॥ মাটিরাঙ্গা প্রতিনিধি ॥ ২০১৫ সালে স্থানীয় গনমাধ্যমকর্মীদের পরামর্শ ও সহযোগিতায় খাগড়াছড়ির তৎকালীন মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বকাউল উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন সবুজ পাহাড়ের কোল ঘেষে দুটি লেকের মাঝে অবস্থিত একটি ন্যাডা পাহাড়কে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন, যার নাম দেয়া হয় “জলপাহাড়”।
স্বল্প পরিসরে শুরু হয় স্বপ্ন বুননের কাজ, এর কিছুদিন যেতে না যেতেই বিশেষ প্রশিক্ষনের জন্য বিদেশ পাড়ি দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বকাউল। তবে তিনি যে বীজ বপন করে গিয়েছেন তার হাল ধরেন পাহাড়ের লাল মাটির গন্ধে মাতোয়ারা এক প্রকৃতি প্রেমিক বি. এম. মশিউর রহমান।
২০০৫ সালে কৃষিতে মাস্টার্স শেষ করে কিছু দিন একটি বেসরকারি কলেজে শিক্ষকতা করে ২০০৮ সালে প্রথম শ্রেণির সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে চাকুরীতে যোগদান করেন তিনি। শুরুতেই সুনামগঞ্জ ও সিলেট ডিসি অফিসে দায়িত্ব পালন, পরে এসি ল্যান্ড হিসেবে মৌলভীবাজার বড়লেখা ও হবিগঞ্জের বানিয়াচং এলাকার দায়েত্ব ছিলেন। বানিয়াচং থাকতে অর্জন করেন সেরা এসি ল্যান্ড ক্যাটাগরিতে আইসিটি এওয়ার্ড। এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে প্রথম যোগদান করেন মাটিরাঙ্গা উপজেলায়।
কৃষি বিভাগের সেই সেরা ছাত্রটির বৃক্ষ প্রেম নব রুপে স্বপ্ন দেখে জলপাহাড় নিয়ে। তাই মনিরুজ্জামান বকাউল যে বীজ বপন করেছিলেন বর্তমান ইউএনও তা নিয়ে গেছেন উচ্চতার শীর্ষে। শুরুতেই ন্যাড়া পাহাড়কে পরিনত করেন সবুজ পাহাড়ে, এক এক করে তিলত্তমা দিয়ে প্রতিটি পরতে পরতে ভিন্ন সাজে সাজানো হয়েছে জলপাহাড়কে। যা বর্তমানে কপোত কপোতিদের নতুন ঠিকানা।
সম্প্রতি লেকের মধ্যখানে ছোট্ট দ্বীপটিতে সংযুক্ত করা হয় “জলনীড়”। প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশে বসে রয়েছে আহারের সুযোগ। এ যেন কাপ্তাই লেকের মধ্যে পেদা টিং টিং। যেখানে বসে মনের হরসে ভোজন করে পর্যটকরা।
শুধু জলনীড়ই নয়, একে একে সংযোজন করা হয় গ্রাম্য ঐতিহ্যবাহী চরকা, ইলেকট্রিক ট্রেন, ঘোড়ার রাইড। পাশাপাশি দর্শনার্থীদের বিশ্রামের জন্য স্থাপন করা হয়েছে ছনের তৈরি বেশ কিছু কটেজ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির মাচাং ঘর, নানান ফুলের বাগান। চালু করা হয়েছে একটি দৃষ্টি নন্দন ফোয়ারা যা ভ্রমন পিপাসুদের আগ্রহে যুক্ত করেছে আরেকটি পালক। এছাড়া অতি সম্প্রতি প্রবেশ পথ থেকে রাস্তা ঢালাই করে বর্ষা মৌসুমেও চলাচল উপযোগী করে তোলা হয়। রাস্তার দুপাশে লাগানো হয় বিভিন্ন প্রজাতির পাতাবাহার, ঝাউ, দেবদারু গাছ।
ঈদ উৎসবে জলপাহাড় ঘুরে দেখা যায় শত শত দর্শনার্থীর ভিড়। কেউ এসেছে প্রিয়জনকে সথে নিয়ে, কেউবা এসেছে বাচ্ছাদের নিয়ে। যে যারমত করে আনন্দ করছে। বৃষ্টিও বাঁধা হতে পারেনি ঈদ আনন্দে। জলপাহাড়ে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী রেজাউল আলম শুভ জানান, মাটিরাঙ্গা উপজেলা সদরে বিনোদনের তেমন কোন জায়গা ছিল না। বর্তমানে উপজেলা সংলগ্ন এই বিনোদন কেন্দ্রটি তরুনদের জন্য একটি নতুন ঠিকানা। জলপাহাড়ের সৌন্দর্য্য অবলোকনে প্রায় প্রিতিদিনই দূর দুরান্ত থেকে চুটে আসছে দর্শনার্থীরা। এটা বলা যেতে পারে মাটিরাঙ্গাবাসীর জন্য সুদিনের ইশারা। তবে জলপাহাড়ের লেকের চার পাশে চলাচলের জন্য রাস্তা করা হলে এর সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পাবে বলেও জানান তিনি।
এই জলপাহাড়কে নিয়ে আরো অনেক পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন মাটিরাঙ্গার উপজেলা নির্বাহী অফিসার বি.এম. মশিউর রহমান। তিনি জানান, ইতিমধ্যেই কৃত্তিম হরিন, বাঘ, ভালুক সহ পর্যটকদের জন্য নানা আকর্ষন স্থাপন করা হয়েছে। পর্যটকদের ভাড়তি আনন্দের জন্য লেকে অতিি শীঘ্রই একটি স্প্রীড বোর্ড সংযুক্ত করা হবে। সম্প্রতি জলপাহাড়কে লিজ দিয়ে রক্ষনা বেক্ষনের দায়িত্ব দেয়া হয় স্থানীয় একটি কম্পানিকে। স্বল্প মূল্যে টিকেটের মাধ্যমে সকলের জন্য এটিকে উম্মুক্ত বিচরনের ব্যবস্থা করা হয়।
উলেখ্য, গতবছর ২৮ জুলাই জলপাহাড় আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন হলেও ব্যবহার উপযোগী করে দর্শনীর বিনিময়ে দর্শনার্থীদের জন্য জলপাহাড় বিনোদন কেন্দ্রটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।