মঙ্গলবার রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “আমাদের দুর্ভাগ্য, আমাদের লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকা ওই রাজাকারদের হাতে তুলে দিয?েছে খালেদা জিয?া। তাদের মন্ত্রীও বানিয?েছে। খালেদা জিয?া যাদের মন্ত্রী বানিয?েছিল, তাদের যুদ্ধাপরাধী হিসাবে ফাঁসি হয?েছে।
“কাজেই যুদ্ধাপরাধী হিসাবে যাদের ফাঁসি হয?েছে, তাদের যে মন্ত্রী বানিয?েছিল, তার কী শাস্তি হবে? সেটাও দেশবাসী দেখতে চায?। সেটাও দেশবাসীকে ভাবতে হবে। তার কী শাস্তি হবে?”
এজন্য নিজের দলের নেতা-কর্মীদের জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির তাগিদ দিয?ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “আজকে দেশের মানুষের মধ্যে এই সচেতনতাই সৃষ্টি করতে হবে যে, ওই জিয?া (জিয?াউর রহমান) আর খালেদা জিয?া, যারা এই যুদ্ধাপরাধীৃ যারা যুদ্ধাপরাধী হিসাবে সাজাপ্রাপ্ত, তাদের যারা মন্ত্রী বানিয?েছে।
“তাদের বিচার প্রকাশ্যে জনগণের সামনে হওয?া দরকার; সেই ভাবে সবাইকে জনমত গড?ে তুলতে হবে।”
২০০১ সালে জামায?াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট করে অষ্টম জাতীয? সংসদ নির্বাচনে জয?ী হয?ে প্রধানমন্ত্রী হন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয?া। যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীকে শিল্পমন্ত্রী এবং আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে সমাজকল্যাণমন্ত্রী করেছিলেন তিনি।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতের এই দুই শীর্ষ নেতারই সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর হয়েছে।এ দুজন ছাড়া যুদ্ধাপরাধের দায?ে জামায?াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা ও মোহাম্মদ কামারুজ্জামান এবং নিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হয?েছে।
জামায়াতের অর্থের যোগানদাতা মীর কাসেম আলী এখন ফাঁসির অপেক্ষায?। মঙ্গলবার সকালে এই যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করে সুপ্রিম কোর্ট।
১৫ অগাস্ট শোক দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয?ামী লীগের আয?োজনে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায?তনে এই আলোচনা সভা হয়। স্বজন হারানোর কথা বলার সময় চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি শেখ হাসিনা প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসমুক্ত করতেই হবে।” গুলশানের ক্যাফেতে হামলার পর পুলিশি অভিযানে কল্যাণপুরে নয?জন এবং নারায?ণগঞ্জে তামিম চৌধুরীসহ তিন জঙ্গি নিহতের ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি চেয?ারপারসন খালেদা জিয?া।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জঙ্গিরা যখন নিহত হয?, তখন তাদের জন্য খালেদা জিয?ার মায?াকান্না কোথা থেকে আসে, সেটাই আমার প্রশ্ন।”
আরও তথ্য আদায?ে জঙ্গিদের বাঁচিয?ে রাখার কোনো চেষ্টাই করা হয?নি বলে অভিযোগ তুলেছেন খালেদা জিয?া।
এর জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “তাদের বাঁচিয?ে রাখার পর কী করবে সে? পূজা করবে ?
“বলে, বেঁচে থাকলে শিকড?ের সন্ধান করা যেত। শেকড?ের তো আর সন্ধান করা লাগে না, যিনি ওদের পক্ষে সাফাই গাইছেন, শিকড?টা ওখান থেকেই আসে কি না এখন সেটা তদন্ত করে বের করতে হবে।”
বিএনপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সব ধরনের হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “যারা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরীদের মদদ দিতে পারে, পুরস্কৃত করতে পারে। যারা যুদ্ধাপরাধীদের পতাকা দিয?ে মন্ত্রী বানাতে পারে। যারা ভোট চুরি করে খুনিদের সংসদে বসিয?ে বিরোধী দলের নেতা বানাতে পারে। তারা সব ধরনের খুনের সঙ্গে জড?িত।”
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর জিয?াউর রহমান ক্ষমতাসীন হয?ে শেখ মুজিবের আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের দূতাবাসে চাকরি দেন। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয?ারি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরীদের নিয?ে নির্বাচন করে সরকার গঠন করে বিএনপি।
শেখ হাসিনা বলেন, “তারা যে সন্ত্রাসের সঙ্গে জড?িত, জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড?িত এটা তো আর মানুষকে দেখানোর প্রয?োজন নাই।
“এটা তো সাধারণ মানুষ নিজের চোখেই দেখেছে যে, কারা জাড?িত।
“শেকড?ের সন্ধানের জন্য আর যেতে হবে না। শেকড? তো নিজেই কথা বলে উঠছে। সেখান থেকেই পাওয?া যাবে। তাদের রেহাই নাই। এদেরও বিচার জনগণ একদিন করবে ইনশাল্লাহ।”
ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয?ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাতের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায? অন্যদের মধ্যে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাহারা খাতুন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক, ঢাকা উত্তর মহানগর আওয?ামী লীগের সভাপতি এ কে এম রহমতুল্লাহ, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয?র সাঈদ খোকন, শাহে আলম মুরাদ ও সাদেক খান বক্তব্য রাখেন।