গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার পর জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় ‘জাতীয় ঐক্য’ গড়ার আহ্বান জানালেও জামায়াত-সঙ্গের কারণ দেখিয়ে তা আওয়ামী লীগের প্রত্যাখ্যানের পর আলাদাভাবে এগোনোর পরিকল্পনা নেয় বিএনপি।
এই বিষয়ে দলটির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বললে তারা সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে এক ছাতার নিচে আনার পরিকল্পনার কথা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, “এই লক্ষ্যে ২০ দলীয় জোটের বাইরে সরকারবিরোধী যেসব রাজনৈতিক দল রয়েছে, তাদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে বিএনপি চেয়ারপারসন চা-চক্রে আমন্ত্রণ জানাবেন।”
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের বাইরে থাকা সিপিবি, গণফোরাম, জাসদ (জেএসডি), কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ, বিকল্পধারাকে ওই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
“চিঠির খসড়াও ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে,” বলেন ওই বিএনপি নেতা।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান সোমবার এক আলোচনা সভায় বলেন, “আমরা জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি, কাজ চলছে। দল-মত নির্বিশেষে সকলের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করছি।”
বিএনপি মনে করছে সরকারের জনপ্রিয়তা বর্তমানে তলানিতে ঠেকেছে। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সোমবার এক আলোচনা সভায় বলেন, অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে এখন যারাই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে, তারাই ভোটে জিতবে।
তবে জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলো জোটে থাকায় সরকারবিরোধী অন্য দলগুলোকে পাশে পাওয়া যাচ্ছে না বলে বিএনপির অনেক নেতার মূল্যায়ন।
পাশাপাশি বিএনপি-ঘনিষ্ঠ পেশাজীবীদের মধ্য থেকেও জামায়াতের সঙ্গ ছেড়ে অন্য দলগুলোকে পাশে নিয়ে আন্দোলনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, জাফরুল্লাহ চৌধুরীও জামায়াতকে বাদ দিয়ে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘জাতীয় ঐক্যে’ শরিক করার উদ্যোগ নিতে বিএনপিকে পরামর্শ দেন।
স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতের সংশ্লিষ্টতা ধরে আওয়ামী লীগের বাক-আক্রমণে চাপে থাকা বিএনপি তার পরিপ্রেক্ষিতে আপাতত ২০ দলকে নিষ্ক্রিয় রেখে নতুন উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বলে দলটি নেতাদের কথায় স্পষ্ট।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ এই ইঙ্গিত দিয়ে কয়েকদিন আগেই এক আলোচনা সভায় বলেছিলেন,“এই (জাতীয়) ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে যদি কোথাও কোথাও আমাদের বিশেষ অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়, সেটা অবশ্যই আমরা চিন্তা-ভাবনা করে দূর করব।”
বিএনপি উদ্যোগ নিলে সাড়া দেবেন কি না- জানতে চাইলে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম সে সম্ভাবনা পুরোপুরি নাকচ করে দেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আ স ম রব নেতৃত্বাধীন জেএসডি কিংবা কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন গণফোরামের সঙ্গে কোনো জোটে যাওয়ার ইচ্ছা তাদের নেই।
বি চৌধুরী নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে এর আগে যুগপৎ কর্মসূচি পালন করেছে। কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বিএনপির কয়েকটি কর্মসূচিতে এর আগে যোগ নিয়েছেন।
গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন ইতোপূর্বে বলেছেন, বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রস্তাব দিলে তারা দলীয় পর্যায়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।
বিএনপির এই উদ্যোগের বিষয়ে তাদের দুই দশকের জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীর কোনো নেতার প্রতিক্রিয়া তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।
দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে আন্দোলন চালিয়ে ব্যর্থ বিএনপি এখন একের পর এক মামলায় জেরবার।
কাউন্সিল করলেও নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখনও গঠিত হয়নি, কর্মীদের চাঙা করতে নতুন কোনো কর্মসূচিও দেখা যায়নি দলটির।
এই মাসে বড় দুটি জঙ্গি হামলার পর একে সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে জনগণের সামনে তুলে ধরে আন্দোলন সাজানোর একটি সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে বলে বিএনপির অনেক নেতাই মনে করেন।