সোমবার বিকালে নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই মিলাদে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সহস্রাধিক নেতা-কর্মী অংশ নেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের দিন ১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবসে জন্মদিন উদযাপন না করতে আওয়ামী লীগ নেতাদের আহ্বানের প্রেক্ষাপটে এবার বন্যা এবং সরকারি নির্যাতন-নিপীড়নকে কারণ দেখিয়ে কেক কাটেননি খালেদা।
মিলাদ অনুষ্ঠানের পর ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবার তার জন্মদিনের অনুষ্ঠান বাতিল করেছেন। দেশের যে বর্তমান অবস্থা, রাজনৈতিক-সামাজিক এবং বন্যার কারণে যে অবস্থা তৈরি হয়েছে, সেই কারণে তিনি মনে করেছেন, জন্মদিনের কোনো অনুষ্ঠান পালন করা সমীচীন নয়।
“আজকে আমরা তার দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া করেছি। দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছি। সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবের সুস্বাস্থ্য কামনা করেছি। আরাফাত রহমান সাহেবের রুহের মাগফেরাত কামনা করেছি।”
মিলাদ ও দোয়া পরিচালনা করেন জাতীয়তাবাদী উলামা দলের সাধারণ সম্পাদক শাহ নেসারুল হক। কার্যালয়ের ভেতরে জায়গা না হওয়ায় সিঁড়িতে দাঁড়িয়েও কর্মীদের মিলাদ ও দোয়ায় অংশ নিতে দেখা যায়। ফখরুল বলেন, “দলের যে সমস্ত নেতারা ইন্তেকাল করেছেন, শাহাদাৎ বরণ করেছেন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে, তাদের রুহের মাগফিরাতও কামনা করেছি আমরা। বন্যার্তরা যারা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন, তাদের দুর্ভোগ লাগবের জন্য জন্য আমরা দোয়া করেছি।”
দেশের শান্তি-সমৃদ্ধির চাওয়ার পাশাপাশি গণতন্ত্র ফিরে আসার জন্যও দোয়া করেছেন বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, শামসুজ্জামান দুদু, মোহাম্মদ শাহজাহান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা সানাউল্লাহ মিয়া, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, নাজিমউদ্দিন আলম, নুর-ই আরা সাফা, শিরিন সুলতানা, বিলকিস শিরিন, আমিনুল ইসলাম, আবদুস সালাম আজাদ, আসাদুল করীম শাহিন, আবদুল আউয়াল খান, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ, শহীদুল ইসলাম বাবুল, অনিন্দ্র ইসলাম অমিত, এটিএম আবদুল বারী ড্যানি, আমিরুজ্জামান শিমুল, রফিক শিকদার, আমিনুল ইসলাম, রাজীব আহসান মিলাদে অংশ নেন।
১৫ অগাস্ট খালেদা জিয়া তার জন্মদিন পালন করলেও তার আরও জন্মদিনের হদিস পাওয়া যায়।
বিএনপির ভাষ্য অনুযায়ী, খালেদা জিয়া সোমবার ৭২ বছরে পা রাখলেন।
খালেদার বাবা এস্কান্দার মজুমদারের বাড়ি ফেনী হলেও তিনি দিনাজপুরে ঠিকানা নিয়েছিলেন। খালেদার জন্মও সেখানে। তার মায়ের নাম তৈয়বা মজুমদার।
সেনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে ১৯৬০ সালে খালেদার বিয়ে হয়। পঁচাত্তরে পটপরিবর্তনের পর প্রথমে সামরিক আইন প্রশাসক এবং পরে রাষ্ট্রপতি হন জিয়া।
১৯৮১ সালে ৩০ মে রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় জিয়া নিহত হলে রাজনীতিতে পা রাখেন খালেদা। প্রথমে দলের ভাইস চেয়ারম্যান এবং তিন বছর পর চেয়ারপারসন হন তিনি।
এরশাদবিরোধী আন্দোলনে খালেদা জিয়া বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, ‘ক্যান্টনমেন্টে জন্ম নেওয়া দল’ বিএনপির জনভিত্তি তৈরি করে দেন খালেদাই।
১৯৯১ সালে সংসদ নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হলে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের পর কয়েক দিনের জন্য প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি।
২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট জয়ী হলে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া। ২০০৮ সালের নির্বাচনে হারের পর সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেন তিনি। দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর এখন সংসদের বাইরে থাকলেও রাজনীতিতে তার গুরুত্ব কমতে দেখা যায়নি।