সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং ইসিবির টানা পোড়নে
দীর্ঘ ৪ মাস ধরে দূর্ভোগ পোহাচ্ছে রাঙ্গামাটি-
বান্দরবান-খাগড়াছড়ির কয়েক লাখ মানুষ
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং ইসিবির টানা পোড়নে দীর্ঘ ৪ মাস ধরে দূর্ভোগ পোহাচ্ছে রাঙ্গামাটি-বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ির কয়েক লাখ মানুষ। কাপ্তাই ঘাগড়া সড়কে বগাছড়ার উপর নির্মিত ব্রীজ ভেঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই। এই ব্রীজটি কে করবে তার দ্বিধাদ্বন্ধে লক্ষ লক্ষ মানুষ কষ্ট ভোগ করছে। এই নিয়ে রাঙ্গামাটির সাধারণ মানুষ যেমন দূর্ভোগ পোহচ্ছে তেমনি সরকারী সংস্থা গুলোর যানবাহন চলাচলে সৃষ্টি হয়েছে প্রতিবন্ধকতা।
সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় লাখ লাখ মানুষের দৈনন্দিন গুরুত্বপূর্ণ কাজও থমকে আছে। অসংখ্য মানুষ চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন। কবে সড়ক যোগাযোগ পুনরায় শুরু হবে কেউ বলতে পারছেননা। পার্বত্য মন্ত্রনালয়, জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসকসহ কোন সংস্থা থেকে সড়কটি সংস্কারের ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
এদিকে ব্রীজ নির্মাণের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ এমন খবর শোনা গেলেও আরো কতোদিন এই সড়ক বন্ধ থাকবে কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না।
জানা গেছে গত ১৪ এপ্রিল ‘ইসলা কন্সট্রাকশন লিমিটেড’র একটি ক্রেন কাপ্তাই থেকে কাপ্তাই থেকে রাঙ্গামাটি যাবার সময় বেইলি ব্রিজে উঠার সাথে সাথে ব্রিজটি হুড়মুড় করে ধসে পড়ে। স্থানীয়রা জানান ১৯৯০ সালে সড়ক ও জনপথ বিভাগ বগাছড়ার উপর এই বেইলি ব্রিজটি নির্মাণ করে। নির্মাণের সময় এর সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতা ছিল ৩৫ মেট্টিক টন এবং মেয়াদকাল ছিল ২০ বছর।
কিন্তু বেইলি ব্রিজ নির্মানের পর ইতিমধ্যে ২৬ বছর পেরিয়ে গেছে। আর ধারণ ক্ষমতাও আগের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে। এই ব্রিজ দিয়ে ভারী যান বাহন চলাচল না করলেও প্রতিদিন যাত্রী বোঝাই বাস এবং মাল বোঝাই ট্রাকসহ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন যানবাহন নিয়মিত চলাচল করতো। তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ি শহরে সরাসরি সড়ক যোগাযোগের জন্য এই ব্রিজটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছিল। কিন্তু গত ১৪ এপ্রিল সকালে প্রায় ৫০ মেট্টিক টন ওজনের ঐ ক্রেনটি ব্রিজে উঠতে গিয়েই সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
স্থানীয় ওয়া¹া ইউনিয়নের বাসিন্দা মোম্বাচাই মারমা বলেন, ব্রিজে উঠার সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইসলা কন্সট্রাকশন লিমিটেডের দুইজন প্রকৌশলী উপস্থিত ছিলেন। ব্রিজে উঠার আগে ক্রেন চালক প্রকৌশলীদের পরামর্শ চন। প্রকৌশলীরা সরেজমিন ব্রিজ পরীক্ষা করে ভার মানবে বলে মতামত দেন। কিন্তু ব্রিজে উঠার সাথে সাথে ব্রিজটি ভেঙ্গে পড়ে।
ওয়া¹া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুবিমল তনচংগ্যা বলেন, স্থানীয়দের অনুরোধে এবং জনস্বার্থে সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে গত মে মাসে ভাঙ্গা বেইলী ব্রিজের পাশে পাহাড়ি ছড়ার উপর মাটি ফেলে বিকল্প সড়ক তৈরি করা হয়। কিন্তু বিকল্প সড়ক তৈরির সময় ছড়ার পানি প্রবাহের কোন পথ রাখা হয়নি। যখন মাটির সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছিল তখন স্থানীয় লোকজন এভাবে নির্মিত সড়ক টিকবেনা বলে বারবার আপত্তি জানিয়েছিল। কিন্তু কোন আপত্তি না শুনে ছড়ার উপর মাটি ফেলে ঠিকই সড়ক নির্মাণ করা হয়। এক সপ্তহ ঐ সড়ক দিয়ে সব ধরনের যানবাহনও চলাচল করে। কিন্তু মে মাসের ২০ তারিখ রাতে ভাড়ি বৃষ্টি হয়। পাহাড়ি ছড়ায় বৃষ্টির পানি প্রাবাহের পথ না পেয়ে পানির তোড়ে মাটির রাস্তা ভেঙ্গে মুহুর্তে মাটির সড়ক বিলীন হয়ে যায়। সেই থেকে সড়কে যাবতীয় যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
ওয়া¹া ইউনিয়ন পরিষদের প্রাক্তন মেম্বার আপাই মারমা বলেন স্থানীয় উৎপাদিত কলা, আম, কাঁঠাল, লিচু, পেঁপে, বরবটি, ধনিয়াসহ যাবতীয় সাকসবজী ও তরুতরকারি এই সড়ক দিয়ে বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করা হতো। কিন্তু বিগত কয়েক মাস ধরে উৎপাদিত সকল পণ্য এলাকায় পড়ে আছে। এতেকরে কৃষক মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন। কবে ব্রিজটি পুনরায় সংস্কার করা হবে সে ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগসহ কারো পক্ষ থেকে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি।
ওয়া¹া ইউনিয়নের মহিলা মেম্বার মালতি প্রভা তনচংগ্যা আমাদের কাপ্তাই প্রতিনিধি কাজী মোশাররফ হোসেনকে বলেন, বেইলী ব্রিজ সংস্কার করলে অথবা আবার মাটির সড়ক নির্মাণ করলে এখানে কোন কাজে আসবেনা। তাঁর মতে এখানে নতুন করে পাকা ব্রীজ করতে হবে। আর বৃষ্টির সময় এই ছড়ার উপর দিয়ে যে গতিতে পানির স্রোত প্রবাহিত হয় তাকে প্রতিহত করতে হলে এখানে বড় বাজেটের কাজ করতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
রাঙ্গামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আতিক উল্লাহ ভূইয়া, মূলত রাঙ্গামাটি জেলায় শহরের ১০ কিমি: কাউখালী সংযোগ সড়ক ও বিএনএল সড়ক ছাড়া বাকি সড়কসমূহ ইসিবির হাতে ন্যাস্ত ছিলো তাই এতোদিন আমরা কাজটি করতে পারিনি। সম্প্রতি আমাদেরকে এই রাস্তা সংস্কারে জন্য মন্ত্রনালয় থেকে নির্দিশনা দিয়েছে আগামী সপ্তাহের মধ্যে আমরা এটি টেন্ডার করতে পারি।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কনট্রাকশন ব্যাটালিয়ন-১৯ (ইসিবি) এর কমান্ডিং অফিসার লেঃ কর্ণেল মোঃ তানভির হোসেন জানান, গত ১৪ এপ্রিল ব্রীজটি ভাঙ্গার পরপরই আমরা সেখানে গিয়ে বিষয়টি সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করি। কিন্তু এ বিষয়ে আমাদের কাছে অতিরিক্ত কোনো তহবিল নেই। তাই আমরা কিছু করতে পারছি না। তিনি জানান, ব্রীজটিতে একটি ওভার লোডেড গাড়ি ওঠার কারণে বেইলী ব্রীজটি এমনভাবে ভেঙ্গে গেছে যে, তা আর মেরামতের উপযোগী নেই। তার মতে ্কই স্থানে অন্য একটি বেইলী ব্রীজ স্থাপন করতে হবে। সেটা সড়ক বিভাগ চাইলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই করতে পারে, কারণ তাদের কাছে এধরণের বেইলী ব্রীজ স্টোরেই জমা আছে। কর্ণেল তানভির এও জানান যে, আমরা এই মতামতগুলো লিখিতভাবে সওজ বিভাগে সাথে সাথেই জানিয়েছি। তার সরবরাহ করা পত্র (২৩.০১…১৫.০৪.১৬/১৪ তাং ১৫ এপ্রিল) থেকে জানা যায়। এই পত্রটির কপি যোগযোগ মন্ত্রণালয় এবং সওজ এর প্রধান প্রকৌশলী বরাবরেও পাঠানো হয়েছে। তিনি আরো জানান যে, রাঙ্গামাটি জেলার কিছু সড়ক মেরামত ও পূণ: নির্মাণের দায়িত্ব তাদের কাছে ন্যস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু নতুন কোনো ব্রীজ বা নতুন সড়ক নির্মাণের দায়িত্ব বা মেইটেইন্যান্সখাতে তাদের কোনো বরাদ্দ নেই। তাছাড়া তাদের উপর ন্যাস্ত করা প্রকল্প ২০১৫ সালের জুন মাসেই শেষ হয়ে গিয়েছে এ বিষয়ে তারা (কমপ্লিটেশন রিপোর্ট) পিসিআরও জমা দিয়ে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে।