নির্ধারিত পরিমাণের অতিরিক্ত ওজন বহনে জরিমানার নিয়ম বাতিলসহ সাত দফা দাবিতে আন্দোলনরত প্রাইম মুভার–ট্রেইলার মালিক–শ্রমিক ঐক্য পরিষদের কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে শনিবার বৃহত্তর চট্টগ্রামে সব ধরনের পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে পরিবহন মালিক–শ্রমিকদের দুইটি সংগঠন।
চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন বলছে, শনিবারের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে রোববার থেকে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেবে তারা।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সঙ্গে নিষ্ফল বৈঠকের পর মালিক-শ্রমিকদের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা আসে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউকাদন্দি ওজন স্কেলে প্রাইম মুভার চালক শ্রমিকদের মারধর ও হয়রানির অভিযোগ তুলে পরদিন থেকে লাগাতার ধর্মঘটের ডাক দেয় প্রাইমমুভার-ট্রেইলর মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
তাদের এই ধর্মঘটের ফলে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত বন্দরে ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের ৪০ হাজার ২৫৯টি কনটেইনার জমে গেছে বলে বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে পরিবহন মালিক শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন জেলা প্রশাসক শামসুল আরেফীন। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার টানা বৈঠকেও কোনো সিদ্ধান্ত না এলে বৈঠক মুলতবি করা হয়।
এরপর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি আবু মুসা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বৈঠকে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত না হওয়ায় প্রাইম মুভার ট্রেইলার মালিক শ্রমিকদের দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে শনিবার সব ধরনের পণ্যবাহী যানবাহনের ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।
“শনিবারের মধ্যে দাবি মানা না হলে রোববার থেকে বৃহত্তর চট্টগ্রামে যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহনসহ সকল ধরনের যান্ত্রিক পরিবহনের ধর্মঘট শুরু হবে।”
মহাসড়কে পণ্যবাহী গাড়ির অতিরিক্ত চাপ কমাতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ গত ১৬ অগাস্ট গাড়ি ভেদে পণ্য পরিবহনের ওজন নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। নির্ধারিত ওজনের বেশি বহন করলে স্তরভেদে দুই থেকে ১২ হাজার টাকা জরিমানা করার কথা বলা হয় সেখানে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ১৪ চাকার প্রাইম মুভার সর্বোচ্চ ৩৩ টন পর্যন্ত মালামাল বহন করতে পারবে।
প্রাইম মুভার-ট্রেইলার মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের অভিযোগ, দাউদকান্দি এলাকায় তাদের বিপুল পরিমাণ কন্টেইনারবাহী ট্রেইলার ও প্রাইম মুভার আটকে আছে জরিমানার কারণে।
পরিবহন মালিক শ্রমিকরা বলছেন, কন্টেইনারের ওজনের বিষয়ে তাদের কিছু করার না থাকলেও প্রাইম মুভারে ৩৩ টনের পর প্রতি টনের জন্য তাদের দুই হাজার টাকা করে জরিমানা গুণতে হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (প্রশাসন) জাফর আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের কারণে চট্টগ্রাম বন্দর ও ডিপোগুলোতে কনটেইনারের জট আরও বেড়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরে মোট কন্টেইনার ধারণ ক্ষমতা যেখানে ৩৬ হাজার ৩৫৭ টিইইউস (টোয়েন্টি ফুট ইকুইভেলেন্ট ইউনিট), সেখানে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত বন্দর ইয়ার্ডে জমে গেছে ৪০ হাজার ২৫৯ টিইইউস কন্টেইনার।
ধর্মঘটের কারণে বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোগুলোতেও প্রায় ছয় হাজার কন্টেইনার জমে গেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশনের সচিব মোহাম্মদ রুহুল আমিন সিকদার।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, গত সোমবার সকাল থেকে ধর্মঘটের কারণে বন্দরে কন্টেইনার নেওয়া অনেকটাই বন্ধ রয়েছে।
“গত মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত চট্টগ্রামের ১৬টি বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো থেকে শুধু তিন হাজার ৯৩০ টিইইউস কন্টেইনার চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠানো হয়েছে।”
দেশের রপ্তানিযোগ্য পণ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ বেসরকারি ১৬টি কন্টেইনার ডিপোতে আনা হয়। সেখান থেকে কন্টেইনার ভর্তি করে চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠানো হয়। আর বাকি ১০ শতাংশ কমলাপুর কন্টেইনার ডিপো এবং দেশের বিভিন্ন রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল থেকে সরাসরি কন্টেইনারে করে বন্দরে নেওয়া হয়।