বান্দরবানে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক মানবাধিকার সম্মেলন

বান্দরবানে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক মানবাধিকার সম্মেলন

॥ বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের রংপুর অঞ্চলের গর্ভনর এডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া এমপি বলেছেন, দেশে গণতন্ত্র না থাকলে কখনো মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় না। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের মানসকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বজন হারানোর সকল ব্যাথা ভ’লে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। একজন দক্ষ নাবিকের মতো নেতৃত্ব দিয়ে আজ বাংলাদেশকে মর্যাদাশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার আপ্রাণ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
গতকাল বান্দরবান ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠির সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক মানবাধিকার সম্মেলন ২০১৬ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া এমপি আরো বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের বসবাস থাকলেও প্রত্যেকেরই নিজ নিজ কৃষ্টি, ঐতিহ্য, ইতিহাস রয়েছে। জনসংখ্যায় কম হলেও জাতি কোন ক্ষুদ্র হতে পারে না। সকল জাতি গোষ্ঠির ঐহিত্যকে সম্মান দিতে হবে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে দেশের মাটিতে গণতন্ত্র রক্ষা করতে হবে। তাহলেই মানুষ তাদের মৌলিক অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল দেশে পরিণত হবার দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছে গেছে। ডিজিটাল সেবা গ্রহণের মাধ্যমে মানুষ জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পেয়েছে। তিনি বলেন, বান্দরবানসহ সারা দেশে আজ ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়িত হয়েছে। তিনি বলেন, দীর্ঘসময় ধরে দেশের প্রকৃত ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছিল। নতুন প্রজম্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস উল্টো পড়ানো হয়েছিল। জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার দেশের প্রকৃত ইতিহাস জাতির সামনে তুলে ধরেছেন। সকল দুঃখ যন্ত্রণার কথা ভুলে, অশ্রু মুছে দেশের ১৬ কোটি মানুষের ভাগ্যান্নয়নে নিরসল প্রচেস্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, নারীরা পরিবারিক,সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে নিগৃহিত। একটি নারীর সঠিক কোন পরিচয় নেই। পিতা,ভাই,সন্তান ও স্বামীর কাছে প্রায়শই নারীদের বঞ্চিত হতে হয়। তিনি বলেন, নারীদের অধিকার সুরক্ষায় কঠোর আইন হয়েছে। এ আইনের সঠিক প্রয়োগই নারীদের সুরক্ষা করতে পারে। তিনি বলেন, আমরা একজন ভাল শ্বাশুড়ী হবো। তাহলেই আমাদের পুত্রবধুরা ভাল শ্বাশুড়ীতে পরিণত হবে। আমরা যেন সেই লক্ষ্যে সামনে এগিয়ে যাই। পরে তিনি স্বরচিত একটি কবিতা আবৃত্তি করে শুনানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক দীলিপ কুমার বণিক বলেন, বান্দরবান একটি সম্প্রীতির জেলা। এখানে ১১টি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠির জনগণের পাশাপাশি বাঙালিদের শান্তিপ্রিয় বসবার রয়েছে। এ এলাকার সার্বিক উন্নয়নের কথা চিন্তা করে ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। সরকার এ অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে সচেষ্ট। জেলা প্রশাসক বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি এলাকাবাসীর মঙ্গলের জন্য সার্বক্ষণিক চিন্তা করছেন। তিনি নিত্যনতুন কর্মসূচি নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামকে একটি বৈষম্যহীন সাজানো ফুলের বাগানে পরিণত কাজে নিয়োজিত আছেন। জেলা প্রশাসক বলেন, বান্দরবানে মাঝে মধ্যে কিছু বিছিন্ন ঘটনা ঘটলেও সমতল জেলাগুলোর তুলনায় খুবই কম। তিনি বলেন, মানবাধিকার কমিশন সরকার গঠিত একটি সেবামূলক সংস্থা। এ প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের আস্থা রয়েছে। তিনি বলেন, মানবাধিকার লংঘনের বহু ঘটনা সরকারী ভাবে সমাধান করা হয়ে থাকে। সরকার এ ব্যাপারে খুবই সর্তক অবস্থায় রয়েছে।
মানবাধিকার কমিশনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মানবতাবাধী ড.সাইফুল ইসলাম দিলদার বলেন, তিন পার্বত্য জেলার বৃহৎ জনগোষ্ঠি এক সময় মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলো। সরকার শান্তিচুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ের জনগণের দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসে। তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করা হয়েছে। কিন্তু এই বাজেটে তিন পার্বত্য জেলার জনগণের কথা তেমন চিন্তা করা হয়নি। তিনি বলেন, এ অঞ্চলের জনগণের জীবনমান উন্নয়নে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করে ৩০ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা উচিত। এতে পার্বত্য চট্টগ্রামে শিল্প গড়ে উঠবে। জনগণের জীবনযাত্রার মান বাড়বে। মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। তিনি বলেন, জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি আসলেই মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। সাইফুল ইসলাম বলেন, মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে রাষ্ট্র ওয়াদাবদ্ধ। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষ এখানো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কর নিয়ে সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারী,এমপি ও মন্ত্রীদের বেতন বৃদ্ধি করলে চলবে না। বৃহত্তর জনগণের স্বার্থ পরিপন্থী কোন কাজ মেনে নেয়া যায় না। তিনি বলেন, আমরা আমাদের জম্ম,মৃত্যুর স্বাভাবিক নিশ্চয়তা চাই। এটিই হলো সত্যিকারার্থে মানবাধিকার। এজন্যই বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী ও বান্দরবান জেলা শাখার সভাপতি ডনাই প্রু নেলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে কমিশনের রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সভাপতি ড.সুপ্রিয় বড়–য়া,খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি এডভোকেট মহিউদ্দিন কবির,বান্দরবান জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এম.রুহুল আমিন,চট্টগ্রাম মহানগরের গর্ভনর অব অনার সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম কমু, নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের প্রতিনিধি ফজলুল করিম মাষ্টার,বগুড়া অঞ্চলের প্রতিনিধি নুরুন্নবী গুরু,বান্দরবানের বিশেষ প্রতিনিধি নু শৈ প্রু চৌধুরী, ঢাকা মিরপুরের বিশেষ প্রতিনিধি গোলাম কিবরিয়া,ঢাকা মহানগরের গর্ভনর সিকদার আলী জাহিদ এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশেষ প্রতিনিধি এম.এ সোহেল আহমদ মৃধা প্রমুখ বক্তৃতা করেন। সম্মেলন উপলক্ষ্যে তিন পার্বত্য জেলা থেকে মানবাধিকারকর্মীগণ ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠির সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউটে সমবেত হন। দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়। এর আগে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা জেলা শহরের বিভিন্ন সড়ক পদক্ষিণ করে।

মুক্ত গণমাধ্যম চাই : সকল গণমাধ্যমে এক নীতিমালা, তথাকথিত ওয়েজ বোর্ড বাতিল, নিজস্ব বেতন বোর্ড, বিজ্ঞাপন ও ক্রোড়পত্র নীতিমালা নিয়ন্ত্রণ মুক্ত, প্রয়োজনীয় কাঁচামালের মূল্য কমানো ও মফস্বলের পত্রিকাগুলো সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে টিকিয়ে রাখতে হবে

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930