প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রামের সহায়তার ওষুধ খাতের নৈরাজ্য-অনিয়ম প্রতিরোধে অনলাইন রিপোটিং প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। যা শিগগিরই জনগণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
মঙ্গলবার (২১ জুন) সকালে দশম জাতীয় সংসদের একাদশতম অধিবেশনে হাবিবুর রহমানের (বগুড়া-৫) টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম একথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রামের সহায়তার ওষুধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া, নকল ওষুধ এবং ওষুধের নির্ধারিত মূল্যের অধিক মূল্যে বিক্রয়ের বিষয়ে অনলাইন ভিত্তিক রিপোটিং-এর জন্য ওয়েব পোর্টাল ও মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন শীর্ষক একটি প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এটুআই প্রোগ্রামের পরামর্শক্রমে ও সহায়তায় মেসার্স টেকনোভিস্টা লিমিটেড নামক একটি সফটওয়্যার ডেভেলপিং প্রতিষ্ঠান সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের কাজটি সম্পাদন করেছে যা অচিরেই জনগণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। উক্ত সফটওয়্যারের মাধ্যমে জনগণ ওষুধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া বিষয়ে রিপোর্ট করতে পারবে, ওষুধের নির্ধারিত মূল্য যাচাই করা সম্ভব হবে। দেশের যে কোনো এলাকায় প্রাপ্ত নকল বা কাউন্টারফিট ওষুধ সম্পর্কে স্বল্প সময়ে নিশ্চিত হতে পারবে এবং ওষুধ সংক্রান্ত যে কোনো অভিযোগ দ্রুত দাখিল করতে পারবে।
আদর্শ মডেল ফার্মেসীর স্বতন্ত্র মনোগ্রাম তৈরির কাজ চলছে:
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, জনস্বাস্থ্যের নিরাপত্তার স্বার্থে দেশে জীবন রক্ষাকারী নকল ওষুধ উৎপাদন ও বিক্রয়কারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এবং এ ব্যবস্থা চলমান রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দেশে জীবন রক্ষাকারী নকল ওষুধ উৎপাদন ও বিক্রয়কারীদের বিরুদ্ধে সরকারের ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর সর্বদাই সচেষ্ট আছে এবং সরকার এ ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করছে।
এ লক্ষ্যে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর অভিযান পরিচালনা করে নিয়মিত মনিটরিং করে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, জানুয়ারি ২০১৫ হতে মে ২০১৬ পর্যন্ত সারাদেশে ভেজাল/নকল ওষুধ উৎপাদন ও বিক্রি করার দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত ১,৯৯৭ টি মামলা দায়ের করে ৫কোটি ৩৩লাখ ৫০হাজার তিনশত টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে এবং ৫৭ জন আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে, ৬৮টি প্রতিষ্ঠান সিলগালা করা হয়েছে।
আনুমানিক ২৭কোটি টাকার ওষুধ জব্দ ও ধ্বংস করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
এছাড়াও জানুয়ারি ২০১৫ হতে মে ২০১৬ পর্যন্ত ভেজাল ও নকল ওষুধ উৎপাদন ও বিক্রি করার দায়ে ড্রাগ কোর্টে ৩৯টি এবং ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে ১৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার ভেজাল, নকল ও মানহীন ওষুধ বিক্রি বন্ধে দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আদর্শ মডেল ফার্মেসী স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ বাংলাদেশকে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে আর্ন্তজাতিক সংস্থা ম্যানেজমেন্ট সায়েন্স ফর হেলথ (এসএসএইচ) এর অ্যাক্রিডিটেড ড্রাগ সেলার (এডিএস) প্রকল্প।
আদর্শ মডেল ফার্মেসির জন্য একটি স্বতন্ত্র মনোগ্রাম তৈরির কাজ চলছে। আদর্শ মডেল ফার্মেসীর আকার, ধরন ও কার্যক্রমের উপর ভিত্তি করে ‘লেভেল-১ ও লেভেল-২’ দুটি ক্যাটাগরি করা হয়েছে।
লেবেল-১ ক্যাটাগরির আদর্শ মডেল ফার্মেসি পরিচালিত হবে এ-গ্রেড ফার্মাসিস্ট দ্বারা এবং লেবেল-২ পরিচালিত হবে বি এবং সি-গ্রেড ফার্মাসিস্ট দ্বারা।
আদর্শ মডেল ফার্মেসি থেকে জনগণ মানসম্মত ওষুধ কেনার পাশাপাশি যেন ওষুদের ব্যবহারবিধি ও গুনাগুণ সম্পর্কেও সঠিক ধারণা পায় সেজন্য কাউন্সিলিংয়ের জন্য পৃথক ব্যবস্থা থাকবে বলেও উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
চাহিদার তুলনায় চিকিৎসক-সেবিকার সংখ্যা অপ্রতুল:
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এম এ লতিফের (চট্টগ্রাম-১১) প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশে রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত সর্বমোট এমবিবিএস চিকিৎসকের সংখ্যা ৭৭ হাজার এবং ডেন্টাল সার্জন (বিডিএস) ৬ হাজার ৯৭৬ জন। মুঞ্জুরিকৃত নার্সের সংখ্যা মোট ২২ হাজার ৯৩৯ জন। চাহিদার তুলনায় চিকিসক এবং সেবিকার সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। প্রতি বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসক নিয়োগ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সেবিকার ১০ হাজার টি নতুন পদ সৃজন করা হয়েছে। তার মধ্যে ৩ হাজার ৬১৬ শূণ্যপদে সেবিকা নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
নুরুল ইসলাম ওমরের (বগুড়া-৬) অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, ‘পল্লী চিকিৎসকরা চিকিৎসা পেশায় কোনো স্বীকৃত সনদধারী নন। সেহেতু তাদের নিবন্ধন প্রদানের বিষয়ে সরকারের আপাতত কোনো পরিকল্পনা নেই।