॥ মানিকছড়ি সংবাদদাতা ॥ খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার দূর্গম জনপদে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। শুষ্ক মৌসুমের শুরুতে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় উঁচু স্থানের নলকুপগুলতে এখন পানির দেখা পাচ্ছে না এলাকাবাসী। উপজেলার তৃণমূলে দ্রুত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি ভোক্তভোগীদের।
এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার বাটনাতলী ইউনিয়নের সালদা, গুজাপাড়া, টিলাপাড়া, তিনগইজ্যাপাড়া, থলিপাড়া, সাধুপাড়া, ছদুরখীল মাস্টার পাড়া, চেম্প্রুপাড়া। যোগ্যছোলা ইউনিয়নের কালাপানি, খারিছড়া, রাঙ্গাপানি, গ্যাসফিল্ড, সাপমারা, পাক্কাটিলা। তিনটহরী ইউনিয়নের কুমারি, ধাইজ্যাপাড়া, সাওতালপাড়া, দেবাতলী, ভুতাইছড়ি, চেঙ্গুছড়া, গোদাতলী, ডেপুয়াপাড়া। মানিকছড়ি ইউনিয়নের ফকিরনালা, ওয়াকছড়ি, গবামারা, মলঙ্গীপাড়া, জামতলা, গাইদংপাড়া, লাপাইদংপাড়া, রাঙ্গাপানি, লেমুয়া এলাকায় রয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। নলকুপ না থাকায় এখানকার বাসিন্দারা পাহাড়ী ঝর্ণা, কূয়া, ছড়া বা খালের পানি পান করতে বাধ্য হচ্ছে। যার ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারি অর্থায়নে উপজেলায় বর্তমানে ৪০৬টি রিংওয়েল, ২২৬টি অ-গভীর নলকূপ, ২৬৭টি ডিএসপি এবং ২৬১টি তারা পাম্প, ১৩৮টি অন্যান্য পাম্পসহ মোট ১,১৯৮টি গভীর ও অ-গভীর নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে অকেজো ২৭৫টি, মেরামত যোগ্য (অথচ মেরামত হয়নি) নলকূপ ১০০টি। বিগত ৫ বছরে দু’শতাধিক রিংওয়েল, শতাধিক নলকূপ (ডিএসপি) স্থাপন ও ৩৫টি রিংওয়েল মেরামত করা হয়েছে এবং অন্যান্য সংস্থার মাধ্যমে ৩শতাধিক নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পাশি পাশি ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও বিভিন্ন এন জি ও নলকূপ স্থাপনের কাজ করলেও তাতে মিলছে না পর্যাপ্ত পানি। প্রতি ৫ পরিবারে ১টি নলকূপ স্থাপনের সরকারি নীতিমালা থাকলেও উপজেলায় ১৩,৩৩৫টি পরিবারের বিপরিতে সচল নলকূপ রয়েছে মাত্র সহস্রাধিক যা জনসংখ্যা অনুপাতে পর্যাপ্ত নয়।
কর্তৃপক্ষ বলছেন, প্রয়োজনীয় বরাদ্ধের অভাব, মেরামতের জন্য নেই পর্যাপ্ত অর্থ, প্রতিকুল ভৌগলিক অবস্থান ও পরস্পর বসত ভিটার দূরত্ব বেশি হওয়ায় প্রত্যাশিত সাফল্য অর্জন সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে উপজেলা সদরের হাজীপাড়া, নাথপাড়া, মুজিব নগর, ময়ুরখীল, আমতল, গুচ্ছগ্রাম, মাস্টারপাড়া, রাজপাড়া, বাজার, মুসলিমপাড়া, টিএনটি টিলা ও আশেপাশের সহশ্রাধিক পরিবারের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য কোটি টাকার দু‘টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পাইলিংয়ের কাজ শেষ হলেও দু’বছরে হয়নি পাম্প হাউজ নির্মাণ, টিটমেন্ট প্ল্যান্ট, ওয়াটার রিজারবার ও পাইপ লাইনের কাজ। প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করা হলে উপজেলা সদরে বিশুদ্ধ পানির সংকট কেটে যাবে বলে আশা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তিনটহরী ইউনিয়নের দেবাতলী গ্রামের বাসিন্দা অংসা মারমা জানান, আমাদের গ্রামের অর্ধশতাধিক পরিবাবরে নলকুপ আছে মাত্র দু’টি। পর্যাপ্ত নলকূপ না থাকায় অনেকেই কূয়া বা ছড়ার পানি পান করছে, এতে করে বাড়ছে পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা। তিনটহরী ইউনিয়নের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম বাবুল বলেন, উপজেলার তৃণমূলে বিশুদ্ধ পানীয় জলের সংকট রয়েছে। দেবাতলী গ্রামের নলকুপ সংকটের বিষয়টি আমার নজরে এসেছে, এ ব্যপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনটহরী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সুদীপ কুমার নাথ জানান, এ এলাকার অধিকাংশ টিউবওয়েলের পানিতে আয়রণ। বিশুদ্ধ পানি খেতে পারছি না। ফলে শিশু-কিশোর ও বয়োবৃদ্ধরা নানা রোগ ভোগছে বলে তিনি জানান।
বিশুদ্ধ পানির সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো. আইয়ুব আলী আনসারী বলেন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে কোটি টাকার দু’টি প্রকল্পের কাজ অর্থ সংকটের কারণে দীর্ঘ দিন বন্ধ ছিল। তবে শীঘ্রই এর কাজ আবার শুরু হবে। নলকুপ পর্যাপ্ত বরাদ্ধ না থাকায় কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। তবে উপজেলার তৃণমূলে বিশুদ্ধ পানির সংকট দূর করতে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি।