জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে মাতারবাড়িতে ১২শ’ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ কাজ চলমান আছে। উৎপাদিত এ বিদ্যুৎ সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে নির্মাণ করা হবে সঞ্চালন লাইন।? একইসঙ্গে বিদ্যুৎ ইভাকুয়েট করা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিদ্যমান চাহিদা পূরণে বাস্তবায়িত হবে আরেকটি প্রকল্প।
প্রকল্প দু’টির মাধ্যমে চট্টগ্রামে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করা হবে। পাশাপাশি ঢাকা এবং চট্টগ্রামের মধ্যে বিদ্যুৎ সঞ্চালন ক্ষমতার উন্নয়ন ও নিশ্চিতকরণ করা হবে। যার প্রভাব পড়বে পুরো বাংলাদেশে।
?দু’টি প্রকল্পই মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর নির্ভর করে গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্প দু’টির মোট ব্যয় প্রায় ৫ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা।
পাওয?ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) সূত্র জানায়, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মেইন পাওয়ার গ্রিড স্টেনদেনিং’ ও ‘মাতারবাড়ী-মদুনাঘাট ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন’ প্রকল্প দু’টির আওতায় এ উদ্যোগ নেওয়া হবে।
‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মেইন পাওয়ার গ্রিড স্টেনদেনিং’ প্রকল্পের মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার ৫৬৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সাহায্য ২ হাজার ৭৬৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। প্রকল্পটি ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে।
অন্যদিকে ‘মাতারবাড়ি-মদুনাঘাট ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন’ বাস্তবায়নে ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।
সূত্র জানায়, মাতারবাড়ির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ ঢাকায় সঞ্চালনের জন্য এ দু’টি প্রকল্পের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের মেঘনা ঘাট থেকে চট্টগ্রাম জেলার মদুনাঘাট পর্যন্ত ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
৮ কিলোমিটার বিদ্যমান মদুনাঘাট-মেঘনাঘাট উপ-কেন্দ্রের মধ্যে ২৩০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হবে। প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার হাটহাজারী-শিকলবাহা ডাবল সার্কিট ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন থেকে নতুন মদুনাঘাট উপ-কেন্দ্রে লাইন ইন-লাইন আউটও থাকবে। মেঘনা ঘাটে ২৩০ কেভি সুইচ স্টেশনসহ মদুনাঘাটে ২৩০ কেভি উপ-কেন্দ্রও নির্মাণ করা হবে। বিদ্যমান ১৩২ কেভি মদুনাঘাট উপ-কেন্দ্র ২৩০ কেভি ভোল্টেজ লেভেলে আপগ্রেডশনও করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের(বিদ্যুৎ উইং) যুগ্ম প্রধান খলিলুর রহমান খান বলেন, মূলত মাতারবাড়ির কয়লাভিত্তিক ১২শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঢাকাসহ সারাদেশে আনার লক্ষ্যেই প্রকল্প দু’টি হাতে নেওয়া হয়েছে। এ বিদ্যুৎ প্রথমে চট্টগ্রামে আনা হবে। এরপরে চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জে এবং সবশেষে ঢাকায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা হবে। প্রাথমিকভাবে একটি প্রকল্পের আওতায় কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। তবে জাইকা আলাদাভাবে ঋণ দেওয়ার কারণে দু’টি প্রকল্পের আওতায় একই কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে’।
৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়িতে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্পটি দেশের এই মুহূর্তের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প। প্রকল্পটির চূড়ান্ত অনুমোদনও দিয়ে দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মধ্যে বিদেশি অর্থায়ন (জাইকা) থেকে ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা, সরকারি খাত থেকে ৪ হাজার ৯২৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ২ হাজার ১১৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা মেটানো হবে।
৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন দু’টি ইউনিট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে মাতারবাড়ি থেকে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সম্পূর্ণভাবে আমদানিকৃত কয়লার ওপর নির্ভরশীল। প্রকল্পের আওতায় ৪ হাজার ৭০০ কেজি স্ট্যান্ডার্ডের প্রয়োজনীয় পরিমাণ কয়লা আমদানি করা হবে। প্রস্তাবিত প্রকল্পে প্রতি টন কয়লার দাম ১০ হাজার ২৫৫ টাকা ৫০ পয়সা ধরা হয়েছে।
দু’টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে কুলিং এবং স্টিম জেনারেশনের জন্য সমুদ্রের সারফেস ওয়াটার ব্যবহার করা হবে।
এসব প্রকল্পে জাইকা সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করছে বলেও জানিয়েছে পিজিসিবি।