‘ন্যাশনাল স্পেশিয়াল ডেটা ইনফ্রাস্ট্রাকচার (এনএসডিআই) ফর বাংলাদেশ’ শিরোনামে আন্তর্জাতিক সেমিনারের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি বলেন,“আমাদের ভৌগলিক অবস্থান আমাদের এমন গুরুত্ব দিয়েছে, আমরা যদি এর সবটুকু কাজে লাগাতে পারি তাহলে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে যে সেতুবন্ধন রচনা করা, তা বাংলাদেশই করতে পারবে।”
রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বুধবার সকালে এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দেশের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্তের অপ্রতুলতার কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন,“দেশকে সুন্দরভাবে গড়তে পরিকল্পনা দরকার। কিন্তু এজন্য আমাদের তথ্য-উপাত্তের অভাব রয়েছে। আর এজন্যই আমরা ন্যাশনাল স্পেশিয়াল ডেটা ইনফ্রাস্ট্রাকচার গঠনের উদ্যোগ নিয়েছি।”
এই অনুষ্ঠান থেকেই প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর দামালকোটে স্থাপিত বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তরের ডিজিটাল ম্যাপিং সেন্টারের উদ্বোধন করেন।
তার আগে বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তর, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জাইকার সহযোগিতায় আয়োজিত ‘ন্যাশনাল স্পেশিয়াল ডেটা ইনফ্রাস্ট্রাকচার (এনএসডিআই) ফর বাংলাদেশ’ আন্তর্জাতিক সেমিনারের উদ্বোধন করেন করেণ।
ডিজিটাল ম্যাপিংয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ম্যাপিং থাকলে যে কোনো উন্নয়ন সম্ভব। আমাদের ভৌগলিক অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বৈচিত্র্যময়।
“প্রতিটি গ্রাম ও উপজেলাকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে পারলে, সব সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব।”
সমুদ্র উপকূলে নতুন জেগে উঠা চর ও দ্বীপগুলোর টপোগ্রাফিক জরিপ কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তরের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিচ্ছিন্নভাবে জিও-স্পেশিয়াল ডেটা প্রস্তুত ও ব্যবহার করছে। এনএসডিআই গঠনের মাধ্যমে সব জিও-স্পেশিয়াল ডেটা একই প্লাটফর্মে জিও-পোর্টালে সংরক্ষিত থাকবে। ফলে জিও-স্পেশিয়াল ডেটা ব্যবহারকারী সব প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী ডেটা ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হবে।
শেখ হাসিনা বলেন,আয়তনের দিক থেকে বাংলাদেশ ছোট হলেও বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিসম্পন্ন এই দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিচ্ছে ব্যবহারযোগ্য জমির স্বল্পতা। একদিকে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কৃষি জমি সংরক্ষণ প্রয়োজন, অন্যদিকে কলকারখানা স্থাপন এবং জনবসতির জন্য জমির প্রয়োজন। পাশাপাশি নদী ভাঙনের ফলে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ জমি হারিয়ে যাচ্ছে।
এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আর এজন্য প্রয়োজন ভূমির বিজ্ঞানসম্মত তথ্য-উপাত্ত। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এখন সহজেই দেশের ভূ-প্রকৃতির গঠন এবং বৈশিষ্ট্য নির্ণয় করা যাবে।
তিনি বলেন, সারাদেশের জমির গঠন-প্রকৃতি জানা থাকলে জমি ব্যবহারের কার্যকর পরিকল্পনা করা সহজ হবে। কোথায় শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে, কোন এলাকা কোন ফসলের জন্য বেশি উপযোগী, কোথায় বছরে ২ ফসল আবার কোথায় ৩/৪ ফসল জন্মানো সম্ভব, তা সহজে জানা যাবে।
বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিচ্ছিন্নভাবে ভূপৃষ্ঠের তথ্য-উপাত্ত তৈরি এবং সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,“এনএসডিআই গঠন হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত বিনিময় সহজ হবে।”
এসব তথ্য-উপাত্ত প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আইনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে তথ্য সংরক্ষণ নিয়ে একটি নীতিমালার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
একই ডোমেইন থেকে ডেটা ব্যবহারের ফলে অর্থ ও সময়ের সাশ্রয় এবং দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম গতিশীল ও ত্বরান্বিত হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তর উপকূলবর্তী এলাকার ৪৮টি মানচিত্র প্রণয়ন করে দেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করেছে। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সমগ্র দেশের বৃহৎ স্কেলে ডিজিটাল মানচিত্র প্রণয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ইতোমধ্যে ৯৮৮টি ম্যাপশিটের মধ্যে ৯০০টি ম্যাপশিট প্রস্তুত হয়েছে।
পাশাপাশি ডিজিটাল এলিভেশন মডেল (ডিইএম)এবং ডিজিটাল টেরেইন মডেল (ডিটিএম) প্রস্তুতের কাজ চলছে। এ মডেলগুলো বন্যা, ঘুর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল,সার্ভেয়ার জেনারেল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আবুল খায়ের, বাংলাদেশে জাইকার প্রতিনিধি মিকি ওহাতায়েদা এবং বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত মাসাতো ওয়াতানাবে বক্ত্য রাখেন।