সাড়ে ছয়টা বাজতেই ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’ গানে মুখর হলো শহীদ মিনার এলাকা। একে একে জ্বলে উঠলো শত শত মোমবাতি। নানা বয়সী, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন জঙ্গিবাদের আঁধার তাড়াতে আয়োজিত এ প্রদীপ প্রজ্বলন কর্মসূচিতে।
বুধবার (২০ জুলাই) গুলশান ও শোলাকিয়ায় হত্যাকাণ্ডসহ দেশব্যাপী পুরোহিত, ইমাম, ভিক্ষু ও নিরীহ মানুষ হত্যার প্রতিবাদে এ কর্মসূচির আয়োজন করে ‘জেগে ওঠো বাংলাদেশ’। প্রেসক্লাব চত্বরে জমায়েত, শহীদ মিনার অভিমুখে পদযাত্রা, সমাবেশ, প্রদীপ প্রজ্বালন কর্মসূচির মূল দাবি ছিল ‘ধর্মের নামে মানুষ হত্যা বন্ধ কর’।
বিকেল পাঁচটায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে সূচনা বক্তব্য দেন বিশিষ্ট কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন। তিনি বলেন, একাত্তরে ধর্মের নামে মানুষ খুন করা হয়েছিল। এখনো ধর্মের নামে প্রকাশ্যে মানুষ খুন করা হচ্ছে। একাত্তরে বিজয়ী হয়েছিলাম ঐক্যের কারণে, এবারও ঐক্য চাই।
তিনি বলেন, আমাদের ঐক্যের ভিত্তি হবে গণতন্ত্র, মানবতা, মানবাধিকার, অসাম্প্রদায়িকতা ও আইনের শাসন। ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষ ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। আমাদেরও রাজপথে থাকতে হবে, থাকবো।
উদীচীর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসচিব ডা. চন্দন দাশের সঞ্চালনায় জমায়েতে বক্তব্য দেন আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, মুক্তিযোদ্ধা বালাগাত উল্লাহ, নারীনেত্রী নূরজাহান খান প্রমুখ।
রানা দাশগুপ্ত বলেন, জঙ্গিবাদের ভ্রান্ত আদর্শ পরাস্ত করতে হলে আদর্শিক রাজনৈতিক ধারা চাই। সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী জঙ্গিবাদী শক্তি গোটা জাতিকে খামচে ধরতে চাইছে। স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে নস্যাৎ করতে চাইছে। এ অবস্থায় অতীতের ভুলভ্রান্তি দূরে ঠেলে একাত্তরের ওপর দাঁড়াতে হবে।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের আগে যেমন সাংস্কৃতিক আন্দোলন জোরদার করা হয়েছিল, এখনও তেমনটি দরকার। শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নয়, প্রত্যেক নাগরিককে যুক্ত হতে হবে।
এরপর জাতীয় পতাকাশোভিত একটি পদযাত্রা বের করা হয়। পদযাত্রাটি জামাল খান, চেরাগি পাহাড় মোড়, মোমিন রোড, আন্দরকিল্লা হয়ে শহীদ মিনারে সমাবেশে মিলিত হয়।
শহীদমিনারে বক্তব্য দেন মহিলা পরিষদ সভাপতি অধ্যাপিকা লতিফা কবির, পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কমরেড মৃণাল চৌধুরী, খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরীর সহসভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, উদীচী নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপিকা শীল?া দাশগুপ্তা, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অঞ্চল চৌধুরী, কবি আশীষ সেন, কবি কমলেশ দাশগুপ্ত, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের চট্টগ্রাম সমন্বয়ক মহিউদ্দিন, কবি আশীষ সেন, গণজাগরণ মঞ্চ চট্টগ্রামের সমন্বয়ক?ারী শরীফ চৌহান, প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সভাপতি রাশেদ হাসান, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সুচরিত দাশ খোকন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের নগর সভাপতি আল কাদেরী জয়, ছাত্র ইউনিয়ন চবি সভাপতি মেহেদি নোবেল প্রমুখ।
মৃণাল চৌধুরী বলেন, প্রয়োজনে লক্ষ শ্রমিক নিয়ে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ করবো। শিগগির বৃহত্তর শ্রমিক সমাবেশ করবো।