সোমবার সকালে অর্থ মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে কিমের এই ঘোষণা আসে।
তিনি বলেন, “বিশ্ব ব্যাংক বিভিন্ন দেশে ঋণ সহায়তা ৫০ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার অংশ হিসেবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশে বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ সহায়তাও ৫০ শতাংশ বাড়ানো হবে।”
এর বাইরে শিশু অপুষ্টি দূর করতে বাংলাদেশকে আগামী দুই বছরে বাড়তি ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
# বিশ্ব ব্যাংক তিন বছরের প্যাকেজে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিসটেন্স (আইডিএ) হিসেবে বাংলাদেশকে স্বল্প সুদে ঋণ দিয়ে থাকে। এর আওতায় বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ২৪ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে।
# ২০১৪-১৫ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আইডিএ-এর আওতায় চার বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিশ্ব ব্যাংক।
# এর মধ্যে ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ৯৪৪ মিলিয়ন এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার ছাড় করা হয়। পুরো প্যাকেজের প্রতিশ্রুতির মধ্যে মোট কী পরিমাণ পাওয়া গেল, তা হিসাব করা যাবে চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছর শেষে বর্তমানে আইডিএ প্যাকেজের মেয়াদপূর্তির পর।
বিশ্ব ব্যাংকের পঞ্চম প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাংলাদেশ আসা কিম ঢাকায় নামেন রোববার বিকালে। সোমবার সকালে মুহিতের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে তার কর্মসূচি শুরু হয়।
কিমের ঢাকা সফরকে দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের সাফল্যের ‘স্বীকৃতি’ হিসেবে দেখছেন অর্থমন্ত্রী মুহিত। আর বিশ্ব ব্যাংকের কর্মকর্তারা আশা করছেন, পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের তিক্ত স্মৃতি মুছে দেবে কিমের এই সফর।
প্রায় চল্লিশ মিনিটের বৈঠকে কিমের নেতৃত্বে বিশ্ব ব্যাংকের নয় সদস্যের প্রতিনিধি দলে সংস্থার দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যানেট ডিক্সন, বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ পল রোমার এবং ঢাকার আবাসিক প্রতিনিধি চিমিয়াও ফান উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে মুহিতের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে ছিলেন অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন।
বৈঠকের পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আসেন অর্থমন্ত্রী ও বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট।
মুহিত বলেন, “বিশ্ব ব্যাংক আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। বাংলাদেশের যোগাযোগসহ সব খাতেই বিশ্ব ব্যাংক সহায়তা দিয়ে থাকে। পদ্মা সেতুতে যে তহবিল বিশ্ব ব্যাংকের দেওয়ার কথা ছিল, তারা অন্যান্য প্রকল্পে সেটি দিয়েছে। এর মাধ্যমে বিষয়টির সমন্বয় হয়েছে।”
পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে যে ‘জটিলতা’ ছিল, তা কেটে গেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
কিমের দিকে তাকিয়ে মুহিত বলেন, “বিশ্ব ব্যাংকের কাছে আমাদের অনেক প্রত্যাশা। আশা করছি তারা সে প্রত্যাশা পূরণ করবে।”
২৯১ বিলিয়ন ডলারে ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণে ১২০ কোটি ডলার দেওয়ার কথা ছিল বিশ্ব ব্যাংকের। তবে প্রকল্পে ‘দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ তুলে তারা মাঝপথে অর্থায়ন স্থগিত করলে শুরু হয় তিক্ততার।
দীর্ঘ টানাপোড়েন শেষে ২০১৩ সালের শুরুতে বাংলাদেশ বিশ্ব ব্যাংককে ‘না’ বলে দেয়। নকশা অপরিবর্তিত রেখে নিজস্ব অর্থায়নেই এখন পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ চলছে।
পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বাংলাদেশ ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে কিম বিষয়টি এড়িয়ে যান।
তিনি বলেন, “আমরা বাংলাদেশের উন্নয়নের সঙ্গেই আছি। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন খাতে আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে।”
জিম ইয়ং কিম তার বক্তব্যের শুরুতেই বাংলাদেশের প্রশংসা করে বলেন, “দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে। সেটি সেলিব্রেট করতেই আমি বাংলাদেশে এসেছি। দারিদ্র্য বিমোচনে সাফল্যের জন্যই এবার ‘বিশ্ব দারিদ্র্যমুক্ত দিবস’ বাংলাদেশে পালন করছি।”
>> বিকাল ৩টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্বে বাংলাদেশ’ শীর্ষক পাবলিক লেকচারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেবেন বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট।
>> ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ পল রোমার। বিশ্ব ব্যাংক সাউথ এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যানেট ডিক্সনও বক্তৃতা করবেন।
>> বাংলাদেশের জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী হাবিব ওয়াহিদ ‘এন্ড পোভার্টি’ শীর্ষক গান গাইবেন অনুষ্ঠানে। এ পর্বের শেষে #প্রসপার বাংলাদেশ (#ProsperBangladesh) শিরোনামে একটি প্রেজেনটেশন উপস্থাপন করা হবে।
>> সেখানে ‘এন্ড গ্লোবাল পোভার্টি বাই ২০৩০: শেয়ারিং বাংলাদেশ’স এক্সপেরিয়েন্স’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় বক্তৃতা করবেন বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীও এতে বক্তৃতা দেবেন।
সংবাদ সম্মেলনে কিম বলেন, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ ৬ শতাংশের বেশি হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে; এখন তা ৭ শতাংশে পৌঁছেছে। এই ধারা অব্যাহত রাখতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো খাতে আরও বেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা হবে বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তার অন্যতম ‘ফোকাস’।
মঙ্গলবার সকালে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়িত কয়েকটি প্রকল্প পরিদর্শনের জন্য বরিশাল যাবেন কিম। ফিরে এসে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে।
বিকালে বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিদায় নেবেন তিনি।