমন্ত্রী যেমন চট করে বলে দেন যে, এটার সাথে বিএনপি জড়িত। ঠিক তেমনিও তার পুলিশ কমিশনারের বক্তব্যে শুনে মনে হয়েছে, তিনি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী নন, শেখ হাসিনার কর্মচারী।
“তার বক্তব্যে আওয়ামী নেতাদের বক্তব্যের প্রতিধ্বনি হয়েছে। মনে হয়েছে, ঢাকার পুলিশ কমিশনার আওয়ামী লীগ নামীয় দলটির পোর্টফোলিও হোল্ডার।”
উত্তরায় উদ্ধারকৃত অস্ত্রগুলো মূলত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমদানি ও ব্যবহার করে দাবি করে বিএনপি নেতা রিজভী বলেন, “উদ্ধারকৃত পিস্তলগুলোর মধ্যে ৯৫টিই ৭.৬২ বোরের, যা পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীরই কাছে থাকে।”
ওই অস্ত্রের রহস্য উদঘাটিত হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “এটি আর রহস্যের মধ্যে নেই। ক্রমাগতভাবে রহস্যের কুয়াশা ভেদ করে মানুষের মনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, তাদের (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) সহযোগিতা ছাড়া তুরাগ নদীর খালে এসব অস্ত্র পৌঁছাত না। ওই অস্ত্রগুলো আনা হয়েছিল অপরাধীদের জন্য, যারা অপরাধ সংঘটন করে।”
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী এসময় প্রশ্ন রেখে বলেন, “মানুষের মনে আরও সন্দেহ তীব্র হয়ে উঠেছে যে, কীভাবে প্রকাশ্য দিনের বেলায় নম্বর প্লেট ছাড়া একটি কালো রঙের পাজারো গাড়ি এই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র খালে ফেলে চলে গেল? কারণ এলাকাটি তিন স্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তার মধ্যে আবদ্ধ, যা গণমাধ্যমের প্রতিবেদনেও প্রকাশিত হয়েছে।”
বন্দুকযুদ্ধ নিয়ে পুলিশের বক্তব্য জনগণ বিশ্বাস করে না দাবি করে তিনি বলেন, এগুলোকে জনগণ ‘ঠাণ্ডা মাথার খুন’ বলেই বিশ্বাস করে।
“এমনকি সরকারের একজন মন্ত্রীও বলেছেন, পুলিশ ব্যর্থ হয়ে ক্রসফায়ার দিচ্ছে প্রকৃত জঙ্গি ধরতে ব্যর্থ হয়ে এবং চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডগুলোর রহস্য উৎঘাপন করতে না পেরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেদারছে ক্রসফায়ার দিচ্ছে।
“এতে প্রতীয়মান হয় যে, পুলিশের বন্দুকযুদ্ধ সত্যকে চেপে রেখে ন্যায়কে কবর দেওয়া, প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করে ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক ফয়দা লুটতে সহায়তা করা।”
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবীর খোকন ও হারুনুর রশীদ উপস্থিত ছিলেন।