মঙ্গলবার মহাখালীতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘জাতীয় বাজেট ২০১৬-১৭ পর্যালোচনা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জ্জা আজিজ বলেন, “বাজেটে অর্থমন্ত্রী সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন। কিন্তু রাজস্বের মূল অংশ আসে কর থেকে। এবার পরোক্ষ কর ৬১ শতাংশ ধরা হয়েছে। এতে নিম্ন আয়ের মানুষেরাই বেশি চাপে পড়বে।”
ব্র্যাকের গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগ এবং অ্যাডভোকেসি ফর সোশ্যাল চেইঞ্জ কর্মসূচি ওই সেমিনারের আয়োজন করে।
স্বাস্থ্য খাতে সরকার যে ব্যয় করে তার সিংহভাগই স্বচ্ছলদের পেছনে ব্যয় হয় বলেও মন্তব্য করেন আজিজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “বিশ্ব ব্যাংকের এক তথ্যে দেখা গেছে চাইল্ডকেয়ার ছাড়া বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে যে ব্যয় হয় তাতে বেশি উপকারভোগী হয় স্বচ্ছলরাই।”
ব্র্যাকের অ্যাডভোকেসি ফর সোশ্যাল চেইঞ্জের পরিচালক কেএএম মোরশেদের সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আরেক উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ আকবর আলি খান।
আকবর আলি খান বলেন, “কেবল অর্থ বরাদ্দ দিলেই হবে না, প্রকল্পও থাকতে হবে। আবার সেই প্রকল্প কতটা কার্যকর ও দুর্নীতিমুক্ত তারও তদারকি করতে হবে।”
তিনি প্রশ্ন রাখেন, “শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে যদি তা শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের বেতনেই খরচ হয়ে যায়, তবে শিক্ষার মানোন্নয়নের খরচ কোথায়? বাজেট কেবল উচ্চাভিলাষী হলেই চলবে না, বাস্তবায়নযোগ্যও হতে হবে।”
কর সংস্কারের পরামর্শ দিয়ে আকবর আলি বলেন, “অর্থমন্ত্রী নতুন ৩ লাখ করদাতাকে করের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন। এক্ষেত্রে বিনিয়োগ কমে যেতে পারে। আমি মনে করি, উচ্চহারে কর না বাড়িয়ে ধীর গতিতে বাড়াতে হবে। অন্যথায় বিভিন্ন শ্রেণির অসন্তোষের কারণে বিনিয়োগ ব্যহত হতে পারে।”
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাকের গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল বায়েস।
মূল প্রবন্ধে ভিশন-২০২১ ও এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য বাস্তবতার নিরীখে বাজেটের বর্তমান আকার, বাজেট ঘাটতি, কর কাঠামো ও করনীতির সীমাবদ্ধতাসহ সমসাময়িক উন্নয়নের নানা দিক তুলে ধরা হয়।
একই সঙ্গে সরকার-এনজিও সম্পৃক্ততা শক্তিশালীকরণ, উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নে টাস্কফোর্স সৃষ্টি, সামাজিক ও স্বাস্থ্যখাতে অধিকতর বরাদ্দ এবং কৃষিবান্ধব নীতি-সহায়তা ও কৃষি বিনিয়োগসহ আটটি সুপারিশ করা হয় ওই প্রবন্ধে।
আব্দুল বায়েস সরকার-এনজিও সম্পৃক্ততার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, সত্তরের দশকে ব্র্যাক- এর ওর্যাল স্যালাইন কর্মসূচি, আশির দশকে শিশু-টিকা ও নব্বইয়ের দশকের পর থেকে যক্ষ্মা প্রতিরোধ, বর্গাচাষি ঋণ বিতরণ, হতদরিদ্র সহায়তা এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সরকারি কর্মসূচি সফল করে ব্র্যাক এখন সামাজিক খাত উন্নয়নে সরকারের পরীক্ষিত সহযোগী।