॥ বিশেষ প্রতিনিধি, বান্দরবান ॥ জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক বলেছেন, জেলার থানছি উপজেলাতে অনুপস্থিত থাকা সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা প্রতিবেদন তৈরী হচ্ছে। কর্মস্থলে না থাকার বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে প্রেরণ করা হবে। তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে বলেন, সকল ইউএনও’দের কর্মস্থলে থাকা বাধ্যতামুলক। জেলা প্রশাসক বলেন, প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের মাঝে সুন্দর সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করলে এলাকার সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করা যায়।
গতকাল বান্দরবান জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা আইন শৃঙ্গলা কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক এ কথা বলেন। জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে থানছি উপজেলার খাদ্য সংকটের সংবাদ বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রচার হয়েছে। তিনি বলেন, সংবাদ প্রচারের পর বিষয়টি নিয়ে থানছি উপজেলাতে সকলের উপস্থিতিতের বৈঠক হয়েছে। দুর্গম এলাকার জনগণের কাছে হেলিকপ্টার যোগে ৮২ মেট্রিক টন চাল পাঠানো হয়েছে। জেলা প্রশাসক বলেন, থানছি একটি দুর্গম পার্বত্য জনপদ। ঐ এলাকার ভৌলিক সীমাবদ্ধতাকে মেনে নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, বান্দরবানের খাদ্যাভাবের বিষয়টি পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপির সুনজরে আছে। তিনি গত শনিবার পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে বান্দরবান থেকে তিন্দু পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের কাজের অর্থ ছাড়ের বিষয় নিয়ে আলাপ করেছেন। জেলা প্রশাসক বলেন, সরকার এলাকার জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। দুর্গম এলাকার যাতে উন্নতি হয় এজন্য সরকারি সহায়তা নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। জেলা প্রশাসক বলেন, এলাকার সমস্যা সম্পর্কে প্রথমে প্রশাসনকে অবহিত করা উচিত। এব্যাপারে জনপ্রতিনিধিগণ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবেন। তিনি বলেন, থানছি উপজেলার খাদ্য পরিস্থিতির বর্তমান অবস্থা নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের একটি প্রেস ব্রিফিং আয়োজন করা প্রয়োজন। এতে মিডিয়া এলাকার সর্বশেষ তথ্যাদি সংগ্রহ করতে পারবেন। জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, মিডিয়ার চোখে সমস্যার সংবাদ যেমন গুরুত্ব পায় তেমনি সরকারের ভাল কাজ গুলোকে সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, সরকারের গঠনমুলক কাজ গুলোকে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে ফলাও ভাবে প্রচার করতে হবে। জেলা প্রশাসক বলেন, বর্তমান সময়ে মিডিয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। বিভিন্ন সংকটে জনগণ মিডিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, থানছিতে বর্তমানে খাদ্য সংকট নেই। তিন্দু ও রেমাক্রি ইউনিয়নের জন্য বরাদ্দকৃত খাদ্যশস্য দুর্গম এলাকার জনগণের মাঝে বিতরণ হচ্ছে। জেলা প্রশসক বলেন, ভৌগলিক কারণে এবং সাঙ্গু নদীতে নাব্যতা সংকটের কারণে খাদ্যশস্য পাঠানোর ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা দেখা দেয়। জেলা প্রশাসক বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ইউপি নির্বাচনের কারণে ঐদুইটি এলাকায় বেশি মানুষের যাতায়াত ছিলো। বর্ধিত মানুষের চাহিদা মিটাতে গিয়ে কিছুটা খাদ্যের অভাব দেখা দিতে পারে। এছাড়াও বান্দরবান থেকে তিন্দু রেমাক্রি ও বড়মদক পর্যন্ত পর্যটকদের বিচরণ রয়েছে। পর্যটকদের জন্য খাদ্যের যোগান দিতে গিয়েও খাদ্যের অভাব হতে পারে।
আইন শৃঙ্গলার বৈঠকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, জনস্বাস্থ্য,বিদ্যুৎ সরবরাহ,শহর পরিস্কার পরিচ্ছনতা রক্ষা করাসহ সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া জঙ্গী তৎপরতা এবং সাম্প্রতিক সময়ে দুই গরু ব্যবসায়ী ও নাইক্ষংছড়িতে বৌদ্ধ ভিক্ষু হত্যার বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ হারুনুর রশিদ, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক মোঃ আলতাফ হোসেন,বিদ্যুত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, সিভিল সার্জন ডাঃ উদয় শংকর চাকমা,বান্দরবান প্রেসক্লাবের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বাচ্চু, থানছি উপজেলা চেয়ারম্যান ক্যহ্লাচিং, রুমা উপজেলা চেয়ারম্যান অংথোয়াই চিং, ৬৯ পদাতিক বিগ্রেডের কর্মকর্তা মেজর মেহেদী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলাম, আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কাজল কান্তি দাশ ও শফিকুর রহমান, জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক এ.কেএম জাহাঙ্গীর বক্তৃতা করেন।