মঙ্গলবার সকালে নিজের কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
এর আগে সোমবার রাত সাড়ে ১২টা থেকে পুলিশ ও র্যা ব ঢাকার কল্যাণপুরের এক বাড়িতে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে গিয়ে হামলার মুখে পড়ে। সারারাত উত্তেজেনার পর ভোরে সোয়াট সদস্যরা এক ঘণ্টার অভিযানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়; ওই ভবনের পঞ্চম তলায় পাওয়া যায় সন্দেহভাজন নয় জঙ্গির লাশ।
শেখ হাসিনা বলেন, “আজকেও একটি ঘটনা ঘটেছে কল্যাণপুরে। সেখানে কিছু সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটাবে বলে প্রস্তুতি নিয়েছিল। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে… ত্বরিত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
অভিযানের বিবরণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মধ্যরাত্রেই সে জায়গা ঘেরাও করা হয় এবং সকাল ৫টায় অপারেশন চালানো হয়। নয়জন সন্ত্রাসী সেখানে মৃত্যুবরণ করেছে। একজন আহত অবস্থায় ধরা পড়েছে, একজন পালিয়ে গেছে।”
নিহতদের সবার পরনে কালো পাঞ্জাবি ও সঙ্গে ব্যাকপ্যাক থাকার কথা জানিয়ে আইজিপি শহীদুল হক সকালে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, এরা জেএমবি সদস্য এবং গুলশানের হামলাকারীদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। অভিযানে অংশ নেওয়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, “অত্যন্ত সফলতার সাথে আমাদের পুলিশ বাহিনী এই অপারেশনটা চালিয়েছে। তারা (সন্ত্রাসীরা) সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত ছিল, বোঝা যাচ্ছিল যে তারা যে কোনো ধরনের নাশকতা ঘটানোর জন্য তৈরি হয়ে ছিল। এই পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে বিরাট বড় ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে দেশ রক্ষা পেয়েছে।”
একজন পুলিশ আহত হলেও এ বাহিনীর নেওয়া পদক্ষেপে দেশ, জাতি ‘রক্ষা পেয়েছে’ বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
‘ত্বরিত ব্যবস্থা’ নেওয়ায় জন্য পুলিশ বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “আমাদের এই সন্ত্রাস অবশ্যই মোকাবিলা করতে হবে এবং এটা প্রতিরোধ করতেই হবে। এটাই হচ্ছে সব থেকে বেশি প্রয়োজন। মানুষের জীবন-মান নিশ্চিত করা আমাদের লক্ষ্য।
“আমরা চাইনা- আমাদের দেশটা এভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভয়ারণ্য হোক।”
বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটনের প্রত্যয় জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আজ বিশ্বের কছে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। যদিও এই দুই একটা ঘটনার জন্য আমাদেরকে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। কিন্তু এ অবস্থাও আমরা কাটাতে পারব। কারণ এই জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের স্থান কখনো বাংলার মাটিতে হবে না।”
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডের এই সঙ্কট ‘নতুন নয়’ বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
“আপনাদের মনে থাকা উচিৎ, আমরা দেখেছি এই দেশে ৫০০ জায়গায় একই দিনে বোমা হামলা হয়েছে ২০০৫ সালে। কিবরিয়া সাহেব ও আহসানউল্লাহ মাস্টারকে হত্যা করা হয়েছে। নিজেও হামলার সম্মুখীন হয়েছি। এ জাতীয় ঘটনা কিন্তু পঁচাত্তরের পর থেকে বারবার ঘটে যাচ্ছে।”
গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে কমান্ডো অভিযান চালিয়ে ‘সন্ত্রাসীদের উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে’ ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধারের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
ধর্মের নামে মানুষ হত্যার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “এই যে নতুন উপসর্গ দেখা গেছে। এটাকে যে কোনোভাবে হোক মোকাবিলা করতে হবে।”
এর আগে ‘অগ্নি সন্ত্রাস’ চালিয়ে ‘মানুষ পুড়িয়ে মারা’ মোকাবিলায় সরকারের পদক্ষেপের কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনাদের সহযোগিতায়… প্রতিটি এলাকায়, জেলায় জেলায় আপনারা যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছিলেন বলেই আমরা তা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছি।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের সরকারের নীতি- যে কোনো ধরনের, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ কখনোই বাংলাদেশে হতে দেব না। এটা আমাদের দমন করতেই হবে।
“সেজন্য আমি সমগ্র জাতিকে আহ্বান করায় একটা জাতীয় ঐক্য আজ সৃষ্টি হয়েছে। আজ সকলেই এই জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ বিরোধী।”
সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় জেলা প্রশাসকদের ভূমিকার কথাও মনে করিয়ে দেনে সরকারপ্রধান।
“আপনাদের ওপর বিরাট দায়িত্ব। আপনারা যারা মাঠ প্রশাসনে কাজ করেন, তাদের দায়িত্ব কিন্তু অনেক বেশি।”
সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী তৃণমূল পর্যায়ে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদবিরোধী কমিটি গঠনের কথা তুলে ধরে তিনি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত সবাইকে খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন এই কমিটিকে। পাশাপাশি অভিভাবকদেরও সচেতন করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সর্বোচ্চ মেধা, বুদ্ধি, দক্ষতা ও শক্তি দিয়ে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে এ সন্ত্রাস আমাদের রুখতেই হবে। বাংলাদেশে কখনোই সন্ত্রাসীদের ঠাঁই হবে না।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসকদের জন্য ১৯টি নির্দেশনাও দেন প্রধানমন্ত্রী।
জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম এবং তিনজন জেলা প্রশাসক ও একজন বিভাগীয় কমিশনার চারদিনের সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনাররা ছাড়াও মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী উপদেষ্টা এবং প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে ছিলেন।