ভিসার চাপ কমাতে এবং ভিসাপ্রক্রিয়া আরো সহজ করতে ভারত বেশ কিছু উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে দেশটির হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। গতকাল সোমবার ঢাকার বারিধারায় ভারতীয় নতুন চ্যান্সারি কমপ্লেক্সে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ তথ্য জানান।
তবে সেই উদ্যোগগুলো কী হবে তা স্পষ্ট করেননি হাইকমিশনার। তিনি বলেন, ‘কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, তা আমি এখনই প্রকাশ করতে পারছি না। কারণ আমরা এখনো এসব উদ্যোগের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাইনি।’
ভারতীয় হাইকমিশন আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে গত ৪ জুন নিয়মিত ভিসা আবেদন কেন্দ্রের পাশাপাশি বারিধারার চ্যান্সারি কমপ্লেক্সে সাক্ষাৎকারের তারিখ ছাড়াই ‘পর্যটক (ট্যুরিস্ট) ভিসার’ আবেদনপত্র জমা নিতে ‘ঈদ ভিসা ক্যাম্প’ চালু করে। আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তা চলার কথা রয়েছে। এ ক্যাম্পে গতকালও ছিল ভিসাপ্রত্যাশীদের প্রবল চাপ। প্রায় ১০ হাজার আবেদনকারী লাইনে ছিলেন।
ঈদ ভিসা ক্যাম্প ভিসা প্রত্যাশীদের মধ্যে যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে তা বিবেচনায় নিয়ে হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমবারের মতো এ ক্যাম্প কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। তবে এটিই শেষ নয়। কয়েক মাসের মধ্যে এ ধরনের আরেকটি ক্যাম্প করা হবে।
হর্ষবর্ধন বলেন, সোমবার দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ১০ হাজার ভিসাপ্রত্যাশী আবেদনপত্র জমা দিতে এসেছেন। আগামী বৃহস্পতিবার নাগাদ এ ক্যাম্পের মাধ্যমে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার ভিসা দেওয়া সম্ভব হবে।
ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ক্যাম্প থেকে কাউকেই ফিরিয়ে না দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ চলছে। আবেদনকারীদের ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা থাকলে তাঁদের এক বছরমেয়াদি মাল্টিপল ভিসা দেওয়া হচ্ছে, যাতে এ সময়ের মধ্যে আর তাঁদের ভিসার জন্য আসতে না হয়। শুধু ঢাকা নয়, আগামীতে বাইরেও ভিসা ক্যাম্প করার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে।
চলতি ভিসা ক্যাম্প কার্যক্রমের মেয়াদ বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা আছে কি না জানতে চাইলে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, সক্ষমতার পাশাপাশি আরো কয়েকটি বিষয়ের ওপর এটি নির্ভর করছে। তবে তাঁরা আজ মঙ্গলবার থেকে পরবর্তী তিন দিনের ওপর গুরুত্ব দিতে চান। ক্যাম্প কার্যক্রমের শেষ দিন পর্যন্ত তাঁরা সর্বোচ্চ সেবা দিতে আগ্রহী।
বাংলাদেশিদের জন্য ভারত ‘আগমনী ভিসা’ (ভিসা অন অ্যারাইভাল) ব্যবস্থা চালু করবে কি না জানতে চাইলে হাইকমিশনার বলেন, আগামী কয়েক মাসে ভিসাপ্রক্রিয়া সহজ করতে ভারত বেশ কিছু উদ্যোগ নেবে। তিনি বলেন, ‘অনেক ব্যবস্থাই বিবেচনায় আছে। সেগুলো প্রয়োগ করার আগে আমাদের নিজস্ব ব্যবস্থায় অনেক কাজ করার আছে।’
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশিরা যাতে সহজে ভিসা পেতে পারেন সে জন্য তাঁদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
ভারতীয় হাইকমিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি (পলিটিক্যাল অ্যান্ড ভিসা) মনুস্মৃতি বলেন, এ ভিসা ক্যাম্প কার্যক্রম একটি সম্মিলিত প্রয়াস। ক্যাম্পে নারী কর্মীরা কঠোর পরিশ্রম করছেন। এটি প্রশংসনীয়।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে ভারতের উপহাইকমিশনার আদর্শ সোয়াইকা, রাজশাহীতে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়, প্রেস অ্যাটাশে রঞ্জন মণ্ডল উপস্থিত ছিলেন।
ভারতীয় হাইকমিশন জানায়, যাঁদের সাক্ষাতের ‘তারিখ/ই-টোকেন’ নেই শুধু তাঁদের পর্যটক ভিসার আবেদনপত্র গ্রহণ করা হচ্ছে এই ঈদ ক্যাম্পে। যেসব আবেদনকারীর সাক্ষাতের তারিখ আছে তাঁরা ঢাকার গুলশান, ধানমণ্ডি, উত্তরা ও মতিঝিল এবং ঢাকার বাইরে বরিশাল, ময়মনসিংহ ও খুলনায় ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রে (আইভিএসি) আবেদনপত্র জমা দিতে পারবেন। মেডিক্যাল, বিজনেস ও অন্যান্য ভিসা বিভাগের আবেদনপত্র সংশ্লিষ্ট আইভিএসি কেন্দ্রগুলোতে গৃহীত হবে। বর্তমানে ‘পর্যটক ভিসা’ ছাড়া অন্য কোনো ক্যাটাগরির জন্য ‘তারিখ/ই-টোকেন’ প্রয়োজন হয় না।