রাজধানীর হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকায় গড়ে ওঠা ১৮ তলাবিশিষ্ট ভবন ভেঙে ফেলার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।
বৃহস্পতিবার (০২ জুন) সকালে বিজিএমইএ’র ১৮তলা ভবনটিকে অবৈধ ঘোষণা করে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। বিজিএমইএ’র করা আপিল খারিজ করে এ রায় দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ।
হাইকোর্টে এ মামলার অ্যামিকাস কিউরি অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ জানান, হাইকোর্টের রায় বহাল থাকায় ৯০ দিনের মধ্যে বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে হবে।
বিজিএমইএ’র সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আপিল বিভাগের রায়ের কপি পাওয়ার পর আমরা এ রায়ের পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন জানাবো। রিভিউয়ের রায় আমাদের পক্ষে না এলে ভবন সরিয়ে নিতে সময় চাওয়া হবে আদালতের কাছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হাতিরঝিল রাজধানীর এক চিলতে প্রশান্তির ঠিকানা। ঢাকার তেজগাঁও, গুলশান, বাড্ডা, রামপুরা, মৌচাক ও মগবাজারের এলাকার বাসিন্দাসহ এ পথ দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীরা বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন।
সোনারগাঁও হোটেলের পাশে রেলওয়ের জন্য ১৯৬০ সালে সরকারের অধিগ্রহণ করা প্রায় ৬ দশমিক ২১ একর জমিটি ১৯৯৮ সালে কেবলমাত্র একটি স্মারকের মাধ্যমে বিজিএমইএকে দেয় রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো। ১৯৯৮ সালের ২৮ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। নির্মাণ শেষ হলে ২০০৬ সালের ৮ অক্টোবর ১৮তলার বিজিএমইএ ভবন উদ্বোধন করেন সে সময়কার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
এরপর থেকে বিজিএমইএ তাদের প্রধান কার্যালয় হিসেবে ভবনটি ব্যবহার করছে।
শুরু থেকেই রাজউক বলে আসছিলো, ভবনের নকশা সঠিকভাবে করা হয়নি। এ ভবনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোও।
স্বপ্রণোদিত হয়ে জারি করা এক রুলের রায়ে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ বিজিএমইএকে নিজস্ব অর্থায়নে ভবনটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। ভবনটি নির্মাণের আগে ওই স্থানের জমি যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থায় ফিরিয়ে এনে জনকল্যাণে ব্যবহারের নির্দেশ দিয়ে আদালত বলেন, হাতিরঝিল প্রকল্প একটি জনকল্যাণমূলক প্রকল্প। বিজিএমইএ যাদের কাছে ওই ভবনের ফ্ল্যাট বা অংশ বিক্রি করেছে তাদের টাকা ফেরত দিতেও বলেন হাইকোর্ট।
একই বছরের ৫ এপ্রিল বিজিএমইএ’র আপিল আবেদনে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। পরবর্তী সময়ে স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরো বাড়ান সর্বোচ্চ আদালত।
এর দুই বছর পর ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ হাইকোর্টের ৬৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।
এরও তিন বছর পর বৃহস্পতিবার বিজিএমইএ’র ওই আপিল খারিজ করে দিলেন আপিল বিভাগ। ফলে ভবন ভাঙতে সরকারের আর কোনো আইনি বাধা নেই।
আর বিজিএমইএ’র সভাপতি বলছেন, তারা আদালতের রায় মানতে বাধ্য। রিভিউয়ের রায় তাদের পক্ষে না গেলে ভবনটি সরিয়ে নিতে তারা আদালতের কাছে সময় চাইবেন।
এজন্য রায়ের অনুলিপি পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন বলেও জানান বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান।