শনিবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এ অভিযোগ করে বলেন, “গত ১ জুলাই গুলশানের একটি রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে সন্ত্রাসের জন্য দায়ী অপরাধীদের ধরার নামে সরকার যে গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করেছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে- বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গণহারে ধরা হচ্ছে।”
দলীয় সূত্রে ওই ঘটনায় বিএনপি ও দলের অঙ্গসংগঠনের ‘অসংখ্য নেতা-কর্মীকে’ গ্রেপ্তারের তথ্য থাকার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা এহেন গণবিরোধী ও নির্বোধ কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
এসময় অবিলম্বে আটক ‘নিরাপরাধ নেতা-কর্মীদের’ মুক্তি ও তাদের বিরুদ্ধে দায়ের ‘মিথ্যা মামলা’ প্রত্যাহারের দাবিও জানান নজরুল ইসলাম খান।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে গুলশান হামলার পর সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেওয়া জাতীয় ঐক্যের ডাক নিয়ে সরকারের মন্ত্রী ও নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনাও করেন তিনি।
“জাতীয় ঐক্য এখন সময়ের দাবি। দেশের এই চরম ক্রান্তিকালে সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী-নেতা তাদের চিরাচরিত ব্লেইম গেইমের আশ্রয় নিয়ে অহেতুক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে দোষারোপ করছে। প্রায় প্রতিদিনই তারা অসত্য, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কথা বলে জনমনে হতাশার সৃষ্টি করছে।”
মধ্যপন্থী, উদার ও জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপি সবসময় সন্ত্রাসবাদ-উগ্রবাদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে কাজ করছে বলেও দাবি করেন দলটির এই নেতা।
“বিএনপি সরকারে থাকাকালে সফলভাবে উগ্রবাদ দমনে ব্যবস্থা নিয়েছিল। এর সঙ্গে জড়িত মূল নেতাদের আটক করে বিচার করেছিল এবং সমাজে স্বস্তি ও শান্তি ফিরিয়ে এনেছিল।”
খালেদা জিয়ার জাতীয় ঐক্যের ডাকে সাড়া না দিয়ে সরকার ‘চরম দায়িত্বহীনতার’ পরিচয় দিচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “এই ক্রান্তিকালে মুক্তিযুদ্ধের মতো সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া একান্ত জরুরি। কিন্তু তারা (সরকার) তা না করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির বিরুদ্ধে উদ্ভট ও যুক্তিহীন বক্তব্য দিয়ে জাতিকে বিভক্ত রেখে প্রকৃতপক্ষে সন্ত্রাস ও উগ্রাবাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।”
জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠায় সরকারকে সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে সমগ্র জাতিকে সাহস ও উৎসাহ যোগানোর আহ্বান জানিয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন,“ এ থেকে উত্তরণে জনগণের ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। সরকার যত দ্রুত এই সত্য মেনে নেবে, তত দ্রুত সঠিক পথে দেশ এগুতে পারবে।”
বৃহস্পতিবার গুলশানে একদল বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ছাড়ার যে বিষয় আসে সে প্রসঙ্গ তুলে এক সাংবাদিক জানতে চান এই মুহূর্তে বিএনপির কাছে জামায়াত বড়, না জাতীয় ঐক্য বড়?
জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, “আপনি এটাকে অল্টারনেটিভ করার চেষ্টা করছেন কেন? আমরা বলছি, আমরা জাতীয় ঐক্যের কথা বলছি সবাইকে নিয়ে। কিন্তু সেখানে আলোচনা যখন শুরু হবে, তখন এটা দেখা যাবে, যখন দলের যে সিদ্ধান্ত হবে, সেটা হবে।”
“রাজাকার, স্বৈরাচারকে নিয়ে সরকার গঠন কইরা যখন আরেকজনের বিরুদ্ধে কথা বলে, তখন প্রশ্ন করতে পারেন না আপনারা,” ক্ষোভের সুরে জানতে চান তিনি।
আরেক প্রশ্নে নজরুল ইসলাম খান বলেন, সন্ত্রাসবাদ-উগ্রবাদ মোকাবিলায় বিএনপি সরকারকে সহযোগিতা করতে চাইছে। সেজনই জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন খালেদা জিয়া।
“এখন সরকার নানা শর্তারোপ করে যদি এই সহযোগিতা ফিরিয়ে দিতে চায়, তাহলে দিতে পারে। এই সহযোগিতা ফিরিয়ে দিয়ে যে তারা সমস্যার সমাধান করতে পারছে- তাও তো না। কিন্তু ঘটনার পরিমাণ, সংখ্যা এবং গুণগত অবস্থা তো বাড়ছে ক্রমাগত। প্রথমে একজন-দুই জন করে বিদেশি নিহত হয়েছেন, এবারে একসাথে ১৮ জন বিদেশি নিহত হয়েছেন।”
জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির লক্ষ্যে বিএনপির কার্য্ক্রম তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমাদের নেত্রী বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে আলোচনা করছেন। দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। ২০ দলীয় নেতাদের সঙ্গেও হয়েছে। আরও আলোচনা করে দেশনেত্রী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।”
জাতীয় ঐক্য না হলেও দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে উগ্রবাদ-সন্ত্রাস দমনে বিএনপির পক্ষে থেকে ‘যা কিছু করা প্রয়োজন, তা করা হবে’ বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ফ্রান্সের নিস শহরে বাস্তিল দিবসের উৎসবে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দাও জানান নজরুল ইসলাম খান।
এসময় অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আহমেদ আজম খান, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, খায়রুল কবির খোকন, হারুনুর রশীদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ও কেন্দ্রীয় নেতা তাইফুল ইসলাম টিপু তার সঙ্গে ছিলেন।