নাশকতার ৮ মামলায় আত্মসমর্পণের পর খালেদার জামিন
এর মধ্যে পাঁচ মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ১০ অক্টোবর দিন রেখেছে আদালত।
খালেদার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলাতেও অভিযোগ গঠনের শুনানি হবে একই দিনে।
নাশকতা, দুর্নীতি ও রাষ্ট্রদ্রোহের মোট ১২ মামলায় হাজিরা দিতে বুধবার পুরান ঢাকার আদালত পাড়ায় হাজির হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
প্রথমেই তিনি মহানগর দায়রা জজ আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় হাজিরা দেন। পরে একই আদালতে বিশেষ ক্ষমতা আইনের আট মামলায় খালেদার জামিন আবেদনের শুনানি হয়।
এরপর বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি ও নাইকো দুর্নীতি মামলায় হাজিরা দিতে একই ভবনের ষষ্ঠ তলায় বিশেষ জজ আদালতে যান বিএনপি চেয়ারপরসন। এ দুই মামলায় এদিন অভিযোগ গঠনের শুনানির তারিখ রয়েছে।
এছাড়া দারুস সালামে নাশকতার আরেক মামলায় এদিন পুলিশের অভিযোগপত্র আমলে নেওয়ার তারিখ রয়েছে ঢাকার হাকিম আদালতে।
রাষ্ট্রদ্রোহ
গতবছর ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের এক আলোচনা সভায় খালেদা মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেন, “আজকে বলা হয়, এত লক্ষ লোক শহীদ হয়েছেন। এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে যে. আসলে কত লক্ষ লোক মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। নানা বই-কিতাবে নানা রকম তথ্য আছে।”ওই বক্তব্যে ‘দেশদ্রোহী’ মনোভাবের পরিচয় রয়েছে অভিযোগ করে গত ২৫ জানুয়ারি ঢাকার হাকিম আদালতে খালেদার বিরুদ্ধে মামলা করেন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী। ওই মামলা করার আগে তিনি নিয়ম অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতিও নেন।
ওই মামলায় পুলিশের দেওয়া অভযোগপত্র আমলে নিয়ে বুধবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ১০ অক্টোবর দিন ঠিক করে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে শুনানির সময় মামলার বাদী মমতাজ উদ্দিন মেহেদী আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে খালেদার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, মাহবুব উদ্দিন খোকন ও এ জে মোহাম্মদ আলী অভিযোগ আমলে নেওয়ার বিরোধিতা করে আদালতে যুক্তি তুলে ধরেন।
হাকিম আদালতে এ মামলায় জামিন পাওয়া খালেদা এ আদালত থেকেও জামিন চাইলে বিচারক তা মঞ্জুর করেন।
বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৮ মামলা
দশম সংসদ নির্বাচনের বছরপূর্তিতে গত বছরের ৫ জানুয়ারি সমাবেশ করতে বাধা পেয়ে দলীয় কার্যালয়ে অবরুদ্ধ অবস্থায় থেকে সারাদেশে লাগাতার অবরোধ ডাকেন খালেদা জিয়া।
৯০ দিনের এই কর্মসূচিতে বহু গাড়ি পোড়ানো হয়, অগ্নিসংযোগ হয় বিভিন্ন স্থাপনায়। অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান প্রায় একশ মানুষ।
তখন নাশকতার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অসংখ্য মামলা করে। তার মধ্যে দারুস সালাম থানায় দায়ের করা বিশেষ ক্ষমতা আইনের আট মামলায় খালেদাকে করা হয় হুকুমের আসামি।
এরপর গত মে ও জুন মাসে খালেদাসহ বিএনপি নেতাকর্মীদের আসামি করে এসব মামলায় অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
বুধবার ঢাকার ১ নম্বর মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করে ওই আট মামলায় জামিনের আবেদন করেন খালেদা জিয়া।
এ আদালতের বিচারক ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা এদিন আট মামলার মধ্যে পাঁচটিতে পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ১০ অক্টোবর দিন ঠিক করে দেন।
বাকি তিন মামলায় খালেদাসহ আসামিদের বিরুদ্ধে পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র আমলে নেওয়ার বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্ত জানা যাবে ৭ সেপ্টেম্বর।
খালেদার আবেদনের শুনানি করে আট মামলার সবগুলোতেই তাকে জামিন দেন বিচারক।
নিরাপত্তা
বিএনপি নেত্রীর হাজিরার দিন থাকায় সকাল থেকেই আদালতপাড়ায় নেওয়া হয় কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা । বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র্যা ব সদস্য আদালত প্রাঙ্গণ এবং আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন। দায়রা জজ আদালতের ফটকে দুটি আর্চওয়ে বসানো হয়।
আদালতের প্রবেশপথগুলোতে তল্লাশি করে তারপর আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ঢুকতে দেওয়া হয়। আইনজীবীদের পরিচয়পত্রও দেখাতে হয়।
নিরাপত্তারক্ষীদের সংখ্যা না জানালেও একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আইন-শৃখলা বাহিনীর অন্তত পাঁচশ সদস্য আদালত এলাকায় রয়েছেন।
কোতোয়ালি থানার ওসি আবুল হাসান জানান, কোনো ধরনের ‘অপ্রীতিকর ঘটনা’ যাতে না ঘটে, সেজন্যই এ ব্যবস্থা।
সূত্রাপুর জোনের পরিদর্শক (পেট্রোল) দিলীপ কুমার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই চত্বরে কাউকে মিছিল করে ঢুকতে দেওয়া হবে না।”
এর আগে গত ৫ এপ্রিল যাত্রাবাড়ী থানার নাশকতার মামলাসহ পাঁচ মামলায় খালেদা জিয়া আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পান।